বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজো: এই বাড়িতে দুই বাহুবিশিষ্ট মা দুর্গার হাতে নেই কোনও অস্ত্র
ODD বাংলা ডেস্ক: কলকাতা শহরে বনেদি বাড়ির পুজোর কাহিনি শুরু করলে শেষ করা যাবে না। একটি পরিবারের রীতি-নীতি, প্রথা, অন্য পরিবারের থেকে এতটাই আলাদা, যে জানলে অবাক হতে হয়। তেমনই উত্তর কলকাতার ভোলানাথ দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোর রীতি-নীতি একেবারে অনন্য। এই পরিবারে দেবী দুর্গা অত্যন্ত শান্ত রূপে বাড়ির মেয়ের মত সপরিবারে বিরাজমান। হাতে থাকে না কোনো অস্ত্র। দেখে মনে হবে বাড়ির শান্তশিষ্ট মেয়ে সপরিবারে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। ভগবান শিবকে এই বনেদি বাড়িতে পুজো করা হয় জামাই রূপে।
এই বনেদি বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল ১৯০৫ সালে। ব্যবসায়ী ভোলানাথ ছিলেন গন্ধ দ্রব্যের ব্যবসায়ী। প্রচলিত আছে এই ভোলানাথ নাকি চাঁদ সদাগরের বংশধর ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম বারাণসীর বাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত এখানে মায়ের আরাধনা করা হতো। তারপর থেকে কলকাতায় দত্তবাড়ির আদিবাড়ি গোলক দত্ত লেনে মায়ের পুজো করা হয় ১৯২৫ সাল পর্যন্ত। তার পরের বছর থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাকাপাকিভাবে বিডন স্ট্রিট অঞ্চলের বাড়িতে পুজো হয়ে আসছে। এই স্থানের বাড়িটি কিনেছিলেন ভোলানাথ দত্তের মেজো ছেলে।
বিখ্যাত এই বনেদি বাড়িতে অন্নভোগ দেওয়ার নিয়ম নেই, তার পরিবর্তে দেওয়া হয় মিষ্টি, ফল এবং পাঁচ রকম ভাজা। অষ্টমী এবং নবমীর দিন আয়োজন করা হয় ধুনো পোড়ানোর। বাড়ির মহিলারা দেবী মায়ের সামনে দুই হাতে এবং মাথায় নতুন গামছা নিয়ে তার উপর বসান নতুন মালসা। সেই মালসাতেই পোড়ানো হয় ধুনো। এছাড়াও এই বনেদি বাড়ির অপর একটি ব্যতিক্রমী নিয়ম হলো বেড়া অঞ্জলি। সূর্যাস্তের পর ঠাকুরদালান থেকে প্রতিমাকে বার করা হয়। তারপর বাড়ির সমস্ত মহিলারা দেবীকে বরণ করে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে অঞ্জলি দেন। যাকে বলা হয় বেড়া অঞ্জলি। বিডন স্ট্রিটের হেদুয়া মোড় থেকে ছোট স্কটিশ স্কুলের দিকে ১০মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন ভোলানাথ দত্ত বাড়িতে। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আকৃতির এই বাড়িটি চোখে পড়ার মতো।
Post a Comment