রাজার পথ আটকে গ্রামে এলেন মা দুর্গা, ৩০০ বছরের বেশি পুরনো এক ইতিহাস


ODD বাংলা ডেস্ক: বর্ধমানের সোঁয়াই গ্রাম। গ্রামটি আর পাঁচটা গ্রাম থেকে আলাদা করেছে এখানকার বিখ্যাত মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। পুজোর শুরু আজ থেকে ৩৩০ বছর আগে। তারও আগে এ পরিবারের দুর্গাপুজো হত। তবে তা হত বর্ধমানের ফরিদপুরে। সে ইতিহাস এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। 

সোঁয়াই গ্রামে যখন এই পুজোর সূত্রপাত হয় তখন দিল্লির মসনদে বসে ঔরঙ্গজেব। সময়টা ইংরাজি ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দ। বাংলার ১১০০ সন। সেসময়ে বর্ধমানের সোঁয়াই গ্রামে থাকতেন মুখোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষ বাসুদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন ফরিদপুরের মানুষ। কিন্তু টোল-এ পড়াশোনা করতে তাঁর সোঁয়াই গ্রামে আসা। তারপর এই গ্রামেরই মেয়েকে বিয়ে করে এখানে ঘরজামাই হিসাবে থাকতে শুরু করেন। এই বাসুদেব মুখোপাধ্যায় একদিন হঠাৎই স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশে মা দুর্গা তাঁকে বলেন তিনি অপূজিত অবস্থায় ফরিদপুরে পড়ে আছেন। এই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর আর সময় নষ্ট না করে বাসুদেববাবু তাঁর ৪ পুত্র ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে সোজা চলে যান বাকলসার কাছে ফরিদপুরে তাঁর পৈতৃক ভিটেয়। তারপর তাঁর পারিবারিক দুর্গার কাঠামো কাঁধে করে সোঁয়াই গ্রামের দিকে পা বাড়ান।

প্রায় সোঁয়াই গ্রামের কাছে পৌঁছে গেছেন, এমন সময়ে যে রাস্তা ধরে তাঁরা আসছিলেন সেই রাস্তার উল্টোদিক থেকে বর্ধমানের মহারাজা ভ্রমণ সেরে ফিরছিলেন। রাজা যে পথে যাবেন সেই পথ আগলে কারা এভাবে আসছে তা দেখতে রাজার পাইক, বরকন্দাজ ছোটে। তারা বাসুদেব মুখোপাধ্যায়কে রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়াতে বলে। কিন্তু বাসুদেববাবু জানিয়ে দেন মায়ের কাঠামো নিয়ে তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না। বরং রাজা সরে দাঁড়ান। মা যাবেন। কিসের এত হাঙ্গামা তা জানতে রাজা এবার স্বয়ং এগিয়ে আসেন। ধর্মপ্রাণ রাজা যেই শোনেন যে মা দুর্গার কাঠামো যাচ্ছে তিনি তৎক্ষণাৎ রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ান।

সেখানেই শেষ নয়, এই পুজো যাতে ধুমধাম করে হতে পারে সেজন্য মুখোপাধ্যায় পরিবারকে প্রচুর জমি, পুকুর, সম্পত্তিও দান করেন। সে বছরই সেই কাঠামোয় মাটি লেপে তাতে রং করে প্রতিমাকে মৃন্ময়ী রূপ দেওয়া হয়। শুরু হয় পুজো। সেই যে পুজো শুরু হয়েছে তা আজও অমলিন। আজও চিরাচরিত রীতি মেনে, পুরনো পারিবারিক পুঁথি মেনে হয় দুর্গাপুজো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.