নিষিদ্ধ এই পর্বতে এলেই বয়স বৃদ্ধি ও মৃত্যু! আজও রহস্যে ঘেরা হিমালয়ের কৈলাস পর্বত

ODD বাংলা ডেস্ক: কৈলাস পর্বত যা তিব্বতের হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ। এটি এশিয়ার বৃহৎ সিন্ধু নদী, শতদ্রু নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ প্রভৃতি নদীগুলোর উৎস স্থান। একে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্ম- এই চারটি ধর্মের তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কৈলাস পর্বতের কাছেই তিব্বতের মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল অবস্থিত।

হিন্দু ধর্মীয় পুরাণে কৈলাস পর্বতকে শিবের 'লীলাধাম' বলা হয়েছে। হিন্দুদের ধারণা শিব ও তার সহধর্মিনী দুর্গা এবং তাদের কার্তিক-গণেশ ও শিবের অনুসারী ভক্তরা কৈলাসে বাস করেন। ২২ হাজার ফুট উচ্চতার কালো পাথরের এই পাহাড়কে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ বলে মনে করা হয়। যা ধরে রেখেছে পৃথিবীর ভর।

তিব্বতে প্রচলিত প্রাচীন কিংবদন্তি হল‚ গুরু মিলারেপাই শুধু পা রাখতে পেরেছিলেন কৈলাস-শীর্ষে। ফিরে এসে তিনি নিষেধ করেছিলেন এই পর্বত জয় করতে। কারণ একমাত্র সেই মানুষই পারবে এর শীর্ষে যেতে‚ যার গায়ে কোনও চামড়া নেই। কৈলাস পর্বতের আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে যাতে নাকি মানুষের চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে। সাধারণভাবে মানুষের নখ-চুল যে হারে বাড়ে‚ কৈলাস পর্বতে অন্তত ১২ ঘণ্টা কাটালে নাকি এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। 

কৈলাসকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য, কাহিনি এবং বিশ্বাস। রহস্যে ঘেরা এই পর্বত সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অধরা থেকে গিয়েছে। এই পর্বতের চূড়ায় এখনও পর্যন্ত কেউ উঠতে পারেননি। ১১ শতকে মহাযোগী মিলেরোপা কৈলাসে উঠতে চেয়েছিল,তিনি ফিরে এসে অন্যদের ওখানে যেতে নিষেধ করেন।

তিব্বত মালভূমি থেকে ২২ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত কৈলাসকে হিন্দুদের পাশাপাশি বৌদ্ধ এবং জৈনরাও পবিত্র বলে মনে করেন। প্রচলিত বিশ্বাস, যে হেতু কৈলাসে দেব-দেবীর বাস, তাই কোনও মানুষ সেখানে যেতে পারবেন না। ওখানে ওঠা মানেই দেবতাদের রোষে পড়া। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তার পরেও নাকি অনেকে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা হয় পথভ্রষ্ট হয়েছেন, অথবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মারা গিয়েছেন। ফলে অধরাই থেকে গিয়েছে কৈলাস পর্বতের চূড়া। কৈলাস পর্বতের আকার পিরামিডের মতো। অনেকে একে ‘পৃথিবীর কেন্দ্র’ বলেন। এটি ‘কসমিক অ্যাক্সিস’ বা ‘ওয়ার্ল্ড পিলার’ নামেও পরিচিত।

শোনা যায়, কয়েক জন সাইবেরিয়ান পর্বতারোহী কৈলাস পর্বতের ‘নিষিদ্ধ’ এলাকায় গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বয়স নাকি কয়েক দশক বেড়ে গিয়েছিল। যদিও এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিশ্বাস, কাহিনির বেড়াজালে মোড়া কৈলাস পর্বত একটা রহস্যের ঘেরাটোপেই রয়ে গিয়েছে।

কৈলাস পর্বতের পাদদেশেই রয়েছে মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল। ১৪ হাজার ৯৫০ ফুট ওপরে অবস্থিত মানস সরোবর বিশ্বের উচ্চতম মিষ্টি জলের হ্রদ। আশ্চর্যের বিষয়, যত জোরেই হাওয়া দিক না কেন মানস সরোবরের জল সবসময়ই শান্ত থাকে। কিন্তু রাক্ষসতালের জল সব সময় অশান্ত থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস যে, শিবকে প্রসন্ন করার জন্য রাক্ষসরাজ রাবণ যে তপস্যা করেছিলেন, তার থেকেই রাক্ষসতালের সৃষ্টি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.