বুলেটের গতিতে আঘাত হানে এই জীব

ODD বাংলা ডেস্ক: একবার ভেবে দেখুন তো একটি ছোট জীবের আঘাত প্রায় বুলেটের গতির সমান। অবাক করা বিষয় হলো এটা সত্যি যে এক ধরনের চিংড়ি আছে যারা বুলেট এর গতিতে আঘাত হানতে পারে।

পিকক ম্যান্টিস শ্রিম্প, যাকে বাংলায় বলা হয় ময়ূরী চিংড়ি বাহার। এর নাম চিংড়ি হলেও এটি মূলত চিংড়ি নয়। এদের বাসস্থান প্যাসিফিক এবং ভারতীয় মহাসাগরে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের ৪০ কোটি বছরের আগের ফসিল পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, এরা ডাইনোসরের চেয়েও পুরনো।

পিকক ম্যান্টিসের চোখের বর্ণ নীল। এরা দুটো চোখই স্বতন্ত্রভাবে নাড়াতে পারে যা ট্রাইনোকুলার ভিশনে সক্ষম। এদের মৌমাছির মতোই পুঞ্জাক্ষি রয়েছে যা প্রায় ১০ হাজার ছোট ছোট ফটোরিসেপ্টিভ একক নিয়ে গঠিত। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এদের চোখের কালার রিসেপ্টরের সংখ্যা ১২ থেকে ১৬।

যেখানে মানুষের কালার রিসেপ্টরের সংখ্যা মাত্র তিনটি। ফলে এরা আমাদের চেয়েও অনেক বেশি রঙিন পৃথিবী দেখতে পারে। বিজ্ঞানীরা এদের চোখের প্রতিক্রিয়াকে স্যাটেলাইটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর চোখের কার্যক্রম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হচ্ছে ক্যামেরার সেন্সর। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এদের চোখের সাহায্যে ক্যান্সার কোষও শনাক্ত করা সম্ভব।

পিকক ম্যান্টিস শ্রিম্প এর খাদ্যতালিকায় রয়েছে কাকড়া, শামুক, ঝিনুক, চিংড়ি, স্কুইড, ছোট মাছ ইত্যাদি। ম্যান্টিস শ্রিম্পের আঘাত .২২ মিলিমিটার ক্যালিবার বুলেটের সমপর্যায়ের যার গতি প্রায় ২৩ মিটার পার সেকেন্ড। যা ঘন্টায় ৮২ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এর সম্পূর্ণটাই হয়ে থাকে প্রাকৃতিকভাবে এর বাহুতে অবস্থানরত স্প্রিং এর সহায়তায়। যা র‍্যাপ্টোরিয়াল উপাঙ্গ হিসেবে জোড়ায় অবস্থান করে।

শিকারের খোলসকে আঘাত করার সময় বাহুর সঙ্গে থাকা বিশেষায়িত ক্লাবগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রচন্ড গতিবেগে আঘাত করার ফলে আঘাতের স্থানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সঙ্গে শব্দের সৃষ্টি হয়। উক্ত স্থানে তাপমাত্রা চার হাজার ৪০০ কেলভিনের উপরে অতিক্রম করে থাকে। যা প্রায় সূর্যের তাপমাত্রার কাছাকাছি।

এতে করে পানিতে বুদবুদ দৃশ্যমান হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে, মানুষ যদি সমপরিমান বেগে আঘাত করতে পারতো, তবে এই শক্তি দিয়ে অনায়াসে স্টিল ভেদ করা যেত।

পিকক ম্যান্টিস শ্রিম্প সঙ্গীর জন্য 'ইউ' আকৃতির গর্ত তৈরি করে আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে বের হয়। এদের বংশবৃদ্ধি 'ইন্টারনাল ফার্টিলাইজেশন' এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ম্যান্টিস শ্রিম্প, ডিমগুলো সুরক্ষার সঙ্গে সম্মুখ উপাঙ্গে বহন করে বেড়ায় যতক্ষণ না ডিম ফোটে। এদের কিছু প্রজাতি আবার মনোগ্যামাস। এক সঙ্গীর সঙ্গে ২০ বছর পর্যন্ত একই গর্তে কাটিয়ে দেয়।

পিকক ম্যান্টিস শ্রিম্পকে সাধারণ কাঁচের অ্যাকুরিয়ামে সংগ্রহ করা হয় না। কেননা এরা সহজেই কাঁচ ভেঙে ফেলতে পারে। এর জন্য বিশেষ অ্যাক্রেলিক ট্যাংক প্রয়োজন। এই চিংড়িবাহার কম আলো পছন্দ করে। বাসস্থান হিসেবে পাথর ও বালির প্রয়োজন। যাতে গর্ত করে বাসা বানিয়ে থাকতে পারে। আকারভেদে পিকক ম্যান্টিস শ্রিম্পের দাম ১৩০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এশিয়ান সংস্কৃতিতে ম্যান্টিস শ্রিম্প খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বিশেষত, জাপান,ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, হাওয়াই দেশগুলোর খাদ্যভাসে এর প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.