এই ফুলের দর্শন পেতে অপেক্ষা করতে হয় এক যুগ
ODD বাংলা ডেস্ক: ঠিক যেন বেগুনি চাদর বিছিয়ে রেখেছে কেউ। আসলে প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এই সৌন্দর্যে মুদ্ধ হয়ে ছুটছে মানুষ। তবে সাধারণ কোনো ফুল নয় এটি। এই ফুলের দর্শন পেতে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে এক যুগ। ১২ বছর পরপরই ফোটে এই ফুল। বিস্ময়কর এই ফুলের নাম নীলকুরিঞ্জি। এ কারণেই পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অঙ্গ নীলগিরি নাম পেয়েছে।
১২ বছর পরপর নীলগিরি নীলকুরিঞ্জি ফুলে ছেয়ে যায় ওই স্থানটি। যা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। কারণ লাখ লাখ নীল রঙা ফুল একসঙ্গে দেখার লোখ সামলাতে পারেন না অনেকেই। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ হয়তো নেই। আর হরেক রঙা ফুল আমরা চারদিকে দেখলেও, নীল রঙের ফুলগুলো বিস্ময়কর বটে!
আর সেই ফুল যদি হয় নীলকুরিঞ্জি; তাহলে তো কথায় নেই! নীলকুরিঞ্জি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যা তামিলনাডু, কর্নাটক, কেরালাও দেখতে পাওয়া যায়। নীলকুরিঞ্জি ফুল ফুটলে নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকায় মৌমাছির আধিক্য বহু গুণ বেড়ে যায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, নীলকুরিঞ্জির মিষ্টি গন্ধ এবং ফুলে মধুর আধিক্যই এর অন্যতম কারণ। প্রতি ১২ বছর পরপর জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে এই ফুল ফোটে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে এমনই নীল রঙের নীলকুরিঞ্জি ফুলে ঢেকে গিয়েছিল নীলগিরি।
এরপর ২০১৮ সালে নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকা আরও একবার ঢেকে যায় নীলকুরিঞ্জি ফুলে। এবার আর নীলগিরিতে নয়, কর্ণাটকের মণ্ডলপট্টি পাহাড় নীল চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সেখানে ফুটেছে নীলকুরিঞ্জি ফুল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই পর্বতের উচ্চতা ৪০৫০ ফিট। মেদিকেরি শহর থেকে এই পাহাড়ের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। পুষ্পগিরি অভয়ারণ্যের একটা অংশ এই মণ্ডলপট্টি পাহাড়ে অবস্থিত।
জিপ রাইডিং বা রোড ট্রিপের জন্য মেডিকেরি থেকে মণ্ডলপট্টি পাহাড়ের রাস্তাটি দারুণ জনপ্রিয়। এই পাহাড়টিই এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু কর্ণাটকই নয়, কেরালা, তামিলনাড়ুতে এই ফুল ফোটে। সব স্থানেই এই ফুল প্রতি ১২ বছরে একবার করেই ফোটে। তামিলনাড়ুর পালিয়ান উপজাতিরা এই ফুলের প্রস্ফুটন দেখে দিন মাস বছর গণনা করে।
প্রধানত নীলগিরি পাহাড় অঞ্চলের ফুল বলে এর নাম নীলকুরিঞ্জি। দেখতেও নীলচে বেগুনি। নীলকুরিঞ্জি ফুল সাধারণত ১৩০০-২৪০০ মিটার উঁচুতে ফোটে। গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী এই গাছের উদ্ভিদের উচ্চতা সাধারণত ৩০-৬০ সেন্টিমিটার। সর্বোচ্চ ১৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্তও এই উদ্ভিদকে বড় হতে দেখা গেছে। সেই দুর্লভ ফুলেই এখন ছেঁয়ে গেছে মণ্ডলপট্টি পাহাড়। নীলকুরিঞ্জি ফুল প্রায় ২৫০ প্রজাতির হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ৪৬টির মতো প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিটি প্রজাতি ছয়, নয়, এগারো বা বারো বছরের ব্যবধানে ফোটে। কোদাগুতে, গত সপ্তাহ থেকে ফুলগুলো ফুটতে শুরু করেছে। এখন আরও বেশ কিছুদিন পাহাড়টি ফুলে ফুলে ভরে থাকবে। গত বছর চিকমাগালুরু জেলায় বাবা ভুদানগিরি পাহাড়ে নীলকুরিঞ্জি ফুটেছিল।
এরই মধ্যে ভারত ভ্রমণে যেতে চান; তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন কর্ণাটকের মণ্ডলপট্টি পাহাড় থেকে। সেখানে গেলেই বিস্ময় নীলকুরিঞ্জি ফুলের দেখা মিলবে। সাক্ষী হতে পারেন প্রকৃতির এই মনোমুদ্ধকর রূপের।
Post a Comment