উড়ন্ত ট্রেন, গতি ঘণ্টায় ১১০০ কিমি

 


ODD বাংলা ডেস্ক: জাপানের দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন শিনকানসেন ছোটে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২০ কিমি গতিতে। বোয়িং ৭৪৭-এর ৮-আই মডেলের বিমানে ঘণ্টাপ্রতি প্রায় ১০৫৬ কিমি গতি তোলা যায়। তবে গতির নিরিখে এই যানগুলিকেও গো-হারা হারাতে হাইপারলুপ প্রযুক্তির যান। বিদেশি মাটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে এই হাইপারলুপ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তির যান আসতে পারে ভারতে।

দ্রুত গতির নানা বুলেট ট্রেনে ছেয়ে গিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকার বহু দেশ। চিন, জাপানেও রয়েছে বুলেট ট্রেন। সেগুলোতে চেপে অত্যন্ত কম সময়ে এক শহর থেকে অন্যত্র পৌঁছনো যায়। তবে হাইপারলুপ প্রযুক্তির যানে চেপে নাকি লস অ্যাঞ্জেলস থেকে সান ফ্রান্সিসকোর দূরত্ব (প্রায় ৬১৫ কিমি) পার করা যাবে মাত্র ৪৫ মিনিটে। তা নাকি ঘণ্টায় ১২০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে।


২০১৩ সাল থেকেই এই প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা ছড়াতে থাকে। সে সময় ‘হাইপারলুপ আলফা’ নামে ৫৮ পাতার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ্যে এনেছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। অন্য দিকে, ২০২০ সালের নভেম্বরে এই প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম যাত্রিবাহী যান পরীক্ষামূলক ভাবে চালিয়েছিল ভার্জিন হাইপারলুপ নামে আমেরিকার সংস্থা। বস্তুত, ভার্জিন হাইপারলুপ এবং হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন টেকনোলজিস (হাইপারলুপ টিটি) নামে আমেরিকার দুই সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তির যান বাজারে আনতে চায়।


ভবিষ্যতের যানগুলো যে হাইপারলুপেই চলাচল করবে, সে দাবি উঠতে শুরু করেছে। শিনকানসেন বুলেট ট্রেনের থেকে সাড়ে তিন গুণ দ্রুত ছোটে তা। বোয়িংয়ের থেকে দ্রুতগামী এই প্রযুক্তি কাজ করে কীভাবে? এই প্রযুক্তিতে আমেরিকার ওই দুই শহরের মধ্যে যাতায়াতে টিকিটের খরচ পড়তে পারে ১০০ ডলার। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আট হাজার টাকা। যানজট কমানোর পাশাপাশি এ ধরনের যানে দূষণে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ এগুলো চলবে তড়িৎচুম্বকীয় শক্তিতে।


মাস্কের সংস্থার গবেষণাপত্রটি প্রকাশ্যে আসার ১০ বছরের মধ্যেই এই প্রযুক্তি বাস্তবে পরিণত হতে পারে। ঐ গবেষণাপত্রে হাইপারলুপ যানের নকশা, সুরক্ষা-সহ নানা দিক তুলে ধরা হয়েছিল। তার পর থেকে এই প্রযুক্তিতেও নানা বদল হয়েছে। সম্প্রতি এর সঙ্গে জুড়েছে ম্যাগনেটিক লেভিটেশন বা ম্যাগলেভ তত্ত্বটিও।


বস্তুত, ম্যাগলেভের জন্যই হাইপারলুপ যান এত গতি তুলতে পারে। এই যানের লাইনগুলো পোরা রয়েছে একটি টিউবে। যে লাইনের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে ছোটে এই প্রযুক্তির যান। ঐ লাইনগুলো থেকে খানিকটা ভাসমান থাকে যানটি। যানের নীচে যে চুম্বকীয় লাইনিং রয়েছে, তার থেকে বিকর্ষণের ফলেও যানটি ছোটার সময় ভাসমান থাকে। হাইপারলুপ যানের চলাচল যাতে আরও মসৃণ হয়, সে জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার দুই সংস্থা। সে জন্য আরো উন্নত মানের ম্যগলেভ তৈরি করায় মন দিয়েছে তারা।


