কিশোর-কিশোরীদের নাক থেকে রক্তপাত সাইনাসে কোনও জটিল সমস্যা হতে পারে
ODD বাংলা ডেস্ক: মাথার যন্ত্রণাকে অনেক সাইনাস ভাবে। তাই মাথা ব্যথার সমস্যা হলে বলে ‘আমার সাইনাস আছে’। অনেক ক্ষেত্রেই সাইনাস দায়ী থাকে মাথার যন্ত্রণার কারণ হিসাবে। তবে মনে রাখতে হবে সাইনাসের সমস্যায় মাথায় যন্ত্রণা হলেও, মাথায় যন্ত্রণা মানেই সাইনাসের সমস্যা নয়।আমাদের মুখের মধ্যে যে হাড়গুলো থাকে অর্থাৎ ব্রেনের নীচের অংশ থেকে মুখের আদল অর্থাৎ ফেসিয়াল–চোয়াল এবং তার চারদিকের অংশ-এই হাড়গুলোর মধ্যে কিছু বাতাস পূর্ণ প্রকোষ্ঠ বা গহর থাকে, সেগুলোকেই চিকিৎসাশাস্ত্রে সাইনাস বলা হয়।
এর মধ্যে ম্যাক্সিলা, এথয়েড, ফ্রন্টাল এবং স্ফেনয়েড এগুলো হচ্ছে বড় সাইনাস। এছাড়াও মুখের মধ্যে আরও অনেক হাড় আছে। এবং সাইনাসও আছে। যেমন এথময়েডের মধ্যে একটা নয়, অনেকগুলো সাইনাস আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দশটা বা কুড়িটা সাইনাসও থাকতে পারে। আরও বেশি হতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় যতক্ষণ না সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে।
সবার সব সাইনাস থাকে না। প্রথমে কেবলমাত্র ম্যাক্সিলার সাইনাসই থাকে। তারপর আস্তে আস্তে এথময়েড, ফ্রন্টল, স্ফেনয়েডগুলো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনোটা এক বছর, কোনোটা দু’ বছর, কোনোটা পাঁচ-সাত বছর, কোনোটা চোদ্দ-পনেরো বছর পর্যন্ত নতুন করে আসতে পারে, যা জন্মগতভাবে ছিল না। কারণ তখন মুখের হাড়গুলো খুব ছোট হয়, ব্রেনটা বড় থাকে। আস্তে আস্তে মুখের হাড়গুলো বাড়তে থাকে, কিন্তু ব্রেনটার হাড় বাড়ে না।
মুখের হাড়গুলো যে বাড়ে তার মধ্যে হাওয়া ঢুকতে থাকে। সেই হাওয়া আসে নাকের মধ্য দিয়ে। সাইনাসগুলো সব কিন্তু নাকের সঙ্গে যুক্ত। নাকের মধ্য দিয়ে হাওয়া ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সাইনাসের কাজঃ শরীরের অন্যান্য হাড়ের মধ্যে কিন্তু এত হাওয়া থাকে না। এখন প্রশ্ন হল, সাইনাসের মুখের হাড়ের মধ্যে এত হাওয়া ঢোকে কেন ? এই হাওয়া ঢোকার দরকারই কী।
প্রথম কথা হচ্ছে, হাওয়া যাতায়াত করে এখান দিয়ে। যেখান দিয়ে হাওয়া যায় সেখানে একটু ভেজা ভাব থাকে। এখান দিয়ে হাওয়া যায় বলে চারপাশটা একটু ভোজ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শরীরে অন্যান্য জায়গার তুলনায় মুখের এই অংশে হাওয়া আসে এটা তার প্রমাণ।হাওয়া ঢোকার একটা উপকারিতা আছে। তা হল হাওয়া ঢোকার কারণে মুখের হাড়গুলো অনেক হালকা হয় শরীরের অন্যান্য হাড়ের তুলনায়। যার ফলে মাথা যতটা সম্ভব হালকা থাকে। কারণ ব্রেনটা ভারী থাকার অন্যান্য অংশ হালকা থাকলে জীবনধারণের সুবিধা হয়।
তবুও মানুষের মধ্যে সাইনাসের হাওয়া অনেক কম। অন্যান্য পশুদের মাথা সাধারণত জলে ভাসে। মানুষের কিন্তু ডুবে যায়। তাই মানুষকে আলাদা করে সাঁতার শিখতে হয়। পশুদের কিন্তু শিখতে হয় না।
