‘অভিশপ্ত’ এই গ্রামের মেয়েরা যৌবনে হয়ে যায় ছেলে
ODD বাংলা ডেস্ক: অকল্পনীয় হলেও অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি গ্রামে। বয়ঃসন্ধি পৌঁছে যাওয়ার পরই জনির পরিবারের কেউই জানতেন না তাদের আদরের ছোট মেয়েটি আদপে ছেলে। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে আস্তে আস্তে তার শরীরে ছেলেদের সব বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়। যা দেখে বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সবাই।
জনির আচরণ অবশ্য ছোট থেকে মেয়েদের মতো ছিল না। জনি সব সময়ই ছেলেদের সঙ্গে খেলতে ভালোবাসতো। মেয়েদের মতো পোশাক পরতে এবং সাজতে ভালো লাগত না তার। হাবেভাবে পুরো ছেলেদের মতো ছিল। জনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর পরই তার বাহ্যিক পরিবর্তনগুলো চোখে পড়তে শুরু করে পরিবারের। এ রকম ঘটনা জনির সঙ্গেই শুধু ঘটেনি। ক্যালিফোর্নিয়ার ছোট গ্রাম স্যালিনাসে জনির মতো আরো অনেকে রয়েছে।
যাদের বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে পুরুষের মতো বৈশিষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। কার্লা নামে সাত বছরের একটি মেয়েও যেমন পরবর্তীকালে কার্লোস হয়ে উঠেছিল। কেন এমন হয়? গ্রামবাসীদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, গ্রামের উপর নাকি কোনো পুরোনো অভিশাপ রয়েছে। সে কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। তবে বিজ্ঞান কিন্তু অন্য কথা বলে।
চিকিৎসকদের মতে, জনি, কার্লোস এবং তাদের মতো গ্রামের অন্য অনেক শিশু এক বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ ডেফিসিয়েন্সি। ফাইভ আলফা রিডাকটেজ মানব শরীরের একটি উৎসেচক। এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলেই এমন ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসকরা জানান, শরীরে যে জিনটি এই উৎসেচক তৈরির নির্দেশ বহন করে থাকে, তার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এই উৎসেচক যথাযথ পরিমাণে উৎপন্ন হয় না। ফাইভ আলফা রিডাকটেজ-এর কাজই হল স্ত্রী শরীরে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বাহক হরমোন টেস্টোস্টেরন-এর বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন-এ পরিণত করা। স্ত্রী শরীরে এটাই স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া।
এর ফলেই পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায় না এবং ঐ ব্যক্তি এক জন স্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হন। তবে এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলে টেস্টোস্টেরনের বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করার জৈবিক ক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে থাকে এবং শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতির জন্য পুরুষের বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়।
এই বিরল জিনগত রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, জিনগত ভাবে তারা পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তাদের মধ্যে পুরুষের বাহ্যিক বৈশিষ্টগুলো প্রকাশ পায় না। তারপর আস্তে আস্তে তা প্রকাশ পেতে শুরু করে। জনি এবং কার্লোসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই ঘটেছিল।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে তুলনামূলক বেশিই চোখে পড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাসে এই বিরল জিনগত রোগের প্রকোপ। প্রতি ৯০ জন শিশুর মধ্যে এক জন এই রোগে আক্রান্ত। স্যালিনাসে এই রোগের কারণ আজও জানা যায়নি।
Post a Comment