দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা হলেও শহরে শুধুই শ্বেতাঙ্গের বসবাস
ODD বাংলা ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকার ছোট্ট শহর ওরানিয়া। শহরটি দূর থেকে দেখতে আর দশটা ছোট শহরের মতো। তবে শহরটির ভেতরে ঢুকলে আলাদা পরিস্থিতিটায় চট করেই যে কারো চোখে আটকাবে। ওরানিয়া শহরটি কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ অথচ সেই দেশেরই শহরে নেই একজনও কৃষ্ণাঙ্গ।
আশ্চর্য হওয়ার মতো আরো দৃশ্য দেখা যায় সেখানে। দক্ষিণ আফ্রিকা এমন একটি দেশ যেখানে সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে শারীরিক শ্রমের কাজ করে কৃষ্ণাঙ্গরা। ওরানিয়ার দৃশ্য ঠিক উল্টো। সুপার মার্কেটের মেঝে মোছা থেকে শুরু করে খামারের কাজ পর্যন্ত সবই করছে শ্বেতাঙ্গরা। সপ্তদশ শতকে দক্ষিণ আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তোলা ডাচদের উত্তর পুরুষরাই হলেন আজকের ওরানিয়াবাসী। আফ্রিকানারস হিসেবে পরিচিত আলাদা ভাষাভাষী এই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর আলাদা শহরের পত্তনের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়।
১৯৯১ সালে বর্ণবৈষম্য তখন শেষের দিকে। আফ্রিকানারসরা তখন ওরেঞ্জ নদীর তীরে কারু এলাকায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি কিনে নিজেদের স্বায়ত্তশাসিত আবাস গড়ে নেয়। বর্ণবাদ-পরবর্তী সংবিধানে তাদের অধিকার সংরক্ষিত হয়। স্বায়ত্তশাসিত ওরানিয়া শুধু শ্বেতাঙ্গদের বাস মানে তারা বর্ণবাদী, এমনটা মানতে নারাজ বাসিন্দারা। তাদের দাবি, তারা বর্ণবাদের চর্চা করে না, তারা বরং ‘দায়িত্বশীল স্বাধীনতা’ বজায় রেখে চলেছে।
বর্ণবাদের চর্চা করা হয় না, তা সত্ত্বেও শহরে কেবল অন্য বর্ণের মানুষ নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে ৫২ বছর বয়সী ওরানিয়াবসী ওয়াইনান্ড বশফ জানান, অশ্বেতাঙ্গ কোনো ব্যক্তি এখানে থাকার জন্য কখনো আবেদনই করেনি। শহর পত্তনের সময়ের তুলনায় বর্তমানে গ্রামটিতে এখন ১০ গুণ বেশি মানুষের বাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর জনসংখ্যা ১৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এলাকার জনসংখ্যা আড়াই হাজারের কাছাকাছি এবং ২০২১ সালে অঞ্চলটির বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি এক-চতুর্থাংশ হারে বেড়েছে।
ওরানিয়ার মুখপাত্র জুস্ট স্ট্রিডোম বলেন, এখানে আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করি। বাগান করা থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি পরিষ্কার, বাথরুম বানানো সব কিছু আমরা নিজেরা করি। তিনি আরো বলেন, ওরানিয়াই একমাত্র জায়গা যেখানে সস্তা কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমনীতি এড়িয়ে চলা হয়। এক পৌর শাসন বিশেষজ্ঞ সানডিল স্বনা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওরানিয়ার মতো এমন এলাকা আরো আছে। তবে অন্যগুলো থেকে ওরানিয়ার তফাত হলো- এরা নিজেদের জাতিগত পটভূমি ও সংস্কৃতি এখনো টিকিয়ে রেখেছে।
Post a Comment