শরীরের ৯৬ শতাংশ উল্কি এঁকে যেভাবে হলেন ‘ভ্যাম্পায়ার ওম্যান’
ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষ বড়ই অদ্ভুত। অদ্ভুত তাদের শখ এবং চাওয়া পাওয়া। মানুষের চেয়েও বেশি অদ্ভুত প্রকৃতি। তাই কখনো প্রকৃতির খেয়ালে অথবা কখনো মানুষের অদ্ভুত শখের কারণে ব্যতিক্রমী সব ঘটনার জন্ম হয়। আর এ সমস্ত ঘটনা এতটাই ব্যতিক্রম যে দ্বিতীয় কোনো মানুষের পক্ষে সে ঘটনা দ্বিতীয়বার জন্ম দেয়া বা চেষ্টা করার সাহস হয় না। ফলে এগুলো রেকর্ড হয়ে অক্ষুণ্ণ থাকে বছরের পর বছর। ঠাঁই পায় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
তবে কখনো কি শুনেছেন? যে একজন মানুষ স্বেচ্ছায় হয়ে উঠতে চান রূপকথার ভ্যাম্পায়ার ওম্যান! শুধু ইচ্ছে রাখাই নয় বরং নিজের এই উদ্ভট স্বপ্ন সত্যি করতে তার শরীরের ৯৬ শতাংশ তিনি ট্যাটু এঁকেছেন। যাতে তাকে সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ারের মতোই দেখতে লাগে।
আসুন জানা যাক ভ্যাম্পায়ার ওম্যানের বিষয়ে। মারিয়া জোস ক্রিসটেরনা নামে একজন আইনজীবী, ব্যবসায়ী এবং উল্কি শিল্পী। তিনি তার সারা শরীরের ট্যাটু এঁকেছেন শুধু মাত্র ঘরোয়া উপায়ে। তিনি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে উল্কি নারী হিসেবে স্বীকৃত পান। তার শরীরের ৯৬ শতাংশ ট্যাটু বসিয়ে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তি হয়ে উঠছেন।
মারিয়া জোস ক্রিসটেরনার ১৯৭৬ সালে গুয়াদালাজারায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একটি ধর্মীয় পরিবারে বেড়ে ওঠেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার শরীরে উল্কি বসানো শুরু করে। তিনি মেক্সিকো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফৌজদারি আইনে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার প্রথম বিয়ের সময় তিনি ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, তাকে শক্তি, সাহস এবং ওখান থেকে মুক্তি পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আইনজীবী হিসেবে কাজ করা ছাড়াও, ক্রিস্টেরনা একজন ব্যবসায়ী নারী, তার নিজস্ব ট্যাটু স্টুডিও এবং একটি বুটিক রয়েছে। যেখানে তিনি মুজিরেস ভ্যাম্পিরো (ভ্যাম্পায়ার ওম্যান) নামে নিজের পোশাক লাইন বিক্রি করেন।
ক্রিসটেরনা বিশ্বের সর্বাধিক উল্কি আঁকা নারী হিসেবে স্বীকৃত। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে তার দেহের ৯৬ শতাংশ ট্যাটুতে আবৃত। বাকী ৪ শতাংশ তার হাতের তালুতে রয়েছে। তার ঠোঁটে এক ধরনের পিন বসিয়েছেন, মাথায় ছোট ছোট শিং গজিয়েছে, কানে একটি বড় রিং বসিছেন যাতে কান বড় দেখা যায়, ভ্রুতেও বসিয়েছেন ১০ টিরও বেশি রিং, দাঁতগুলো ভ্যাম্পায়ারের মতো বড় বড় বানিয়েছেন, এমনকি তার চোখের উপরেও লাগিয়েছেন উল্কি।
তিনি প্রায়ই উল্কি এবং দেহ সংশোধন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত হয়েছে, যেমন- ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে। জাদুঘরগুলোতে ক্রিস্টেরানার একটি মোমের মূর্তি তৈরি করেছে।
মারিয়া জোস ক্রিসটেরনা জানান, তার বাবা-মা ছোটবেলায় আলাদা হয়ে যায়। আর এই আলাদা হওয়ার কারণে তার জীবনে একটি কঠিন পরিবর্তন এসেছে। যার ফলে তিনি ট্যাটু জগতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ সবকিছুর শুরু হয়েছিল তার বাবা-মায়ের কারণে। এরপর তিনি একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। বিয়ে এক বছর যেতে না যেতে মারিয়া জোস ক্রিসটেরনারকে খুব মারধর করেন তার স্বামী।
এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। হঠাৎ তার গর্ভে সন্তান আসে। সন্তান জন্ম নেয়। এভাবেই পার হতে থাকে। দেখতে দেখতে তার চার সন্তান জন্ম নেয়। যত দিন যায় তত তার স্বামী আরো হিংস্র হয়ে ওঠে। তাকে মারধরের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। অবশেষে মারিয়া জোস ক্রিসটেরনা তার স্বামীকে ছেড়ে তার চার সন্তানের সঙ্গে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন তিনি বাচ্চাদের নিয়ে ভালো আছেন।
তিনি জানান, আমি কেবল আমার বাচ্চাদের সঙ্গেই বাঁচতে চাই। যদিও এখন আমাকে ভ্যাম্পায়ারের মতো দেখাচ্ছে তবুও আমি আমার বাচ্চাদের এগুলো করতে দেয় না। আমি তাদের শিষ্টাচার এবং সদয় মূল্যবোধ শেখায়।
Post a Comment