পায়ের ধুলো পড়েছে রামকৃষ্ণের,স্বামী বিবেকানন্দ গেয়েছিলেন ২৭টি গান, ইতিহাসে মোড়া বাড়ির পুজো
ODD বাংলা ডেস্ক: কলকাতার বনেদিবাড়ির দুর্গা পুজোর একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। তবে কোথাও এর জৌলুস কমেছে, কোথাও বা তা বহমান ধারায় চলেছে। কিন্তু একচালার ঠাকুর, সুবিশাল ঠাকুর দালান আর নিজস্ব নিয়ম-রীতি মেনে পুজো নিজের জায়গায় অম্লান। তেমনই এক বনেদিবাড়ির পুজো অধরলাল সেনের পারিবারিক দুর্গাপুজো। ১৫০ বছর পার করেও উত্তর কলকাতার বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের এই পারিবারিক পুজো চলে আসছে নিজের মত করে। প্রচারের আলো থেকে খানিকটা দূরে থাকলেও কলকাতার বনেদিবাড়ির পুজোর ইতিহাস লিখতে বসলে অধরলাল সেনের পুজোকে জায়গা দিতেই হবে। নাহলে ইতিহাসটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে!
মাত্র ৩০ বছরের ছোট্ট জীবনে তিনি একাধারে অসামান্য ছাত্র, ইংরাজি সাহিত্যের পণ্ডিত, কবি ছিলেন অধরলাল সেন। তাঁর লেখা ২টি বাংলা কবিতার বই সেসময়ে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিল। পেশায় ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ব্রাহ্ম সমাজের একটা প্রভাবও তাঁর ওপর ছিল। শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর ঠিক ৩ বছর আগে তাঁর সঙ্গে ঠাকুরের প্রথম দেখা হয়। সেই সান্নিধ্য প্রগাঢ় হতে সময় নেয়নি। শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম শিষ্য ছিলেন তিনি। এহেন অধরলাল সেনের বাড়িতে হত দুর্গাপুজো। যে বাড়িতে পুজো হত তা এখনও বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে ‘অধরালয়’ নামে খ্যাত। সেই বাড়িতেই এখনও হয় দুর্গাপুজো।
তাঁর সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাতের পর অধরলাল সেন ঠাকুরকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিভিন্ন সময়ে এই বাড়িতে এসেছেন ঠাকুর। পুজোর সময়েও এসেছেন। এসেছেন স্বামী বিবেকানন্দও। স্বামী বিবেকানন্দের গানের গলা ছিল চমৎকার। অধরলাল সেনের বাড়ির পুজোয় উপস্থিত হয়ে ২৭টি গান গেয়েছিলেন স্বামীজি। এ বাড়িতে বহু মনীষীর পায়ের ধুলো পড়েছে। তারমধ্যে আর একজন ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এই অধরালয়েই একসঙ্গে তিনজনের প্রথম সাক্ষাৎ। একসঙ্গে বসে সেদিন বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামীজি ও বঙ্গিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। এও এক ইতিহাস। এখনও রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্বামীজিরা আসেন এখানে। কথা বলেন। বসে পুজো দেখেন।
অন্যান্য বনেদিবাড়ির মত এই পারিবারিক পুজোতেও নিজস্ব কিছু রীতি চলে আসছে। কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। এটাই পরম্পরা। এটাই রীতি। বাড়িতে রয়েছে ঠাকুরদালান। চোখ বুজলে যেমন ঠাকুরদালান চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ঠিক তেমন। ঠাকুর গড়া হত এখানেই। কুমোরটুলির এক মৃৎশিল্পীর পরিবারই এই পরিবারের ঠাকুর গড়ে থাকেন। কয়েক বছর আগেও পুরো ঠাকুর গড়া হয়েছে এই বাড়িতেই। এখন সময়াভাবে ঠাকুরের মৃন্ময়ী রূপটি কুমোরটুলিতে বসেই তৈরি করে ফেলেন শিল্পী। তারপর শ্রাবণ মাসে সেই অর্ধসমাপ্ত ঠাকুর চলে আসে অধরালয়ে। সেখানেই ঠাকুর দালানে হয় ‘ফিনিশিং টাচ’। দুর্গার শাড়ি পরানো থেকে তাঁকে সালঙ্কারা করে তোলেন বাড়ির মেয়েরা। পুজোর প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় শ্রাবণ মাস থেকেই।অধরলাল সেনের মৃত্যুর পর বংশের অন্যরা পুজোকে এগিয়ে নিয়ে যান। অধরালয়েই প্রতি বছর একচালার ঠাকুর গড়া হত। পুজিত হতেন দেবীদুর্গা। এভাবেই ১৫০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছে এই পারিবারিক পুজো।
Post a Comment