ধর্ষকের মগজের সঙ্গে কুকুরের লালা ঝরার সম্পর্ক কোথায়?

ODD বাংলা ডেস্ক: ধর্ষণের মতো ঘটনাও কি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব? ধর্ষণ কি কেবলই দৈহিক আকাঙ্ক্ষা নাকি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সহিংসতা? 

এই বিষয়টি বুঝার জন্য আমাদের পাড়ি দিতে হবে ১৩৮ বছর অতীতে। ১৮৯০ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী পাভলভ তার ল্যাবে কয়েকটি কুকুর নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। 

নিজে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কুকুরগুলোকে খাবার খেতে দিতেন। খাবারগুলো খাওয়ার সময় কুকুরের জিভ থেকে কি পরিমান লালা ঝরত তা তিনি পরিমাপ করে রাখতেন। 

খাবার গ্রহণের সময় লালা ঝরা কুকুরের দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে পাভলভ খেয়াল করলেন শুধু খাবার গ্রহণ নয়, খাবারের ছবি দেখলেও লালা ঝরছে কুকুরের। 

তার কিছুদিন পর পাভলভ আবার দেখলেন, খাবার ছাড়া ল্যাবে ঢুকলেও তার পায়ের আওয়াজ এই লালা ঝরছে কুকুরগুলোর। এ ঘটনার পর পাভলভ তার পরীক্ষায় নিয়ে এলেন আর একটু ভিন্নতা। 

কুকুরগুলোকে খাবার দেয়ার মুহূর্তে তিনি একটি ঘণ্টা বাজাতে শুরু করলেন। এবার যথার্থ বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে এলেন ইভান পাভলভ। 

খাবারের ছবি, খাবার দেয়া ব্যক্তি কিংবা ঘন্টার শব্দ এগুলো হলো নিউট্রাল স্টিমুলেশন। যার সঙ্গে আদতে কুকুরের লালা ঝরার কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো ঘটনায় কুকুরের মস্তিষ্কে হুবহু একই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

পাভলভ মস্তিষ্কের এ প্রতিক্রিয়ার নাম দেন কন্ডিশন রিফ্লেক্স। অর্থাৎ সারা দেয়া উচিত নয় এমন ঘটনাতেও আপনার মস্তিষ্ক সারা দিচ্ছে। 

ছেলে বা মেয়ে শিশু বোরকাবৃত্ত কিংবা বৃদ্ধা স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে না। কিন্তু তারপরও তাদের দেখে একজন ধর্ষকের মস্তিষ্কের তীব্র উদ্দীপনা সৃষ্টি হচ্ছে, কারণ কি জানেন? 

অসুস্থ বিজ্ঞাপন ও সাহিত্যের মাধ্যমে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিনোদনের চর্চা চলে আসছে সে প্রাচীনকাল থেকেই। ফলে ধর্ষকের মস্তিষ্ক নিজের অজান্তেই একজন নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে সংরক্ষণ করে রেখেছে। 

তাই বলে ধর্ষণের কাম্যতাকে দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া মনে করা চলবে না। কারণ মস্তিষ্ক ঘটিত সব ঘটনায় স্বাভাবিক নয় এবং অনৈতিক যৌন উদ্দীপনাগুলো চাইলে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা সম্ভব। 

ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হলো ধর্ষকের ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা করা। কারণ শাস্তির ভয়াবহতা ভবিষ্যৎ ধর্ষকের মস্তিষ্কের যৌন প্রতিক্রিয়া বিপরীত প্রভাব ফেলবে। যার ফলে মানসিক ভাবে কমে যাবে ধর্ষণের প্রবণতা। 

এছাড়া সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে অসুস্থ বিজ্ঞাপন ও অসুস্থ সাহিত্য। রাস্তাঘাটে নিশ্চিত করতে হবে নারী-পুরুষ উভয় নিরাপত্তা। কারণ একটি দেশ তখনই উন্নত হবে যখন তার নাগরিক থাকবেন নিরাপদে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.