ভিক্ষা করেই কয়েক হাজার শিশুকে আশ্রয়, চিনে নিন নারীশক্তি পুরস্কার প্রাপ্ত 'অনাথ জননী' সিন্ধুতাই সপকলকে


Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশে ভারত। জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে শিশুরা। কিন্তু কঠিন বাস্তব এটাই যে এদেশের একটা বিরাট সংখ্যক শিশু কিন্তু অনাথ। এরা একদিকে যেমন বাবা- মায়ের ভালবাসা পায় না, তেমনই চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হয় এরা। সমাজের অংশ হয়েও যেন এরা সমাজের মূল স্রোত থেকে বহু দূরে রয়েছে এরা। সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন এইসমস্ত অনাথ শিশুদের আপন করে নিয়েছিলেন সিন্ধুতাই সপকল। 

Image Source-sindhutaisapakal.org

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় জন্মগ্রহণ করেন সিন্ধুতাই সপকল। তাঁর পরিবার মাঠে গরু চড়াত। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল 'চিন্দি', যার অর্থ ছেঁড়া কাপড়। ছোটবেলায় চেয়েছিলেন অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করবেন। তাঁর বাবাও তাঁকে লেখা পড়া করাতে চাইলেও বাধ সেধেছিল তাঁর মা। তাই কোনও রকমে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্তই পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন তিনি। তারপর মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে একজন ৩০ বছয় বয়সীর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। 

Image Source-sindhutaisapakal.org

এরপর সংসারের জাঁতাকলে পিষে ফেলা হয় তাঁকে। কিন্তু তাঁর মধ্যেকার জেদ, প্রতিবাদী সত্তা এবং অসহায়কে সাহায্য করার মানসিকতা ছিল প্রবল আর সেই কারণেই বিয়ের পরও তাঁর গ্রামের মহিলাদের ওপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু তাঁর এই প্রতিবাদই যে তাঁর জীবনকে নরক করে তুলবে তা হয়তো তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। গর্ভাবস্থায় তাঁর সম্পর্কে কিছু নোংরা কথাবার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে তাঁর স্বামীও তাঁকে ত্যাগ করেন। তাঁকে ফেলে রেখে আসে হয় গোয়ালঘরে। পাথর দিয়ে নিজেই নাড়ি কেটেছিলেন সিন্ধুতাই। অসহায় হয়ে যখন তাঁর বাপের বাড়ি গেলেন সেখানেও তাঁর মা তাঁকে থাকতে দিলেন না। অগত্যা কোনও উপায় না পেয়ে নিজের একরত্তি মেয়েকে কোলে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশন, কবরখানা, গোয়ালঘরেই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিলেন সিন্ধুতাই। 

এইভাবে নিজের ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে তিনি দেখলেন এমন অনেক অসহায় শিশুরা রয়েছেন, যাদের কোলে তুলে নেওয়ার কেউ নেই, যাদের মাথার ওপর নেই ছাদ, নেই আদর করে কাছে ডেকে নেওয়ার মতোই কেউ। এইভাবে একের পর এক অসহায় সন্তানদের কোলে তুলে নিয়ে প্রায় ১,৪০০ সন্তানের খাওয়া পড়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। মহারাষ্ট্রেই চারটি অনাথ আশ্রম গড়ে তোলেন তিনি। এইভাবেই  একজন পালিত পুত্র এবং তাঁর নিজের মেয়ের উদ্যোগেই এই আশ্রমগুলি পরিচালিত হয়। পথশিশুদের শুধু আশ্রয় প্রদান করাই নয়, তাঁদের ভবিষ্যতে নিজেদের জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তুলেছিলেন তিনি। 

Image Source- News18

একসময়ে রেলওয়ে স্টেশনে ভিক্ষে করে, গান গেয়ে নিজের এবং নিজের সন্তানের পেট চালিয়েছেন তিনি, এখন এই কাজ কাউকে করতে দেখলে তাকে সেখান থেকে তুলে এনে নিজের আশ্রমে ঠাঁই দেন তিনি। এইভাবেই অনাথ শিশুদের মাথার ওপর থেকেছেন সিন্ধুতাই। তিনি তাই 'অনাথ জননী' নামেও পরিচিত। নিজের এই কাজের বিরাট স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পেয়েছেন নারীশক্তি পুরস্কার, পেয়েছেন মাদার টেরেসা পুরস্কার-সহ আরও অসংখ্য সম্মান। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.