আত্মার শেষযাত্রায় সঙ্গ দেয় শুধু এই ৫! জানুন মৃত্যুর পরের অবস্থা



ODD বাংলা ডেস্ক:  আমাদের সবার মনেই কৌতুহল রয়েছে। মৃত্যুর পর আমাদের শেষযাত্রা ঠিক কেমন হয়, তা আমরা সবাই জানতে চাই। নিজের এতদিনের চেনা শরীরটাকে মৃত অবস্থায় দেখে তখন আত্মা কী অনুভব করে? গরুঢ় পুরাণে এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। শাস্ত্র অনুসারে আগেকার দিনে মুনি ঋষিরা তাঁদের ধ্যান-যোগের মাধ্যমে মৃত্যুর পরের অবস্থা অনুভব করতে পারতেন। নিজেদের সেই অভিজ্ঞতার কথাই তাঁরা বলে গিয়েছেন।



বলা হয়ে থাকে যে আমরা শূন্য হাতে এই পৃথিবীতে আসি এবং শূন্য হাতেই ফিরে যাই। মৃত্যুর পর এই দুনিয়ায় অর্জিত কোনও কিছুই আমাদের সঙ্গে থাকে না। জীবদ্দশায় হাজার ভোগবিলাসে ডুবে থাকলেও মৃত্যুর পর একা রিক্ত অবস্থায় শেষযাত্রায় পাড়ি দিতে হয়। তবে এই কথাটা পুরোটা সত্যি নয়। অন্য কোনও কিছু সঙ্গে না থাকলেও জীবদ্দশায় অর্জিত ৫টি জিনিস অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যায়। এমনকি পরের জন্মেও এই পাঁচের প্রভাব আমাদের উপর এসে পড়ে। শাস্ত্রে এমনটাই বর্ণিত আছে। জেনে নিন কোন পাঁচ বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

​জ্ঞান 

জ্ঞান একজন মানুষকে ভিড়ের থেকে আলাদা করে তোলে। জ্ঞানকে হাতিয়ার করে আমরা সমাজে নিজের একটা পরিচিতি গড়ে তুলতে পারি এবং অন্যের মনে নিজের একটা ছাপ রেখে দিতে পারি। জ্ঞান আমাদের সঙ্গ কখনও ছাড়ে না। শাস্ত্র অনুসারে জীবদ্দশায় আমরা যে জ্ঞান আহরণ করি, তা মৃত্যুর পরেও আমাদের সঙ্গে থাকে। কারণ জ্ঞান একজন মানুষকে চরিত্রগত ভাবে আরও উন্নত করে তোলে। তাই গীতায় বলা হয়েছে যে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করুন, কারণ জ্ঞান হাজার দুঃখ দুর্দশার মধ্যেও আমাদের রক্ষা করবে।


​ঋণ 

পুরাণ অনুসারে ঋণ কখনও আমাদের পিছু ছাড়ে না। আমরা কারোর কাছে কোনও ভাবে ঋণগ্রস্ত হলে সেই ঋণের বোঝা মৃত্যুর পরেও আমাদের সঙ্গে যায়। এই ঋণ যেমন বস্তুগত হতে পারে, আর্থিক ঋণ হতে পারে, আবার কারোর কাছ কোনও উপকার নিলে সেই ঋণও হতে পারে। অর্থাত্‍ উপকারীর উপকার মনে রাখুন, চেষ্টা করুন সেই ঋণ যে কোনও ভাবে পরিশোধ করতে। না হলে ওই ঋণ শোধ করার জন্য আপনাকে আবার জন্মাতে হবে। আবার কেউ যদি আপনার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন এবং ঋণ শোধ না করেই তাঁর মৃত্যু ঘটে, তখন ওই ঋণ আদায় করার জন্য আপনাকে আবার জন্মাতে হবে। তাই কেউ ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পারলে, তাঁকে ক্ষমা করে দিন।


​কামনা বাসনা 

শাস্ত্র অনুসারে কারোর মনে যদি কিছু পাওয়ার বাসনা থাকে এবং সেই আকাঙ্খা পূরণ হওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়, তাহলে সেই বাসনা তাঁকে মৃত্যুর পরেও ছাড়ে না। সাধারণ মানুষ সারা জীবন কামনা বাসনায় ঘিরে থাকেন। তাই এই কামনা বাসনার মায়াজাল তাঁকে আবার এই পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসে। কোনও মানুষকে পাওয়ার আকাঙ্খাও মৃত্যুর পরেও আমাদের মনে বেঁচে থাকে। বিষ্ণু পুরাণে এই বিষয়ে একটি গল্প পাওয়া যায়। রাজা ভরত তাঁর একটি পোষা হরিণ ছানাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। এমনকি মৃত্যুর সময়েও তিনি ওই হরিণ ছানাটির কথাই ভাবছিলেন। পরের জন্মে তিনি হরিণ রূপে জন্ম নেন। নিজের মনের উপর থেকে কামনা বাসনার প্রভাব কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শাস্ত্রে।


​কর্ম 

গীতায় বলা হয়েছে যে কর্ম ছাড়া মনুষ্য জীবন সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তেই কর্ম রয়েছে। প্রত্যেক মুহূর্তে আমরা হয় ভালো কাজ করি, নয়তো খারাপ কাজ করি। মৃত্যুর পর আমাদের স্বর্গলাভ হবে না নরকভোগ, তা জীবদ্দশায় আমাদের কর্ম ঠিক করে দেয়। আর পরের জন্মেও এই কর্মফল আমাদের পিছু ছাড়ে না। বলা হয়ে থাকে আগের জন্মে ভালে কিছু করলে পরের জন্মে সুখলাভ হয়, আর আগের জন্মে খারাপ কাজ করলে পরের জন্মে কপালে অশেষ দুর্ভোগ থাকে। কর্মফল সাত জন্ম পর্যন্ত আমাদের পিছু ছাড়ে না।


​পূণ্যকাজ 

আপনি নিশ্চয় বড়দের বলতে শুনেছেন যে পূণ্যের ফল কখনও বৃথা যায় না। কোনও ভালো কাজ করলে তার ফল নিশ্চয় পাওয়া যায় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ করা আছে। জীবদ্দশায় পূণ্য করলে মৃত্যুর পর স্বর্গলাভ হয় এবং পরের জন্মে সুখভোগ হয়। যদি কখনও কোনও অচেনা মানুষের থেকে উপকার পান, তাহলে বুঝবেন ওই ব্যক্তি গতজন্মে আপনি তাঁর কোনও উপকার করেছিলেন, এই জন্মে তিনি সেই ঋণশোধ করছেন। তাই সব সময় অন্যকে সাহায্য করুন। দরিদ্রদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। এই পূণ্যফল মৃত্যুর পরেও আপনার সঙ্গে থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.