রহস্যময় গ্রাম, কোথায় গেল সব বাসিন্দারা
ODD বাংলা ডেস্ক: হুমায়ূন আহমেদের একটি জনপ্রিয় উক্তি আছে। আর তা হচ্ছে, 'প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে না।' অথচ আমাদের চারপাশের সব রহস্যের মূলেই কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতিই জড়িত। আসলে বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায়। আমাদের এই পৃথিবীতে এমন অনেক রহস্য ঘেরা ঘটনা রয়েছে, যার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
এমনই এক ব্যাখ্যাতীত ঘটনা ঘটেছিল কানাডার ভিলেজ অব ডেড নামের একটি গ্রামে। ঘটনাটি শুনলে মনে হবে যেন সিনেমা কিংবা সাইন্স ফিকশনের কোনো কাহিনী অথবা অসাধারণ একজন লেখকের দুর্দান্ত বর্ণনায় কোন রোমাঞ্চকর উপন্যাস। রহস্যময় এই পৃথিবীতে কত যে বিচিত্র ঘটনা ঘটে শত শত বছর গবেষণা করেও যার আসল কারণ খুঁজে পায় না মানুষ। ভিলেজ অব ডেড নামের একটি গ্রামেও ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল।
কানাডার উত্তরে আঙ্গিকুনী হ্রদের পাশে ছিল গ্রামটির অবস্থান। এই ঘটনাটি ঘটার আগে এই গ্রামটি সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো জানাশোনা ছিল না। শুধুমাত্র গ্রামবাসী ও ব্যবসার কাজে যারা আসতেন, তারাই জানতেন গ্রামটি সম্পর্কে। কিন্তু ১৯৩০ সালের পর সংবাদ মাধ্যমে একটি ঘটনা প্রকাশের পর গ্রামটি পুরো বিশ্বের নজরে চলে আসে।
কানাডার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রামটি ছিল আদিবাসী অধ্যুষিত। প্রায় দুই হাজার আদিবাসীর বসবাস ছিল সেই গ্রামে। তাদের উপার্জনের মাধ্যম ছিল পশু পালন এবং পশুর লোম বিক্রি করা। পশু এবং পশুর লোম ক্রয়ের জন্য গুটিকয়েক ব্যবসায়ী যাতায়াত করতো এই গ্রামটিতে। সেখানে তেমন কোনো কোলাহল ছিল না।
১৯৩০ সালে একজন সাংবাদিক এ গ্রামের একটি ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। আর যার সূত্র ধরে সংবাদটি প্রকাশ করা হয় তিনি একজন লোম ব্যবসায়ী। তার নাম ছিল জো লেবেল। লোম কেনার জন্যে তিনি প্রায়ই গ্রামটিতে আসতেন। একদিন তিনি সে গ্রামে গিয়ে আবিষ্কার করেন অদ্ভুত সেই ঘটনা।
লেবেলের ভাষ্যমতে, তিনি একদিন লোম সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গ্রামে যান। আর গ্রামের ভিতরে গিয়ে দেখেন সেখানে একটি মানুষও নেই। গ্রামের সব মানুষ কোথাও যেন উধাও হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তারা যে শার্টগুলো গুণছিল সেগুলো অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। কারো কারো চুলায় খাবারগুলো তখনো গরম হচ্ছিল। দেখে মনে হয়েছে, একটু আগেও এখানে অনেক মানুষের উপস্থিতি ছিল। যেই অবস্থা দেখে তার মনে হয়েছিলো গ্রামের সবাই আকস্মিকভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন।
প্রত্যেকটি বাড়ি ঘুরেও কোনো মানুষের দেখা পেলেন না সেই ব্যবসায়ী। হঠাৎ সাতটি কুকুরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। এছাড়া গ্রামের একমাত্র কবরস্থানের সবগুলো কবর পাওয়া গেল খোদিত অবস্থায়। কিন্তু কবরস্থানের ভিতরে কোনো লাশের দেখা মিললো না। ভেতরে সবগুলো লাশ কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। এটা কোনো প্রাণীর কাজ নয়। কারণ কবরের সঙ্গে যে পাথরের ফলক ছিল সেগুলো যথাস্থানেই ছিল। এমন ঘটনা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন লেবেল।
তিনি দ্রুত দ্য রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে খবর দেন। মেজর থিওডোর লেস্টর্টের নেতৃত্বে দ্য রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ পুরো গ্রাম এবং আশপাশের এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজে। কিন্তু কোনো গ্রামবাসীকে আর দেখতে পাওয়া যায় নি। যদিও এই খোঁজাখুঁজির ফলে পুলিশ আরো ভয়াবহ ঘটনার সন্ধান পায়।
লেখক জর্জ সাভারভিও, যিনি এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ১৯৩১ সালের জানুয়ারিতে নর্থ-ওয়েস্ট জার্নালে এ সংক্রান্ত পাঁচ পর্বের একটি নিবন্ধ লিখেন। তার ভাষ্যমতে, পুলিশ দেখে ওই গ্রামের এস্কিমোদের পূর্বপুরুষদের সব কবর খোদিত অবস্থায় আছে। আর সেগুলোর ভেতর থেকে লাশগুলো গায়েব। কে বা কি লাশসহ গ্রামবাসীকে গায়েব করেছে তার কোনো সন্ধান মেলেনি হাজার তদন্তের পরও। শুধুমাত্র অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল ,ওই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন গোত্র প্রধানের কবরটি।
দুই হাজার গ্রামবাসীর উধাও হয়ে যাওয়া সঙ্গে সঙ্গে কবরের লাশগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া এবং শুধু একটি কবর অক্ষত থাকা এর কোনো হিসেবে মিলাতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়নি, কি হয়েছিল সেই আদিবাসীদের সঙ্গে। শুধুমাত্র পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা হয়েছে রহস্যময় এই গ্রামটি সম্পর্কে।
Post a Comment