কেমোথেরাপি নিলে চুল পড়ে কেন? জেনে নিন আদ্যোপান্ত

ODD বাংলা ডেস্ক: যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগের কথা। মিশরীয় নারীদের এক ধরনের ব্যাধির কোনো চিকিৎসাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বৈদ্য কবিরাজের পালা শেষ করে সমাধান বেরোলো একটাই। 

যেখানে সমস্যা, সমূলে উপড়ে ফেলা হবে সেই অঙ্গ! রোগটি বর্তমান বিশ্বে খুব পরিচিত হলেও সে সময় এর কোনো নাম ছিল না। সেটি ছিল স্তন ক্যান্সার। ক্যান্সার শব্দের উৎপত্তি একটি গ্রিক শব্দ থেকে। যার অর্থ ক্র্যাব বা কাঁকড়া! 

মূলত কাঁকড়ার মতো দ্রুত বংশবিস্তারের কারণেই এই নামকরণ। নামটি গ্রিক হলেও ক্যান্সার মূলত প্রথম আবিষ্কার হয় প্রাচীন মিশরে। তৎকালীন সময়ে ক্যান্সারের একমাত্র সমাধান ছিল অঙ্গবিচ্যুতি। নিশ্চয় জানেন, মিশরীয় সভ্যতা কতটা সমৃদ্ধ ছিল। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সৌন্দর্যচর্চা কিংবা মমির কথাই ধরুন না। পিরামিডের কথা ভাবলেই বোঝা যায় তারা সমসাময়িক সময় থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিল।

সেই সময়কার অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারিত পদ্ধতি এখনো ব্যবহার  করা হয়। তখনকার সময়ও মানুষ ডায়াবেটিস এবং হার্টের অসুখে ভুগতেন। বেশ কিছু বছর আগে এক রাজকন্যার মমি পাওয়া গিয়েছিল। গবেষকদের গবেষণার পর জানা যায়, এই রাজকন্যা মারা যাওয়ার আগে ডায়াবেটিসে ভুগেছেন। মারা গেছেন কিডনি ড্যামেজ হওয়ার কারণে। আরেকবার দুইটি মমি পাওয়া যায়। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা চিৎকার করতে করতেই বুঝি মারা গেছেন। পরে জানা যায়, তারা মারা গিয়েছিলেন হার্ট অ্যাটাকে। এই দুই মমি ছিল একজন নারী এবং একজন পুরুষের। সেসময় অনেক নারী ভুগেছেন স্তন ক্যান্সারে। 

এখনকার মতোই স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার শেষ ধাপ ছিল শরীর থেকে এই অঙ্গটি বাদ দিয়ে দেয়া। তবে বর্তমানে ক্যান্সারের নাম শুনলে খুব একটা ঘাবড়ান না কেউ। কেননা এর অনেক চিকিৎসাই এখন বের করতে সক্ষম হয়েছে চিকিৎসকরা। তবে ক্যান্সারের নাম শুনলেই প্রথমেই মাথায় আসে একটাই ট্রিটমেন্ট। আর তা হচ্ছে কেমোথেরাপি। 

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের দেহে স্বাভাবিক কোষ বিভাজন চলতে থাকে। ক্যান্সারের বেলায় তেমনি দেহের কিছু কিছু কোষ বাড়তে শুরু করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। এভাবেই বাড়তে বাড়তে এক সময় গড়ে উঠে টিউমার কোষ। তবে যেসব অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনে দেহে টিউমার কোষ গঠিত হয় না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ক্যান্সারের কোষের অবস্থান চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। আর তখনই সারা দেহে প্রয়োগ করা হয় কেমোথেরাপি। 

এ থেরাপিতে দেহে প্রবেশ করানো হয় কিছু সাইটো-টক্সিক গ্রুপের কেমিকেল। যা দ্রুত বাড়তে থাকা যেকোনো কোষের জন্যই বিষাক্ত। ফলে যেসব স্থানে ক্যান্সারের কোষ শনাক্ত করা যায় না। সেই জায়গাগুলোতেও আক্রমণ করে। সাইটো-টক্সিক কেমিকেল বীরত্বের সঙ্গে এই সব গোপনে থাকা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে।  

আচ্ছা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন কি? কেমোথেরাপি কিন্তু শুধুমাত্র দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া কোষের প্রতিই সংবেদনশীল। ফলে এই কেমিকেল সুস্থ আর অসুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। এতে করে যেসব স্বাভাবিক অঙ্গের কোষ অন্য কোষের তুলনায় দ্রুত বিভাজন হয়, যেমন ধরুন- চুলের গ্রন্থিকোষ কিংবা পরিপাকতন্ত্রের বাইরের আবরণ ইত্যাদি। এগুলোও ক্যান্সারের কোষের সঙ্গে সঙ্গে সাইটো-টক্সিক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এছাড়াও কেমোথেরাপির ফলে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে কিডনি ও যকৃতও। সেই সঙ্গে আরো দুর্বল হয়ে পড়ে মাংসপেশি, ক্ষতিগ্রস্থ হয় রক্তকোষ। এমনকি ডিম্বাণু ও শুক্রাণু জমে গিয়ে নষ্ট হতে পারে প্রজনন ক্ষমতা! 

আর এজন্যই কিন্তু কেমোথেরাপি দেয়ার পর রোগীর চুল পড়া এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়। অনেকের কিডনির সমস্যাও হতে দেখা যায়। তবে এতো এতো সমস্যার পরও কেমোথেরাপি কিন্তু আমাদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। কেননা এটি পুরোপুরি ক্যান্সার নির্মূল করতে না পারলেও কিছুটা এগিয়ে দিতে পারে স্বাভাবিক জীবনের দিকে। অনেকটাই সুস্থ হতে পারেন ক্যান্সার রোগীরা। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.