বাস্তবে ড্রাকুলার আবির্ভাব, মানুষের রক্ত খাওয়া যার নেশা

ODD বাংলা ডেস্ক: কাউন্ট ড্রাকুলার গল্প আজও মানুষের মনে ভয় ধরায়। নাম শুনলেই যেন দেখা যায়, ট্রান্সিলভ্যানিয়ার দুর্গের উঁচু দেওয়াল বেয়ে নেমে আসছে মূর্তিমান ভয়ঙ্কর। লেখক ব্রাম স্টোকারের লেখায় এমন ড্রাকুলারের কথা উঠে এসেছিল। যে রক্ততৃষ্ণা মেটাতে ঘাড়ের কাছে মুখ নামিয়ে দাঁত বসিয়ে দিত।
  
ড্রাকুলার অস্তিত্ব ছিল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে, এই একুশ শতকে যে সত্যিই ড্রাকুলার আবির্ভাব ঘটতে পারে, তা বোধ হয় ভাবতে পারেননি কেউ-ই। এই ড্রাকুলার ঠিকানা ট্রান্সিলভ্যানিয়া নয়, তুরস্কে বাবার সঙ্গে থাকেন তিনি। ‘দ্য জার্নাল অব সাইকোথেরাপি অ্যান্ড সাইকোসোম্যাটিক্স’ এই ব্যক্তির নাম প্রকাশ না করলেও তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। সারা দিন রক্ত পান করেও এক জন কী করে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারেন, এ নিয়ে সন্দেহ জাগে চিকিৎসকদের। তাই ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় জানতে পারেন, দুই বছর ধরে টানা রক্তপান করে চলেছেন তিনি।প্রথম দিকে রক্ততৃষ্ণা মেটাতে তিনি ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে নিজের রক্তই পান করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি তার নেশায় পরিণত হয়। কিছু দিন পর রক্তের নেশা এমন তীব্র আকার ধারণ করে যে, অচেনা ব্যক্তিকেও আক্রমণ করতে শুরু করেন তিনি। কখনও তাদের শরীর কামড় বসিয়ে, কখনও বা তাদের ছুরি দিয়েও আহত করে রক্তপান করতেন তিনি। এই কারণে তাকে অনেক বার গ্রেফতারও করেছে তুরষ্কের পুলিশ।

এর পেছনে রয়েছে করুণ এক গল্প, ছেলেকে রক্তের জোগান দিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত কিনেও আনতেন তার বাবা। চিকিৎসকদের দাবি, ঐ ব্যক্তি বহু বছর ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তার চার মাসের মেয়ে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে মারা যায়। কন্যাবিয়োগের শোক সামলে উঠতে পারেননি তিনি। এই পরিস্থিতিতেই নিজের কাকাকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, তার এক বন্ধু ওই ব্যক্তির সামনেই তাকে নৃশংস ভাবে খুন করে। খুন করার পর মৃতদেহের মাথা, এমনকি যৌনাঙ্গও কেটে ফেলে।

এই ঘটনার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে এই ব্যক্তির মনে। একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে থাকায় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। ২৩ বছর বয়সি এই ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি নিজের মনেই কথা বলে যান। তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, তার এক ‘অদৃশ্য’ বন্ধু রয়েছে। সেই বন্ধুর সঙ্গেই কথা বলেন তিনি।

অন্য ব্যক্তিদের আক্রমণ করার সময় নাকি তিনি কিছু বুঝতেই পারেন না। এমনকি তিনি এ-ও বুঝতে পারেন না, কী করে তিনি অন্য জায়গায় পৌঁছে যান। সেই ‘অদৃশ্য’ বন্ধুই নাকি তাকে রক্ত খাওয়ার নির্দেশ দেন।অনেক সময় সেই 'অদৃশ্য বন্ধু' আত্মহত্যা করতেও বলেছেন তাকে। তুর্কির ডেনিজলি মিলিটারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডিরেন সাকারয়া এবং তার সহকর্মীরা দু’বছর ধরে এই ব্যক্তির চিকিৎসা চালান।

ডিরেনের মতে, এই ব্যক্তি মানসিক অবসাদ, মদ্যাসক্তি, মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার-সহ বহু রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকেরা এ-ও জানিয়েছেন, তার মধ্যে ‘ভ্যাম্পায়ারিজম’-এর লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.