তা সত্বেও এই হাড়গুলোতে হাওয়া ঢোকার ফলে মাথা অনেক হালকা থাকে, আর কথা বলার সময় হাওয়াটা অনুনাসিক হিসাবে কাজ করে। সাইনাসটাও তাই। সর্দি-কাশিতে যখন সাইনাস ব্লক থাকে তখন গলার স্বরটা যেন ম্যাড়মেড়ে লাগে। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা সেভাবে কথা বলি না, অনেক সুন্দর করে কথা বলি। সাইনাস থাকার কারণে মাথা অনেক হালকা থাকে এবং গলার স্বর অনেক শ্রতিমধুর হয়।
নাক থেকে যখন নিঃসরণ হয় তখন তাকে আমরা সিকনি বলি। তেমনি সাইনাস থেকেও নিঃসরণ হয়। যে কারণে নাকের মধ্যে একটা এয়ার কন্ডিশনিং এফেক্ট কাজ করে। শীতকালে ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা হাওয়া যখন নাকে প্রবেশ করে তখন তার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। লাঙ্স যদি ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার হাওয়া ঢোকে তাহলে মানুষ বাঁচতে পারে না।
আবার বাইরের ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার হাওয়াও যদি লাঙস পৌছয় তাও কিন্তু মানুষ সহ্য করতে পারে না, মারা যায়। ফলে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার আশপাশে থাকতে হবে। সেটা কীভাবে সম্ভব ? এই হাওয়া যখন নাক ও সাইনাসের কাছে পেীঁছয়, সাইনাসের মধ্যে যে নানারকম গঠন আছে, এর যে সিক্রিয়েশন বা রস বের হয় বা এর মধ্যে যে রক্তজালিকাগুলো আছে, যেগুলো সবসময় রক্ত প্রবাহ করাচ্ছে, সেখানে হিট এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়ে ঠান্ডা হাওয়া হলে গরম হবে, আর গরম হাওয়া ঠান্ডা হয়ে শরীরের তাপমাত্রার কাছাকাছি আসবে।
অ্যাডিনয়েড থেকে নাকের সমস্যাঃ যদি কোনো বাচ্চা ছোটবেলা থেকে প্রচন্ড সর্দি-কাশিতে ভোগে, নাক বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে, তাহলে হাওয়া চলাচলের রাস্তা খুব একটা পাবে না। তখন তাদের সাইনাস ঠিক মতো তৈরি হয় না। মুখের নানরকম পরিবর্তন হয়। কারোর চোয়ালটা সামনে চলে আসে, কারোর গালের হাড়গুলো ঢুকে থাকে। পরে সে যতই ভালোভাবে থাকুক, ভালো খাওয়া-দাওয়া করুক, গঠনগত অস্বাভাবিকতা কিন্তু রয়েই যায়। ফলে যারা সাইনাসের সর্দি-কাশিতে ভোগে, তাদের গঠনগত মুখের সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। এর সাথে নাকের পিছনে যে অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড থাকে সেখানে হাওয়া চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে নাক ডাকার সমস্যা তৈরি করে,কানের শোনার সমস্যা হয়, কথা বলার সময় নাকি সুর আসে, ফ্ল্যাট টোনে কথা বলে অর্থাৎ নাক বন্ধ থাকলে যেভাবে কথা হয় আর কী। অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ডগুলোও হাওয়া চলাচল বাধা সৃষ্টি করার ফলে সাইনাসের সমস্যা হয়।
সাইনাসের ক্ষতিঃ সর্দি-কাশির সমস্যা, নাকের গঠনগত সমস্যা, অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা, প্যালেট কাটা থাকলেও হাওয়া যাবার সমস্যা থেকে সাইনাসের সমস্যা তৈরি হয়। সাইনুসাইটিস হলে সর্দি-কাশি তো থাকছেই, তার সাথে মাথা ভারী হওয়া, মাথার যন্ত্রণা, মাথা ঝোঁকালে মাথা ছিঁড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।সাইনুসাইটিস কখনো একদিকে হতে পারে, আবার কখনো দু’ দিকে হয়।