যে ধরনের চুম্বক দিয়ে ছোটরা খেলাধুলো করে, সেগুলোকেই পরোক্ষ ম্যাগলেভ প্রযুক্তিতে কাজে লাগানো হচ্ছে। হাইপারলুপ যানটিকে লাইনের উপরে ভাসমান রাখতে চৌম্বকশক্তির সঙ্গে সঙ্গে তড়িৎচুম্বকীয় শক্তিকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তির যান এত দ্রুত ছোটে কীভাবে? হাইপারলুপ প্রযুক্তির মাধ্যমে ছোটা যান আসলে বায়ুর বাধাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। মনে করুন, ট্রেনের বাইরে হাত বাড়িয়ে দিলে যে বাতাসের ধাক্কা লেগে আপনার হাতটিকে পিছিয়ে দেয়, সেই বাতাসের ধাক্কা যদি না থাকে? হাইপারলুপ প্রযুক্তির যান ঐ বাতাসের ধাক্কাকে কাটিয়ে দিতে পেরেছে। যার ফলে যানটির গতি বেড়ে যায়।


ভ্যাকুয়াম পাম্পের মাধ্যমে হাইপারলুপের যান এই বাধা অতিক্রম করে। আমেরিকার দুই সংস্থাই টিউবের মধ্যে ভ্যাকুয়াম পাম্প ঢুকিয়ে দিয়েছে। দেড়শো বছর আগে তৈরি ভ্যাকুয়াম পাম্প নতুন করে কাজে লাগিয়েছে লেবোল্ড নামে এক সংস্থা। এই ধরনের পাম্প টিউবের প্রতি ১০ কিলোমিটারে বসানো হয়েছে। তত্ত্বগত ভাবে তা টিউব এবং ক্যাপসুলের মতো যানের মাঝে থাকা ৯৯.৯ শতাংশ বাতাস শুষে নিতে সক্ষম। এর ফলে বাতাসের ধাক্কায় যানের পিছিয়ে পড়া ঘণ্টাপ্রতি ৮০০ কিলোমিটার কমাতে পেরেছে বলে দাবি।


হাইপারলুপ প্রযুক্তির যানের পরীক্ষামূলক দৌড় হয়ে গিয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। সে বছর ভার্জিন হাইপারলুপের জশ এবং সারা প্রথম ওই যানে ওঠেন। দুই আসনের প্রোটোটাইপ যানে ৫০০ মিটারের সফর করেন তারা। সংস্থার দাবি, প্রতি ঘণ্টায় ১৭২ কিলোমিটার গতিতে মোটে ৬.২৫ সেকেন্ডেই ঐ দূরত্ব পার করানো সম্ভব হয়েছিল। এই ধরনের যানটি যে লাইনের উপরে ভাসমান থাকবে, তা নাকি টেরই পাবেন না যাত্রীরা। খানিকটা বালিশের উপরে বসার মতো মনে হবে।


আমেরিকার সংস্থা দুইটির দাবি, এক-একটি যানে ২৮ বা তার বেশি যাত্রী রাখা সম্ভব। এ ছাড়া, প্রতি ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী পারাপার করাও যাবে বলে দাবি। যদিও এই পর্যায়ে যেতে গেলে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ওই দুই সংস্থা। হাইপারলুপ টিটির দাবি, আবু ধাবিতে তাদের যানের পরীক্ষা চলছে। শিকাগো থেকে ক্লিভল্যান্ডের মধ্যে প্রথম যান চলাচল শুরু হতে পারে। অন্য দিকে, চলতি বছরে এই যানের জন্য ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় নয় হাজার ৬০০ মিটার দীর্ঘ লাইন পাতা হবে। ভার্জিন হাইপারলুপের দাবি, ২০৩০ সালের আগে তাদের যান তৈরি হবে না। তবে তার পর এ দেশের পাশাপাশি দুবাই-সহ আমেরিকার মিডওয়েস্ট, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং টেক্সাসে ছুটতে পারে হাইপারলুপ যান।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.