সভ্যতার রহস্যময় ইতিহাস, জেনে নিন- টাইম ক্যাপসুল কী?
ODD বাংলা ডেস্ক: টাইম ক্যাপসুল। নামটি শুনিই মনে হতে পারে, এটি অদ্ভুত কোনো ক্যাপসুল। যা হয়ত আপনার বর্তমানকে আগে বা পিছনে নিয়ে যেতে পারবে। তবে ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। এই ক্যাপসুল আপনাকে ভবিষ্যতে বা অতীতে নিয়ে যেতে পারবে না, তবে অতীত সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম এই ক্যাপসুল।
টাইম ক্যাপসুল আসলে কি ?
টাইম ক্যাপসুল হলো একটি বাক্স। যা মাটির গভীরে ইচ্ছাকৃতভাবে পুঁতে রাখা হয়। এর ভিতরে থাকে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে এমন বেশ কিছু জিনিস। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম সেই বাক্স উদ্ধার করলে, অতীত ইতিহাস ও মানবসভ্যতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। অর্থাৎ আধুনিক যুগের মানুষকে অতীত সমাজ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়ার একটি প্রক্রিয়াই টাইম ক্যাপসুল।
সেহেতু বলা যায়, টাইম ক্যাপসুল হলো এমন একটি ক্যাপসুল যার ভেতরে পরিপূর্ণ থাকে ঐতিহাসিক মূল্যবান তথ্য। এটি সাধারণত ভবিষ্যতের লোকেদের অতীতের সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অবহিত করার একটি প্রচেষ্টা।
টাইম ক্যাপসুল তৈরির উদ্দেশ্য
টাইম ক্যাপসুল মূলত ভবিষ্যতের ঐতিহাসিক, নৃতত্ত্ববিদ, প্রত্নতাত্ত্বিকদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়। কোনো বিশেষ তত্ত্ব বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। যাতে লিখিত থাকে টাইম ক্যাপসুল নির্মাণের সময়কাল এবং তা কতো বছর পর খোলা হবে সেই সময়কাল। এতে কখনো থাকে কোনো স্থাপত্য নির্মাণের সময়কাল, নির্মাতা কে বা করা, তাদের ছবি এবং অন্যান্য তথ্য। আবার কখনো কখনো সেই সময়ের মুদ্রা, কোনো বিশেষ বই অথবা পুতুল। যে কোনো কিছুই থাকতে পারে এই সময় ক্যাপসুলের মধ্যে।
এই নিদর্শন কখনো কোনো স্থাপত্যের নিচে আবার কখনো মাটির নিচে স্থাপন করা হয়। বিশেষ কারণ ছাড়া বা উল্লিখিত সময় ছাড়া এটি বের করা হয় না। যে কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস উন্মোচনের এই প্রক্রিয়াকে যথাযথই টাইম ক্যাপসুল বলা যায়।
পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় পাওয়ার টাইম ক্যাপসুল
১৭৭৭ সালের দিকে সাটিলো দে লা বিরেরাতে একটি ধর্মীয় মূর্তির মধ্যে একটি টাইম ক্যাপসুল আবিষ্কার করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর স্পেনের বর্গস শহরে একটি টাইম ক্যাপসুল পাওয়া যায়। একটি কাঠের মূর্তির মধ্যে লুকানো ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক নথি। এসব নথি লেখা ছিল ক্যাথেড্রালের চ্যাপলিনের দ্বারা ১৭৭৭ সালের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৯৫ সালের দিকে একটি টাইম ক্যাপসুল বানান স্যামুয়েল অ্যাডামস এবং পল রেভার। এটি ২০১৪ সালের বোস্টনের ম্যাসাচুসেট্স স্টেট হাউজ থেকে পাওয়া যায়। ১৭৯৫ সালের এই ক্যাপসুল ১৮৫৫ সাল নাগাদ একবার খোলা হয়েছিল এবং তাতে নতুন কিছু তথ্য যোগ করে পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৫৫ বছর পুরানো এই টাইম ক্যাপসুলের ভেতরে ছিল সেই সময়ের একটি খবরের কাগজ, ২৪ টি মুদ্রা যা অনেক প্রাচীণ, একটি রূপার পাত্র। টাইম ক্যাপসুলটি তৈরির সময়কাল ৪ জুলাই ১৭৯৫। আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের ২০ বছর পরে এটি নির্মিত হয়।
১৯০০ সালে নির্মিত আরো একটি টাইম ক্যাপসুল খুঁজে পাওয়া যায়। এই ক্যাপসুলটি ‘ডেট্রয়েট সেঞ্চুরি বক্স’ নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে ১৯০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই ডেট্রয়েট সেঞ্চুরি বক্স টাইম ক্যাপসুল তৈরি করা হয়। সেই সময়কার মেয়র উইলিয়াম সি মায়বুরি এর তত্ত্বাবধানে এটি তৈরি করা হয়। একটি তামার বাক্সে অনেকগুলো চিঠি, ভবিষ্যৎবাণী, প্রায় ৫৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি এবং সেই সময়কার কিছু তথ্য সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল এই ক্যাপসুলটি। ১০০ বছর পর সেই একই দিনে অর্থাৎ ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়র ভেনিস আর্চারের সভাপতিত্বে খোলা হয়েছিল।
এছাড়া সারা বিশ্বজুড়ে অনেক টাইম ক্যাপসুল বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে এবং বর্তমানে নিত্যনতুন ক্যাপসুল ভবিষ্যতের মানুষদের তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েই চলেছে।
Post a Comment