কিছু কিছু হাড়ের অসুখ আছে যাতে হাড়ের বৃদ্ধি অসম্পূর্ণ থাকে। যেমন ফাই ব্রয়েড ডিসপ্লেসিয়া, যে অসুখে হাড়গুলো বাড়তে পারে না যতই হাওয়া আসুক। কারোর একদিকে কপালটা বেশি ফোলা, একদিকের গালটা বেশি ফোলা, গাল বা চোয়ালটা নামানো। ম্যাক্সিলারি সাইনাসে গন্ডগোল হলে ওপরের চোয়ালে গন্ডগোল হবে। যদি ম্যাক্সিলারি সাইনাস পিছনে চলে গিয়ে দাঁত সামনে এসে যায়। মুখের গঠনগত সমস্যা হয়। এগুলো পরে অপারেশন করে ঠিক করা যায়, কিন্তু সমস্যা তো একটা বটেই।
সাইনাসে যদি বিভিন্ন কারণে গঠনগত সমস্যা হয় তবে কী কী সমস্যা হতে পারে ??
ছোটবেলা থেকেই সর্দি-কাশির সমস্যা তো থাকছেই। সাইনাসের ড্রেনেজে হাওয়া পাস করা বা মধ্যেকার রস জমা বা সিক্রিয়েশন বেরোনোর রাস্তা যদি না থাকে, তাহলে সাইনাসে ইনফেকশন হয়ে সাইনুসাইটিস হতে পারে।
সাইনাসে সংক্রমণ ভাইরাল হতে পারে, আবার ব্যাক্টেরিয়া থেকে হতে পারে। ভাইরাল হলে ভাইরাল ফিভারের মতো দু’ চারদিন কি দশ-পনেরো দিন পর । আপনাআপনি কমে যায়। তবে ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ বেশিদিন থাকলে ভাইরাসের সাথে ব্যাক্টেরিয়াও আসতে পারে।ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ সারাতে সময় লাগে এবং ভোগান্তি হয় বেশি।
সাইনুসাইটিস হলে সর্দি-কাশি তো থাকছেই, তার সাথে মাথা ভারী হওয়া, মাথার যন্ত্রণা, মাথা ঝোঁকালে মাথা ছিঁড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।সাইনুসাইটিস কখনো একদিকে হতে পারে, আবার কখনো দু’ দিকে হয়। সেই অনুযায়ী লক্ষণের তারতম্য হয়। রোদেও দিকে তাকানো যায় না। নাক দিয়ে গাঢ় সর্দি বেরোয়, জ¦র আসে, নাক বন্ধ হয়ে যায়, গলার স্বর পাল্টে যায়,নাক ডাকার সম্ভবনা তৈরি হয়। এই সমস্ত সমস্যা বাচ্চা কিংবা বড় সকলেরই হতে পারে।
সামান্য হলে প্যারাসিটামলেই চলে যায়। কিন্তু যেগুলো চলতেই থাকে, সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে ওষধ নেওয়া উচিত।যাদের বারবার হতে থাকে বা ওষুধ কাজ করছে না, ছ’ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় থাকছে, এরকম অবস্থাকে বলে ক্রনিক সাইনুসাইটিস। ক্রনিক সাইনুসাইটিস নানরকম সমস্যা দেখা দেয়।
কোনো সাইনাস স্থায়ীভাবে ব্লক হতে পারে। বারবার হওয়ার কারণে হাওয়া চলাচল করা এবং রস নিঃসরণের রাস্তাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তখন নাকের সমস্যাগুলো যে অ্যাকিউট শুরু হয়েছিল সেগুলো অত বেশি মাত্রায় না হলেও বার বার হতে পারে বা একটানা হয়ে চলে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় নাকের ক্রনিক নাকের সমস্যা। অ্যালার্জি দেখা দেয়, ডাস্ট অ্যালার্জি। তাপমাত্রার তারতম্যেও কারণেও সাইনুসাইটিস দেখা দেয়।
