মৃতের আত্মাকে পরলোকে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা, এ এক আজব পরকাল ভাবনা !

ODD বাংলা ডেস্ক: মৃত্যু পরের জীবন নিয়ে রহস্য শত শত বছর ধরে। বিষয়টি নিয়ে জাতি-ধর্ম ভেদে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস। তেমনি মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে মজবুত বিশ্বাস ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের।

প্রাচীন মিশরীয় পরকালতত্ত্ব কেন্দ্রীভূত হয়েছিল মিশরীয় সংস্কৃতির বিবিধ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা প্রভাবিত বিভিন্ন ধরনের জটিল আচার-অনুষ্ঠানকে ঘিরে। এই ক্ষেত্রে ধর্ম ছিল একটি প্রধান উপাদান। কারণ, ধর্ম ছিল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রথা যা সব মিশরবাসীকে একসূত্রে বেধে রেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অনেক মিশরীয় দেবতার উপরই মৃতের আত্মাকে পরলোকে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা আরোপ করা হয়েছিল। 

১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা, একটি প্রত্নতত্ত্ববিদ দল ৩০ দিন চেষ্টার পর মাটির নিচে একটি সিক্রেট টানেল বা সুরঙ্গ আবিষ্কার করলেন। সেখানে পাওয়া গেলো দুইটি সিল করা সমাধি। তিন হাজার বছর ধরে যেই সমাধিটি ছিল লোকচক্ষুর সম্পূর্ণ আড়ালে। সেখানে কোনো ফারাওয়ের লাশ ছিল না। ছিল সাধারণ এক মিশরীয় ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর মমি। 'ফারাও' বলা হতো মিশরীয় রাজাদের।

সেই সুরঙ্গে ছিল আলাদা আলাদা কক্ষ। আসবাব, ব্যবহার্য জিনিস দেখে বোঝাই যায় তা ফারাওদের ছিল না। ছিল সাধারণ মিশরীয়দের একটুকরো জীবন-চিত্র। অনেকদিক থেকেই আমাদের জীবনের সঙ্গে মিল ছিল এই প্রাচীন মিশরীয়দের। তবে পরকাল নিয়ে তাদের বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ আলাদা এবং রহস্যে মোড়া। সেখানে পাওয়া অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি ১৪ মিটারের লম্বা কাগজ থেকে বেড়িয়ে আসে সে তথ্য। 

প্রাচীন মিশরীয়দের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ভবনগুলো কোনো সাধারণ জায়গা ছিল না। তাদের কাছে এই ভবনগুলো ছিল এক জীবন থেকে আরেক জীবনে যাওয়ার পথ। বিভিন্ন রিচুয়ালের মাধ্যমে তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হতো। একটি যাদুর বই ছিল যার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে পরের জীবনে যাওয়ার রাস্তা সহজ হতো। 

এমনকি যদি সে পথে কোনো শয়তানি শক্তি বাধা দেয় তাদের রুখতেও ছিল যাদুর ব্যবহার। সেই যাদুর বইয়ে লেখা থাকতো মৃত্যুর পরের জীবন কেমন হবে তাও। সেখানে আঁকা কিছু কারুকাজের মধ্যে দেখা যায় তারা কিছু দেবতার পূজাও করতেন একটি সুন্দর পরকাল পাওয়ার জন্য।

মৃত্যু ছিল মিশরীয়দের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে একটি ভালো মৃত্যুই পারে একটি সুন্দর পরকাল উপহার দিতে। মৃত্যুর জন্য মিশরীয়রা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতো। এমনকি তারা তাদের সন্তানকেও তাদের সম্পদের উত্তরাধিকার দিতেন না। 

সমাধির পাশে রেখে দিতেন পরের জীবনে কাজে লাগানোর জন্য। এমনকি মিশরীয় নারীদের মূল্যবান গহনার বাক্সও রেখে দেয়া হতো সমাধির পাশে। একবার ভাবুন এতো বিশাল বিশাল পিরামিড, সোনায় মোড়ানো সমাধি, কিংবা এত রিচুয়াল কেন ছিল! 

শুধুই মৃত্যুর জন্য? না একটি সুন্দর পরকালের জন্য। এমনকি মৃতদেহকে অসাধারণভাবে মমি বানিয়ে রাখা, ব্রেনকে দারুণভাবে সংরক্ষণ করাও তাদের পরকালের যাত্রার অংশ ছিল। মৃত্যুর আগে স্বামী বা স্ত্রী দুজনেই একটি মন্ত্র লিখে যেতেন যাতে মৃত্যুর পরে তারা যোগাযোগ করতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.