শিশুদের মতো বন্ধুত্ব গড়তে এই টিপসগুলো জেনে নিন
ODD বাংলা ডেস্ক: শিশুদের মধ্যে নতুন বন্ধু তৈরির একটা প্রাকৃতিক দক্ষতা থাকে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা এই দক্ষতা হারিয়ে ফেলে। কারণ আপনি চাইলেই কাউকে বলতে পারেন না যে, ‘তুমি আমার বন্ধু হবে?’। বিষয়টা এতোটা সহজ না বলেই হয়তো বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের বন্ধুত্বহীনতার সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ১০টি টিপসের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন কিভাবে আপনিও সহজে বন্ধু বানাতে পারেন। বিবিসি অবলম্বণে জানিয়ে দিচ্ছি এই টিপস।
ক্লাব বা সংগঠনে যোগ দিন: কোন একটি দল, সংগঠন, বা পছন্দের কোন বিষয়ের ওপর ক্লাস-ভিত্তিক কোর্সে যোগদানের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন আপনার প্রিয় বন্ধুকে।একসঙ্গে থাকার কারণে আপনার সহকর্মী বা সহপাঠীরা জানতে পারবেন আপনার কিসের প্রতি উৎসাহ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক: স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা মানে, মানুষের প্রতি আপনার মমত্ববোধ আছে। এখন এই সেবা আপনার স্থানীয় কমিউনিটির প্রতি হোক বা আরও বড় পরিসরে সেটা বিষয় না। বিষয় হল, এই কাজের মাধ্যমে আপনার নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। এবং এই মানুষগুলো তারাই হবে যাদের মন উদার। এবং একজন বন্ধুর ভেতরে এই গুনটাই সবচেয়ে বেশি থাকা চাই। বন্ধুত্ব যেকোন স্থানে, যেকোন সময়ে, যে কারও সঙ্গেই হতে পারে, তাই কোন সুযোগ হাতছাড়া হতে দেবেন না।
যোগাযোগ তৈরি করুন: কোন বিয়ের পার্টিতে বা জিমে অথবা খেলতে গিয়ে যদি নতুন কারও সঙ্গে আপনার পরিচয় হয় যার সঙ্গে কিনা আপনি মিল পাচ্ছেন তাহলে তার ফোন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানাটি চেয়ে নিন। কারণ তার সঙ্গে আপনার আবার দেখা হবে কিনা সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। এজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগের একটা মাধ্যম বের করা জরুরি। আপনি তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরের দিন একটি লাইন লিখে জানান যে তার সঙ্গে সময় কাটানোটা আপনি কতো উপভোগ করেছেন। এরপর তাকে কোথাও খেতে যাওয়ার জন্য অথবা কোথাও ঘুরতে বা হাটতে যাওয়ার জন্য ডাকতে পারেন। নিজ থেকে এই একটা পদক্ষেপের কারণেই হয়তো আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে।
হ্যাঁ বলতে শিখুন: যদি নতুন পরিচিত কেউ আপনাকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান বা আপনাকে থিয়েটার টিকিট অফার করে তাহলে হ্যাঁ বলুন। এতে আপনি সাময়িক স্নায়ুচাপের মুখে পড়তে পারেন। মনে হতে পারে যে আপনি আপনার গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন, সাহস না রাখলে, কিছুই অর্জন করা যায়না। যদি আপনি সত্যিকার অর্থে সেই সাহস যোগাতে না পারেন, অথবা সে আপনাকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে সেটা আপনার ঠিক পছন্দ না, তাহলে আপনি তাকে ভদ্রভাবে না বলুন।- তবে সেই না বলার মধ্যে এটাও পরিষ্কারভাবে বলুন যে ভবিষ্যতে সে যদি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে আপনি সেটা সাদরে গ্রহণ করবেন।
প্রত্যাখ্যানের ভয় কাটিয়ে উঠুন: সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিটি প্রচেষ্টা যে কাজে লাগবে, এমন কোন কথা নেই। - কিন্তু আপনি যদি প্রতিনিয়ত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না। সাহসী হন এবং নিজের প্রতি আস্থার জায়গাটা একটু মজবুত করুন। আপনি যদি নতুন কারও সঙ্গে পরিচয়ের পর তার সঙ্গে আবারও দেখা করার প্রস্তাব দেন এবং তাদের উত্তর যদি "না" সূচক হয়, তাহলে ভেঙ্গে পড়বেন না। কেননা এটাই পৃথিবীর শেষ নয়।সম্ভবত সেই ব্যক্তি আপনার জন্য ছিল না। আপনার বন্ধু হওয়ার জন্য হয়তো আরও ভাল কোন মানুষ অপেক্ষা করছে।