এক ধরনের মারাত্মক ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ থেকে সাইনুসাইটিস হয়, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুব মুশকিল। যাদের শরীরে ইমিউনিটি কম যেমন ডায়াবেটিস রোগী, ক্যানসার রোগী যারা কেমো নিচ্ছেন, বোনম্যারোর সমস্যা, লিউকেমিয়া রোগী বা যারা অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড নিচ্ছেন, বাইরের ধোঁয়া-ধুলো সবসময় নাকের মধ্যে দিয়ে ঢুকছে, তার সাথে রোগজীবাণু থাকে- এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ এবং জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে। নাক বন্ধ, নাকে রক্ত আসা, কালচে কালচে নাকের ময়লা এসব হতে দেখা যায়। নাকের কোনো সমস্যা হলে সেখান থেকে রোগ চোখ, ব্রেন বা গলার পেছনে দিকে ছড়াতে পারে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, ইমিউনোকমপ্রোমাইজড স্টেরয়েডের রোগীদের সাইনাস ইনফেকশনের কারণে চোখে চলে গিয়ে দৃষ্টি চলে যেতে পারে। ব্রেন অ্যাবসেসও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে শতকরা ২০ থেকে ২৫ জনের মৃত্যুও সম্ভবনা থাকে। এরকম রোগীদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ এবং ভালো জায়গা ছাড়া করা মুশকিল। ডাক্তারবাবু ছাড়াও একটা টিমওয়ার্কের মধ্যে থাকতে হয়। অনেক সময় এই সব রোগীদের আই.সি.ইউ-তে ভর্তি করতে হতে পারে। দামি দামি ওষধ লাগে।
এছাড়া আরেক ধরনের ফাঙ্গাল সাইনুসাইটিস হতে দেখা যায়। প্রধানত ক্যানসার ইমিউনোকম্প্রোমাইজড, ডায়াবেটিক রোগীদের হয়। এটা অতটা মারাত্মক নয়। একটা সাইনাসের মধ্যে হঠাৎ কিছু ছত্রাক বাসা বাঁধে। এর ফলে একদিকে মাথার যন্ত্রণা, ব্যথা, ফুলে যাওয়া, জ¦র হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। সিটি স্ক্যান করে নির্ণয় করা যায় ফাঙ্গাল সাইনাসের সমস্যা। এন্ডোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় ভিতরে একটা ছত্রাকের বল তৈরি হয়েছে বেশ বড় আকারের। সেটাকে বার করে কিছু ওষুধপত্র দিলে রোগী ভলো হয়ে যায়।
যদি আইসোলেটেড ফাঙ্গাল বল সাইনাসে থাকে, সেগুলো বার করে দিলেই ঠিক হয়ে যায়। এর সঙ্গে জীবনশৈলীর কিছু পরিবর্তনও দরকার। যেমন ধুলো-বালি থেকে সাবধানে থাকা, দূষিত পরিবেশে না থাকা, এগুলো মেনে চলতে হয়।
নাক ও সাইনাসের আরো কিছু সমস্যা হয় যেগুলো অটো-ইমিউন। কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক গন্ডগোলের জন্য হয়। রেকারেন্ট সাইনুসাইটিসে মাথার যন্ত্রণা, রক্তপাত, সামনে মাথা ঝোঁকালে প্রচন্ড ব্যথা, নাক ঝাড়তে গেলে ব্যথা, নাক মুকনো হয়ে যায়, জ¦র আসে, চোখ লাল হয়। এগুলো কিন্তু সাধারণ সাইনুসাইটিসের লক্ষণ। এই জাতীয় লক্ষণ হচ্ছে অথচ অন্য কোনো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, সর্দি-কাশি ততটা নেই, সুগারের সমস্যা নেই,কেমোথেরাপি বা ক্যানসার নেই, সেক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করলে দেখা যায় রেকারেন্ট সাইনুসাইটিসের সমস্যা হচ্ছে। সাইনাসের ক্ষেত্রে যেটা মনে রাখা দরকার, সাধারণ সমস্যা থেকে বাড়াবাড়ি ধরনের কিছু সমস্যা হয়। এমন একটা জায়গায় হতে পারে যাতে ব্রেন এবং চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কোনো জেনারেল ফিজিশিয়ান বা ই. এন.টি বিশেষজ্ঞ দেখাতে যান, তিনি যদি একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেন, তবে ক্লিনিক্যালি রোগীকে অবশ্যয় সার্পোট দেওয়া সম্ভব।
