গুগল আর্থ দেখে হিমালয়ে নতুন হ্রদ আবিষ্কার করলেন ছয় যুবক

 


ODD বাংলা ডেস্ক: গুগ্‌ল আর্থ দেখে হিমালয়ে নতুন হ্রদ আবিষ্কার করলেন ছয় যুবক। রুদ্রপ্রয়াগে গাড়োয়াল হিমালয়ের খাঁজে লুকিয়ে ছিল নামহীন সেই হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুট উপরে দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে হ্রদটি খুঁজে বার করেছেন তারা। 

অভিষেক, আকাশ, দীপক, বিনয়, ললিত মোহন এবং অরবিন্দ- বসাই উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা, বয়স সবার ৩০ বছরের নিচে। পাহাড়ের নেশা তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। পাহাড় চড়তে গিয়েই বন্ধুত্ব। কোভিডের সময় ঘরে বসে বসেই গুগ্‌ল আর্থ ঘাঁটতেন আকাশ, অভিষেকরা। ছয় বন্ধু মিলে সেখানেই একটি নতুন হ্রদের সন্ধান পেয়ে যান। রুদ্রপ্রয়াগে এই হ্রদটির খোঁজের আগে কখনো জানা যায়নি। 


গত বছর জুলাই মাসে গুগ্‌ল আর্থে লুকোনো সেই হ্রদটির কথা জানতে পারেন তারা। তারপর বেশ কিছু দিন গুগ্‌লেই চলে ঘাঁটাঘাঁটি। ছয়জন সিদ্ধান্ত নেন নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে হ্রদটিকে খুঁজে বার করবেন তারা। এক বছরের প্রস্তুতির পর অবশেষে ২৭ আগস্ট শুরু হয় দুঃসাহসিক সেই অভিযান। ছয়জনের সেই অভিযাত্রী দলের নেতৃত্বে ছিলেন অভিষেক পানোয়ার। তার গ্রাম গৌন্দার থেকেই যাত্রা শুরু হয়। ১১ কিলোমিটার খাড়া পাহাড়ি পথ পেরিয়ে তারা প্রথমে পৌঁছন মদমহেশ্বর ধামে।



উত্তরাখণ্ডের পবিত্র শৈব তীর্থগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ধাম পঞ্চকেদারের অংশ। সেই মদমহেশ্বর ধামে বেস ক্যাম্প তৈরি করেন তারা। তারপর মদমহেশ্বর থেকে ছয়দিনের রুদ্ধশ্বাস অভিযান। অভিষেক জানান, হাড়-কাঁপানো ঠাণ্ডায় এই পর্বতারোহণ সহজ ছিল না একেবারেই। পথও চেনা নয়। তার মধ্যে বরফশীতল হাওয়া পোশাক ভেদ করে সারা শরীরে যেন সূচ ফোটাচ্ছিল। আবহাওয়াও খুব একটা অনুকূল ছিল না বলে জানিয়েছেন তারা। 


তার মাঝেই পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যান ছয়জন। ১ সেপ্টেম্বর ভোরে হ্রদের ঠিক কাছে পৌঁছে যান অভিষেক, আকাশরা। হ্রদটি দেখার পর নতুন আবিষ্কারের আনন্দে চোখে জল চলে আসে, সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন তরুণ অভিযাত্রীরা। হ্রদটির ধারে তারা ২৫ মিনিট কাটিয়েছেন। হ্রদটি কতটা লম্বা, কতটা চওড়া- সব খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তুলেছেন অজস্র ছবি আর ভিডিও।



অভিষেক বলেন, এই অভিযান আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবুজ উপত্যকার মাঝে ধবধবে সাদা হিমবাহ- দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছে। আমরা আশা করছি, আমাদের দেখাদেখি আরো অনেকে এই লেকে আসবেন। হ্রদটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। উত্তরাখণ্ড সরকারের পর্যটন দফতর অভিষেকদের এই নতুন হ্রদ আবিষ্কারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। 


হিমালয়ের বুকে গোপন হ্রদ বা অজানা উপত্যকা আবিষ্কার নতুন নয়। এর আগেও এমন চমকপ্রদ অভিযানের নজির রয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে অজানা হ্রদ খুঁজে বার করেছেন পর্বতারোহীরা। এই উত্তরাখণ্ডের ত্রিশূলেই রয়েছে রূপকুণ্ড হ্রদ। ১৬ হাজার ৪৭০ ফুট উচ্চতায় এই হ্রদের খোঁজ মিলেছিল ১৯৪২ সালে। হ্রদটির তলদেশে রয়েছে কয়েকশো নরকঙ্কাল, যা একে রহস্যময় করে তুলেছে।



২০১৩ সালে কাশ্মীরের দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে দুধপাথরি লেক আবিষ্কার করেন এক দল অভিযাত্রী। হ্রদটি এখন ট্রেকারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। 


২০২০ সালে উত্তরাখণ্ডের সেলা পাসের কাছে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় নতুন একটি হ্রদ খুঁজে পান এক দল অভিযাত্রী। কাচের মতো স্বচ্ছ সেই হ্রদের জল। হ্রদটি এক কিলোমিটার চওড়া, তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এই হ্রদের জল। নিকটবর্তী গ্রামে যারা থাকেন, তারা জানিয়েছিলেন, হ্রদটির অস্তিত্ব তারা আগে জানতেন না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.