সহকর্মীদের বন্ধু বানান: বর্তমান ব্যস্ত সমাজে পরিবারের চাইতে আমাদের বেশি সময় কাটানো হয় কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে। তাই এই সহকর্মীদের বন্ধু বানানোর চেষ্টা করা যৌক্তিক। এটা ঠিক যে অফিসের অনেক কথায় আপনি হয়তো কষ্ট পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত কোন সহকর্মীর কাছে নিজেকে একটু প্রকাশ করতে পারেন। হয়তো সেও আপনাকে এর প্রতিদানে হয়তো ভাল কিছু দেবে। কাজের পর কোথাও খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা-গুলোয় যোগ দিন। - এমনকি আপনি ক্লান্ত হলেও হ্যাঁ বলুন।অথবা লাঞ্চ বিরতিতে আপনি কলিগদের কাউকে নিয়ে স্থানীয় স্যান্ডউইচ দোকানে যেতে পারেন। অফিস ডেস্কের থেকে দূরে কোথাও গেলে সহকর্মীর সঙ্গে কাজের বাইরে আরও নানা বিষয়ে কথা বলা সহজ হবে। এতে সহকর্মীদের, প্রকৃত বন্ধুতায় বদলে ফেলাও হয়ে যাবে অনেক সহজ। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে একজন ভাল বক্তা হওয়ার পাশাপাশি ভাল শ্রোতা হওয়াটাও জরুরি।
কৌতূহলী হন: আপনি যদি লাজুক স্বভাবের হন বা কিছু বলতে গিয়ে আটকে যান, তাহলে সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠার সহজ উপায় হল অপর পাশের মানুষের বিষয়ে জানতে চাওয়া। কেননা অধিকাংশ মানুষই নিজের বিষয়ে কথা বলাটা উপভোগ করে। আপনি যদি ভাল শ্রোতা হন এবং ভবিষ্যতে তার সেই বিষয়গুলো টেনে আনেন।তাহলে বুঝে নিন যে আপনি খুব দ্রুত বন্ধু পেতে যাচ্ছেন। ভাল বন্ধুরা আপনার ভাল বা খারাপ দুই সময়েই আপনার পাশে থাকবে।
প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসুন: জন্ম তারিখ মনে রাখা বা তার প্রয়োজনীয় কোন কিছু কিনে দেয়ার মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো মনে রাখা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। একইসঙ্গে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া যায় খারাপ সময়গুলোতে। যদি আপনার পছন্দের মানুষটি কঠিন সময় মধ্যে দিয়ে যান তাহলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসুন। সে অসুস্থ থাকলে তার প্রিয় কোন খাবার নিজ হাতে তৈরি করে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অথবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন - এই ছোট্ট বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি বোঝাতে পারবেন, আপনি বন্ধু হিসেবে কতোটা দারুণ। আপনি হয়তো অজান্তেই ভুল কোন সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন।
খোলা মনের মানুষ হন: একজন নতুন বন্ধুর প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যে সতেরো বছরের হতে পারে আবার সত্তরও হতে পারে, তার বেড়াল পছন্দ হতে পারে আবার শুধু কুকুর পছন্দ হতে পারে। তার পছন্দের গান হতে পারে মেটাল বা ক্লাসিক্যাল।
মনে রাখবেন যে, ভিন্ন ব্যক্তিত্ব আমাদের আকর্ষণ করে বেশি। তাই প্রথম দেখাতেই কাউকে বিচার করা ঠিক হবেনা - প্রত্যেকেই একটা সুযোগ দিন। সেইসব মানুষদের কথা ভাবুন যাদের আপনি প্রথম দেখায় ভীষণ বিরক্তিকর ভেবেছিলেন, অথচ যারা এখন কিনা আপনার ভীষণ প্রিয়।
পর্যাপ্ত সময় দিন: রাতারাতি কারো বন্ধু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে। বন্ধুত্বকে লালন করতে হয়। এজন্য নতুন কারও সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, সেটাকে বাড়িয় তুলতে এর পেছনে আপনার সময় আর যত্ন বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা বিশ্বাস ও ভরসার ভিত্তি সময়ের সাথে সাথে মজবুত হয়ে ওঠে। নতুন বন্ধু তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আপনি তাকে যা দিতে পারবেন, সেটার প্রতি বিশ্বাস রাখা। ইতিবাচক ভাবে ভাবার চেষ্টা করুন।
সব শেষে বলবো যে, নিজের প্রতিও যত্ন নিন।
Post a Comment