সাইনাসটা শরীরের ভিতর থাকে, বাইরেও থেকে দেখা সম্ভব নয়। ফলে কোন সাইনাসে জটিলতা, সেটা সাইনাসের মধ্যে আছে না বাইরেও ছড়িয়ে গেছে জানার জন্য সিটি স্ক্যান করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এম.আর.আই-ও করতে হতে পারে। যদি দেখা যায় চোখ কিংবা ব্রেনের দিকে যাচ্ছে তাহলে খুব সতর্কতার সাথে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
সাইনাসে পলিপের সমস্যাঃ সাইনাসেক রোগে রোগীদের বেশিরভাগ সময় সাইনাসের ফুটোগুলো ব্লক হয়ে যায় বা পলিপ তৈরি হয়। ম্যাক্সিলা থেকে ফ্রন্টাল যেকোন সাইনাসে হতে পারে।
পলিপগুলো মাংসপিন্ডের মতো বাড়ে। বাড়তে বাড়তে সাইনাসকে বন্ধ করে দেয়। এরপর বাড়তে বাড়তে নাকের মধ্যে আসে এবং নাকে বাধা তৈরি করে। কখনোবা নাকের একদিকে হয়ে বন্ধ করে দেয়। যদি দু’দিকের নাকে হয় তাহলে রোগী মুখ হাঁ করে শ্বাস নেয়।
পলিপ যদি খুব প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাহলে স্প্রে করে পলিপকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু যদি সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, নাকের মধ্যে হাওয়া যাওয়ার কোনো রাস্তাই না থাকে, এমন জায়গায় চলে আসে যেখানে ওষুধ দিয়ে আর কিছু করা সম্ভব নয়, তখন অপারেশন করতেই হয় এবং অপারেশন করে দিলে হাওয়া যেতে শুরু করে, অন্য পলিপগুলো যেগুলো প্রাথমিক স্টেজে ছিল সেগুলোও তাড়াতাড়ি চলে যায়। ফলে বেশি অপারেশন করার প্রয়োজন পড়ে না।
পলিপ যদি হয়, তবে অপারেশনের একটা প্রশ্ন আসবেই। সেজন্য পলিপ হলে কোনো ডাক্তারবাবু যদি অপারেশনের কথা বলেন তো সেটা করিয়ে নেওয়া উচিত।
সাইনাসের সমস্যায় অন্যান্য কিছু পরীক্ষা করা হয়। যেমন, সুগার, থাইরয়েড, রক্তের টোটাল কাউন্ট, শরীরের ইমিউনিটি ঠিক আছে কি না। এছাড়া সাইনাসের এক্স-রে করা হয়। সাইনাসকে ঠিকমতো দেখতে গেলে সিটি স্ক্যান লাগবেই। সাইনাসের বাইরে যদি অসুখটা ছড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হয় তাহলে এম.আর.আই করা প্রয়োজন। এছাড়াও কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলো অত্যন্ত দামি, প্রয়োজনে সব পরীক্ষা করতে হবে।
সাইনাসের ক্যানসারঃ সাইনাসেও কিন্তু ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা থাকে। আজকের দিনে ক্যানসার যেমন শরীরের সব অঙ্গেই হয়, তেমনি সাইনাসেও ম্যালিগনেন্সি হয়।
সাইনাসের টিউমারঃ সাইনাসের টিউমার দেখা যায় শরীরের অন্যান্য অংশের টিউমারের মতো। বিনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট দু’ রকমই দেখা যায়।বিনাইন টিউমার অর্থাৎ ক্যানসার নয়, এমন টিউমার সাইনাসে অনেক রকম আছে। লক্ষণ সব একই রকম। সাধারণত টিউমার হলে সব সাইনাসই জড়িত হয়। প্রথমে একটা কিংবা কাছাকাছি আরো যে সাইনাস আছে তা দিয়েই শুরু হয়।
