ধাদিচা প্রথা: যেখানে স্ত্রী ভাড়া হয় লিখিতভাবে
ODD বাংলা ডেস্ক: প্রয়োজন মেটাতে আমরা বাড়ি গাড়িসহ অনেক কিছুই ভাড়া নিয়ে থাকি। কিন্তু টাকার বিনিময়ে নিজের স্ত্রীকে ভাড়া দেয়ার কথা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারে না। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ভারতের একটি রাজ্যে এমনই এক প্রথার প্রচলন রয়েছে। যেখানে শুধু নিজের স্ত্রীকেই নয়, এখানে একজন বাবা তার মেয়েকে আর একজন ভাই তার বোনকে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া দিয়ে থাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
তারা নারীদের অর্থের বিনিময়ে বাজারে বিক্রি করে থাকে। সেই বাজারে গণজমায়েত করে কেউ তার স্ত্রী, কেউ বা তার বোনকে নিলামে তুলে থাকেন। যে সব পুরুষেরা বিয়ের ভার নিতে চায় না বা দেরি করে বিয়ে করতে চায় তারা স্বল্প মূল্যে অন্যের স্ত্রী বা মেয়েকে ভাড়ায় নিয়ে নিজের শারীরিক চাহিদা পূরণ করে থাকে। নারী ভাড়া করার ক্ষেত্রে ধনী ও বিত্তবান পুরুষরাই সবচেয়ে এগিয়ে আছে।
এসব নারীদের ভাড়ার সময়সীমা হয় এক মাস থেকে প্রায় এক বছর পর্যন্ত। জানা গিয়েছে, ভাড়ার জন্য একজন নারীর মূল্য এক হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। আর এক বছরের জন্য নিতে চাইলে গুণতে হয় ১৫ থেকে ২৫ হাজার রুপি। নারীর সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের উপর দাম নির্ধারিত হয়। সুন্দরী অবিবাহিত মেয়েদের ভাড়া করতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার বেশিও খরচ করে থাকে তারা।
আর মাত্র ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয় এই স্ত্রী ভাড়ার চুক্তি। আবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চাইলে পুনরায় টাকা পরিশোধের মাধ্যমে তা রেন্যু করে নেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এভাবে মাসের পর মাস বছর বছর ধরে অন্যের স্ত্রীকে ব্যবহার করে পুরুষরা। নারী ভাড়ার এই রেওয়াজটি 'ধাদিচা প্রথা' নামে পরিচিত।
স্ত্রী পালনে রয়েছে অনেক দায় দায়িত্ব। তাই এ সমস্ত প্রতিকূলতা এড়াতে স্ত্রী ভাড়া করাই সবচেয়ে ভালো উপায় তাদের কাছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএনের এক সাংবাদিকের কাছে এর সত্যতা শিকার করেছেন এই নারী। তিনি বলেন, ঋন শোধ করার জন্য তার দরিদ্র স্বামী তাকে এক মাসের জন্য একজন ধনী ব্যক্তির নিকট ভাড়া দিয়েছিল।
উত্তর প্রদেশের গোয়ালিয়র ডিভিশনের শিবপুরী জেলায় এই 'ধাদিচা প্রথা' এর প্রচলন রয়েছে। অনেকের ধারণামতে, সেখানে নাকি ফেরা করার মতোই বউ ভাড়া করে থাকে। আবার কেউ কেউ বলে, সেখানে রীতিমতে খোলা বাজারে দাঁড় করিয়ে নিলাম হয় নারীদের। গুজরাটের এই প্রথা জনসম্মুখে সচরাচর না ঘটলেও ২০০৬ সালের একটি ঘটনা পুরো ভারতে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
গুজরাটের এক ব্যক্তি অর্থের অভাবে নিজের স্ত্রীকে একজন ধনী ব্যক্তির নিকট আট হাজার রুপির বিনিময়ে ভাড়া দেন। স্ত্রীকে মাত্র এক মাসের জন্যই ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। পুরুষদের অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালে এক নারী পালিয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ৩০ হাজার টাকায় কেনা সেই নারীর শরীরে অত্যাচার চালানো হয়েছিল অসংখ্যবার। কিন্তু পুলিশকে জানিয়েও এই প্রথার বিরুদ্ধে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
জানা যায়, সমাজের নারী লোভী বিত্তবানদের জন্যই এই প্রথার বিরুদ্ধে কেউ কিছুই করতে পারে না। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তো কোনো মাথাব্যথাই নেই সেখানে। কারণ পুলিশ বাহিনী নিজেই নাকি ঐ কাজের বখরা পেয়ে থাকেন। ভারতীয় মিডিয়ায় এটি একাধিকবার উঠে আসলেও পরিবর্তন ঘটেনি সামান্যতমও। ফলে এই প্রথার বিলুপ্তি কীভাবে ঘটানো যেতে পারে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নারীদের জন্য বিপজ্জনক দেশের দিক থেকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া এমনকি সোমালিয়ার চেয়েও ভয়ংকর অবস্থানে রয়েছে ভারতের নারীরা। যেখানে বিশ্বের নারীবাদীরা নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে উচ্চবাক্য ছুঁড়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত, সেখানে আজও নারী ভোগের এই অদ্ভুত প্রথা ঘটে চলেছে অবলীলায়।
Post a Comment