১৮ লাখ বছর আগের খুলি রহস্য

 


ODD বাংলা ডেস্ক: এতদিন ধরে মানব বিবতর্নের পথে যে সব আলাদা আলাদা প্রজাতিকে মানুষের পূর্বপুরুষ বলে ধরে নেয়া হত, লর্ডকিজলৎজেদের এই আবিষ্কার সত্যি বলে মেনে নিলে সেই সব ধারণাকে নস্যাৎ করে দিতে হবে। মেনে নিতে হবে একাধিক নয়, একটাই উৎস আমাদের পূর্বপুরুষের।

মাটির অনেক নীচে ঘুমিয়ে ছিল অন্তত ১৮ লক্ষ বছর ধরে। ২০০৫ সালে সেই ঘুমন্ত খুলিকে খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষকেরা। স্থান রাশিয়ার প্রতিবেশি দেশ জর্জিয়ার দিমানিসি এলাকা। গবেষকদের মতে খুলিটা কোনো প্রাগৈতিহাসিক মানুষের। এতদিন ধরে তাকে নিয়ে চলছিল গবেষণা। গবেষণায় উঠে এসেছে মানব বিবর্তনের সম্ভাব্য দিক।


এর আগে ঐ দিমানিসি থেকেই আরো চারটে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের খুলি পাওয়া গিয়েছিল। প্রতিটিই বেশ ভালো অবস্থায় ছিল। পরীক্ষা করতে গিয়ে গবেষকেরা দেখেন, প্রতিটি খুলি একে অপরের থেকে কিছুটা আলাদা। বিশেষ করে তাদের দাতের গঠন। তাই প্রথমে খুলির গঠন দেখে তাদের হোমো এরগ্যাস্টার, হোমো হ্যাবিলিস, হোমো রুডোলফেনসিস প্রভৃতি আলাদা আলাদা প্রজাতিতে ভাগ করেন। কিন্তু পঞ্চম খুলি (যার নামকরণ করা হয়েছে খুলি-৫ নামে) দেখে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ হয়। তাদের মনে হয়, এই খুলিগুলো কোনো আলাদা আলাদা প্রজাতির নয়, বরং একটাই প্রজাতির বিভিন্ন রূপ।


খুলি-৫, একটা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। পাঁচ ফুটের মতো উচ্চতা। বিশাল বড় চোয়াল আর দাঁত। তবে মস্তিষ্ক খুব ছোট্ট। সবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শিখেছে। গবেষকদের ধারণায়, হিংস্র কোনো পশুর আক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে এর। পাশে মিলেছে পাথরের তৈরি কয়েকটি অস্ত্রও।

তিবিলিসি-র ন্যাশনাল মিউজিয়ামের গবেষক লর্ডকিজলৎজের কথায়, ‘এখন বিভিন্ন মানুষকে তাদের মুখের গঠন, বৈশিষ্ট্য দেখে আলাদা করা হলেও তারা আদতে মানুষই। হোমো স্যাপিয়েন্স। ঠিক তেমনই হয়তো ওই খুলিগুলোর গড়ন আলাদা আলাদা হলেও তাদের মালিক আদি মানুষেরা মনে করা হচ্ছে একই প্রজাতির। কিন্তু এদের যদি আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে আবিষ্কার করা হত, তা হলে হয়তো এদের আলাদা প্রজাতি বলেই ধরে নেয়া হত।’


লর্ডকিজলৎজেদের এই গবেষণা বিজ্ঞান পত্রিকা সায়েন্স-এ প্রকাশিত হয়েছিল। আর এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। 


জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক ফ্রেড স্পুর অবশ্য লর্ডকিজলৎজেদের এই মত মানতে রাজি নন। তার মতে একটা উদাহরণ দেখে এ ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। আমেরিকার ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃতত্ত্ব বিভাগের কিউরেটর ইয়ান টাটারসলেরও মতে, ‘শুধু একটা জায়গার নিদর্শন দেখে এভাবে কোনো ধারণা করা উচিত নয়। যদি একই রকমের খুলি আফ্রিকা, জাভা, ইন্দোনেশিয়া, অর্থাৎ যে পথে আদি মানব আফ্রিকা থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সব জায়গাতেও পাওয়া যেত, তখন নতুন করে এ নিয়ে ভাবা যেত।’


তবে মানব বিবর্তনের গবেষণায় এই খুলি-৫ যে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন তা মেনে নিয়েছেন ইয়ান আর স্পুর দুই জনেই। তাহলে, মানব বিবর্তনের ইতিহাস ঠিক কী?


জুরিখের অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্রিস্টোফার জলিকোফের বলেন, ‘আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স হোমো ইরেকটাস-এর বংশধর। কিন্তু হোমো ইরেকটাস-এর পর ঠিক কোন প্রজাতি এসেছে, বা এই খুলি-৫ কোন প্রজাতির তা জানা যায়নি।’


মাটির তলায় আর কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সেটাই দেখার। আর সেই রহস্যই হয়তো ভেদ করবে মানব বিবর্তনের সঠিক ইতিহাস।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.