সেই জায়গাটা ভারী লাগে, ব্যথা হতে পাওে, বারে বারে জ¦র আসতে পারে। টিউমারের কারণে জায়গাটা ব্লক হয়ে গিয়ে সাইনুসাইটিস তৈরি করে। অনেক সময় টিউমারটা এমন জায়গায় হয় যে নাকের মধ্যে টিউমারটা বেড়ে গিয়ে সাইনাসের মুখটা বন্ধ করে দেয়। সাইনাসের আগে এখানে কোনো সমস্যা ছিল না, টিউমারের কারণে হাওয়া ঢুকছে না, রক্ত বেরোচ্ছে না, ফলে সংক্রমণ তৈরি হয়। এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে টিউমারটা ধরা পড়ে। এন্ডোস্কোপি এখনও পর্যন্ত দারুণ কাজ করে। এক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি করে টিউমারের খোঁজ পাওয়া যায়।
এন্ডোস্কোপিতে টিউমার পাওয়া গেলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বায়োপসি করা হয়। ডাক্তারবাবু এন্ডোস্কোপি করার সময় টিভি মনিটরে দেখে বুঝতে পারেন বায়োপসি করা হবে কি না। কখনো কখনো বায়োপসি করতে গেলে অ্যাঞ্জিওমা বা ব্লিডিং হয়। এক্ষেত্রে টিউমারটা পুরোটা বাদ দিয়ে বায়োপসি করতে হয়।যদি পরীক্ষায় বিনাইন আসে তবে সেখানেই চিকিৎসা শেয় হয়ে যায়। কিছু ওষুধপত্র দেওয়া হয় এই পর্যন্ত।
যদি দেখা যায় ম্যালিগন্যান্ট, তখন টিউমারের স্টেজ দেখা হয়। অপারেশন করলেই হবে, নাকি কিছ ওষুধপত্রের প্রয়োজন। অথবা এমনও হতে পারে রোগটা এমন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে যেখানে অপারেশনের রাস্তাই নেই। সেখানে বায়োপসি করে ডায়গোনোসিস করে ছেড়ে দেওয়া হয়। রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।সাইনাসের টিউমার অনেক ধরনের হয়। কিছু কিছু টিউমার আছে ছোট-বড় যেকোনো বয়সে হয়। আবার কিছু টিউমার আছে বয়সকালে বেশি হয়, কিন্তু ছোট আকারে হয়।
এমন কিছু টিউমার আছে যার পুরোটা বাদ দেওয়ার পরেও কয়েক মাস বা কয়েক বছর পরে আবার ফিরে আসে। এমন রোগী আছে যার দু’ বছরের মধ্যে ছ’বার এই ধরনের টিউমার হয়েছে। কারো যদি সাইনাসের সমস্যা থেকে বারংবার রক্তক্ষরণ হতে থাকে বা নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তখন কিন্তু দেরি না করে অতি অবশ্যয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
রক্তক্ষরণ কিন্তু হতে পারে জটিল সমস্যার লক্ষণ। তবে নাকের রক্তক্ষরণ অনেক সময় হাইপার টেনশন, খোঁচা লাগা বা সাধারণ সর্দি-কাশিতেও হতে পারে। দু’-একবার রক্ত পড়ে থেমে গেল, প্রেসার স্বাভাবিক অথবা বারবার হচ্ছে অন্য কোনো কারণ নেই, তাহলে কিন্তু সাবধান হওয়া উচিত। এসব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা দরকার। চিকিৎসা করলে ভবিষ্যতে অনেক জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কারো যদি সাইনাসের সমস্যা থেকে বারংবার রক্তক্ষরণ হতে থাকে বা নাকের একটা জায়গায় বিশেষ সমস্যা হয়ে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তখন কিন্তু দেরি না করে অতি অবশ্যয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।নাকের ক্যানসার হলে সেরে যাবার সম্ভবনা কতটাশরীরের অন্যান্য অঙ্গেও মতো ক্যানসারের স্টেজটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক স্টেজ হলে অবশ্যয় সেরে যাবে। শেষ স্টেজ হলে সেটা নির্ভর করে কতদূর রোগটা ছড়িয়েছে তার ওপর।
