মাটির পুতুলে লুকিয়ে আছে মিথ, কী তা?

ODD বাংলা ডেস্ক: গত কয়েক দশক আগেও এ দেশের গ্রাম বাংলার শিশুদের হাতে হাতে দেখা যেত মাটির পুতুল। বাঙালির লৌকিক প্রথার সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে ছিল এই শিল্প। গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় তো মাটির পুতুরের ছড়াছড়ি দেখা যেত। মৃৎশিল্পের সোনালি সেই দিন গত হয়েছে অনেক আগেই। তবুও মাটির পুতুল নির্মাতাদের মধ্যে আজও প্রচলিত আছে একটি মিথ বা বিশ্বাস। কী তা?   
বাংলার গ্রাম-অঞ্চলে কুমোর পাড়ার কারিগরদের মধ্যে একটা বিশ্বাস বা মিথ চালু রয়েছে। কারিগররা বিশ্বাস করেন, মাটির পুতুল বানাতে তাদের পাঁচ ভুতের কারবার করতে হয়। কুমোরদের পুতুল খেলা ওই পাঁচ ভুতের সঙ্গেই। পাঁচ ভুত বলে বোঝায় পঞ্চভূতের পাঁচ কাহন। শাস্ত্র মতের পঞ্চভুত হল ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম। ক্ষিতি মানে হল- পৃথিবী, অপ কথার মানে হল- জল। ঠিক সেরকমই তেজ কথার অর্থ হল- আগুন, আর মরুৎ মানে হল- বাতাস। এবং ব্যোম বলতে বোঝায় শূন্যতা অর্থাৎ আকাশকে। এমন গ্রামবাংলার শিল্পী কথনে লুকিয়ে আছে এক চমৎকার অর্থ।

এবার দেখা যাক পুতুল কারিগর এসব দিয়ে কি করে?

পুতুল কারিগর ক্ষিতি মানে পৃথিবী থেকেই মাটি নিয়ে আসে। তারপর অপ অর্থাৎ জল দিয়ে শিল্পী সেই মাটিকেই মাখে। সেই নরম মাটিকে সে পরিণত করে মনের মতন আঁকারে। এরপর শিল্পী ভাবেন কাঁচা মাটিকে পুড়িয়ে শক্ত করার কথা। আর তখনই তার দরকার হয় আগুনের, অর্থাৎ তার লাগে তেজ। এবার তো পুতুলকে ঠাণ্ডা করতে হবে। তাই সেই পোড়া উত্তপ্ত পুতুল সে দেয় বাতাসের কাছে। সুতরাং তার লাগলো মরুৎ কে। এবার ব্যোম কে কাজে লাগাতে হবে শিল্পীর। কিন্তু শূন্যতাকে কি ভাবে পুতুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে? এর উত্তর লোকো শিল্পী বের করে নেয় অবলীলায়। সে সমস্ত পুতুলগুলি বানাতে থাকে ফাঁপা করে। আর ফাঁপা মানেই হল শূন্যতা অথবা অসংখ্য ছিদ্র করা হয় পুতুলের গায়ে। আর সেই শূন্যতাই তখন আকাশ হয়ে নেমে আসে পুতুলের গায়ে। তৈরি হয় মাটির পুতুল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.