পূর্বপুরুষদের খুলি দিয়ে অদ্ভুত উৎসব

ODD বাংলা ডেস্ক: বৈচিত্র্যময় বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানান ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকেই স্ব স্ব জাতি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেই বিশ্বাসী। মৃতদের সৎকার ও সমাহিত করার ক্ষেত্রে আরো বেশি আজব ও রহস্যময় আচার অনুষ্ঠান পালন করে বলিভিয়ার লা পাজ’র আদিবাসী। এ অঞ্চলের আদিবাসীরা মৃত আত্মীয় বা অনাত্মীয়দের মাথা নিজ বাড়িতে রেখে সেগুলোকে উপাসনা, উৎসব ও প্রার্থনা করে। মৃতদের মাথার খুলিকে ‘নাতিতাস’ বলে তারা। খুলি নিয়ে পালিত উৎসবকে বলা হয় ‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’।

‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’ কেন্দ্র করে মৃত মানুষের মাথার খুলি উঠিয়ে থাকে বলিভিয়ার লা পাজে সমাধি খননকারীরা। এ অঞ্চলে খুলি তোলার দৃশ্য বছরের একটি সময়ের সাধারণ ঘটনা। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা মৃতদের মাথার খুলিতে অন্যান্য সাজসজ্জার সঙ্গে মুখে জ্বলন্ত সিগারেটও গুজে দেয়। উৎসবের অন্যান্য আয়োজন সম্পন্ন হলে সকলকে বিশেষ পোশাক প্রদান করেন পুরোহিতরা।

‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’ উৎসব সূত্র

কবে থেকে ‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’ উৎসব শুরু হয়েছিল কিংবা কীভাবে শুরু হয়েছিল তা এখনো অজানা। তবে ধারণা করা হয়, ইনকা শাসনেরও আগে থেকেই এর প্রচলন ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিবন্ধকতা থাকায় উৎসবটি পালনে খুব বেশি উৎসাহ না থাকলেও ১৯৭০ এর দশকে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বলিভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী আয়মারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা, ফসল উৎপাদন প্রভৃতির জন্য পূর্বপুরুষদের কাছে তারা প্রার্থনা করতো। আয়মারা শব্দের অর্থ আত্মা বা আত্মার শক্তি। তারাই এ অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। প্রতি বছর ৮ই নভেম্বর পালিত হয় বৃহত্তর এ বার্ষিক উৎসব।

‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’ উৎসব নিয়ে আয়মারা গোষ্ঠীর বিশ্বাস

আয়মারাদের বিশ্বাস মানুষ সাতটি আত্মার অধিকারী। মৃত্যু এবং কবর দেয়ার পরে এর মধ্যে ছয়টি স্বর্গে যাওয়ার কথা ভাবে আর সপ্তমটি মাথার খুলিতে আটকে থাকে। তাদের বিশ্বাস খুলির মধ্যে থাকা আত্মাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বাকি গুলোও খুশি হয় এবং আশীর্বাদ দেয়। পূর্বপুরুষরা তাদের বিভিন্ন ইঙ্গিত প্রদান করে বলেও তাদের বিশ্বাস রয়েছে। খুলির উৎসব বা ‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’ এ অংশগ্রহণকারীরা দাবি করেন, তাদের এ অনুষ্ঠানে অদ্ভুত কিছু অনুভূত হয়।

‘ফিয়েস্তা দে লাস নাতিতাস’ এর সময় হাজার হাজার মানুষ নিজেদের পারিবারিক সমাধিস্থল থেকে মাথার খুলি নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তারা এগুলো নিয়ে শহরের রাস্তায় নাচ গান করে প্রার্থনা করেন। এ আদিবাসীদের জীবনে ‘নাতিতাস’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘নাতিতাস’ বা খুলিগুলো খুবই যত্ন করে রাখা হয়। এগুলোর কাছেই নিজেদের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চায়। যেমন পড়াশুনার বিষয়ে, স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার জন্য, ভবিষ্যৎ কেমন হবে প্রভৃতি। 

তারা মনে করে, বাড়িতে নাতিতাস রাখা খুবই সুবিধাজনক। আমায়রা আদিবাসী লোকেদের বিশ্বাস মৃত ব্যক্তিরা জীবনের সব ইতিবাচক শক্তির উৎস। এ নাতিতাসের ভালবাসা, অর্থ, ব্যবসা ও নিরাপত্তা প্রভাবিত করার ক্ষমতা রয়েছে। তাদের বিশ্বাস, দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ সহজ করে দেয়ার ক্ষমতা মৃতদের মাথার খুলিতে রয়েছে। এজন্য কর্মস্থলেও এগুলো রাখার উদাহরণ আছে।

যেভাবে সাজানো হয় খুলি

খুলি নিয়ে উৎসবে আধ্যাত্মিক চর্চায় অংশগ্রহণ করেন অংশগ্রহণকারীরা। বর্তমানে মৃতদের মাথার খুলি সংগীত, মিষ্টি, অ্যালকোহল, কোকা, সিগারেটসহ বিভিন্ন সাজসজ্জায় সাজিয়ে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। আদিবাসী আয়মারা জনগোষ্ঠীর লোকেরা উৎসব শুরুর আগে সাধারণ কার্ড বোর্ডের বাক্সে সমাধিস্থল থেকে মৃতদের খুলি আনে। এরপর খুলিগুলো রঙিন ফুল, সানগ্লাস, টুপি এমনকি গহনার মতো আনুষঙ্গিক বস্তু দ্বারা সজ্জিত করে। তাদের বিশ্বাস খুলিগুলো দেখতে যত ভাল হবে, উৎসবে অংশগ্রহণকারীরাও তত বেশি আশীর্বাদ পাবে।

খুলির আত্মার সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট সমাচার

আয়মারাদের খুলির উৎসব শুধু ইতিবাচক নয়, এগুলো অসন্তুষ্ট হলে ক্রোধ ডেকে আনে বলে তাদের বিশ্বাস। অবজ্ঞাপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর অভিশাপ দেয়া হয়, যার ফলস্বরূপ আর্থিক ক্ষতি, পারিবারিক কলহ, মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। এ রকম ভয়াবহ পরিণতির কথা মাথায় রেখে তারা পূর্বপুরুষদের খুলি যতটা খুশি রাখতে পারে তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.