এর ফলে চোখ নষ্ট হতে পারে, ব্রেনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্রেন আর চোখে ছড়িয়ে পড়লে অপারেশন করাটা মুশকিল হয়ে যায়। রেডিয়েশন দেওয়ায় অসুবিধা হয়। ব্রেন আর চোখের রেডিয়েশন দিতে যেকোনো ডাক্তারবাবুর দ্বিধা করবেন। কারণ চোখের যেটুকু দৃষ্টিশক্তি আছে তা-ও চলে যেতে পারে। ব্রেনে নেক্রেসিস হয়ে ব্রেনের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে নার্ভাস ব্রেকডাউন হতে পারে।
মাথার যন্ত্রণা বলে সাইনাসের সমস্যাকে আমরা অনেকে গুরুত্ব দিই না। সাইনাসে টিউমার পলিপ বা ম্যালিগন্যান্সি থেকে ওপরের চোয়ালের দাঁত আলগা হয়ে যায়। দাঁত কালো হয়ে যায়। দাঁতের গোড়া যদি ফাঁক থাকে তাহলে দাঁতের সংক্রমণ ওপরের চোয়াল থেকে সাইনাসকে সং ক্রমিত করতে পারে। দু’ রকমই হতে পারে।
সাবধান কখন হবেনঃ যখন সাধারণ সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ, মাথা ব্যথা, মাথা সামনে ঝোঁকালে ব্যথা, খুব গাড় সর্দি, বারে বারে জ্বর, এক-দু’ সপ্তাহ চিকিৎসার পরেও কমছে না অথবা কমে যাওয়ার পরেও আবার হচ্ছে, বারবার নাক থেকে রক্ত পড়ছে, তখন কিন্তু একজন ই.এন.টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এইগুলো কিন্তু পরবর্তীকালে অনেক বড় সমস্যার লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে রোগী সহজেই সেরে যেতে পারে।
দশ-এগারো থেকে ষোল-আঠারো বয়স পর্যন্ত ছেলেদের নাক থেকে হঠৎ রক্ত পড়লে সাবধান হওয়া উচিত। কারণ জুভেনাইল অ্যাঞ্জিও ফাইব্রোমা এমন এক ধরনের টিউমার হয়, যা প্রচন্ড রক্তপাত ঘটায় এবং খুব বড় হয়ে গেলে তার চিকিৎসা অত্যন্ত ঝামেলার। অপারেশন করাও খুব সমস্যা। ফলে এই বয়সের ছেলেদেও হঠাৎ করে বার বার রক্ত পড়লে তখন কিন্তু জুভেনাইল অ্যাঞ্জিও ফাইব্রোমার কথা ভাবা উচিত এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। এই অসুখটি অত্যন্ত ঝামেলার এবং অপারেশন করতে গেলে প্রচুর রক্তপাতের সম্ভবনা। অনেক সময় জীবন নিয়েসংশয় তৈরি হয়। এই অসুখ মেয়েদের সাধারণত হয় না।
সাধারণ মাথার যন্ত্রণা সবসময় সাইনাসের জন্য হয় না। কিছু ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের কারণেও মাথার যন্ত্রণা দেখা দেয়। যেমন রোদে বেরোলে, কাজের চাপ, দুশ্চিন্তায়, খালি পেটে ইত্যাদি।মাইগ্রেনের কারণে যন্ত্রণা, টেসশনের কারণে মাথার যন্ত্রণা, এগুলেও কিন্তু মাথার সামনের দিকে হয়।
সাধারণ সাইনুসাইটিস দু’ এক সপ্তাহেই ঠিক হয়ে যায়। তার জন্য সিটি স্ক্যান, এন্ডোস্কোপি করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু যদি বারে বারে হয়, দীর্ঘদিন ধরে হয়, তবে অবশ্যয় চিকিৎসার জন্য একজন ই.এন.টি বিশেষজ্ঞকে দেখান এবং চিকিৎসকের মতামত নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন ও ভালো থাকুন।
Post a Comment