ছকভাঙা পুজোর অন্যরকম গল্প, জোরকদমে মায়ের আবাহনের প্রস্তুতি হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের



 ODD বাংলা ডেস্ক: পুজো শুরুর কয়েক বছর ভবানীপুরে থাকলেও ১৯৪৫ সালে তা সরে আসে হাজরা পার্কে। প্রথম থেকেই এই পুজো অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। মায়ের মন্দিরে সবাই সমান, এই আদর্শকে সামনে রেখে হরিজন ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষরা সমান উৎসাহের সঙ্গে হাজরা পার্কের পুজোতে অংশগ্রহণ করতেন।


নিত্যনতুন ছকভাঙা ভাবনা সামনে এনে প্রতিবছর দর্শকদের চমকে দেয় হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব। এবারও চমক দিতে প্রস্তুত পুজো উদ্যোক্তারা। দক্ষিণ কলকাতার হাজরা পার্ক পুজো কমিটি প্রতিবছরই নজরকাড়া থিম নিয়ে আসে। এবছর তার ব্যতিক্রম নয়। ১৯৪২ সালে এই পুজোর পথ চলা শুরু কলকাতা পুরসভার হাত ধরে। তৎকালীন মেয়র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও সিইও সুভাষচন্দ্র বসুর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিল হাজরা পার্কের পুজো। 


পুজো শুরুর কয়েক বছর ভবানীপুরে থাকলেও ১৯৪৫ সালে তা সরে আসে হাজরা পার্কে। প্রথম থেকেই এই পুজো অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। মায়ের মন্দিরে সবাই সমান, এই আদর্শকে সামনে রেখে হরিজন ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষরা সমান উৎসাহের সঙ্গে হাজরা পার্কের পুজোতে অংশগ্রহণ করতেন। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। আজও পুজোর দিনগুলিতে এক হাজার হরিজনকে পাত পেড়ে খাওয়ানোর রেওয়াজ মেনে চলেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। 



হাজরা পার্কের পুজো প্রধান উপদেষ্টা তৃণমূল কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা ও কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। এশিয়ানেট বাংলার সঙ্গে কথা বলেন এই পুজোর জয়েন্ট সেক্রেটারি সায়ন দেব চট্টোপাধ্যায়।


৮০ বছরের ২০২২ সালের পুজোর থিম কী, এই প্রশ্নের উত্তরে সায়নদেব বলেন হিন্দু শাস্ত্রের সেই গহীন সত্যের কথা। সৃষ্টি তত্ব অনুযায়ী তান্ডব প্রতিদিন ঘটে চলে এই মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও। এ যেন এক নিরন্তর প্রক্রিয়া। মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্তরে ঘটে চলা পারমাণবিক অস্থিরতায় তৈরি হয় ধ্বংস ও সৃষ্টির আধার। 



হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির এবারের থিম মহাবিশ্বের সেই নিরন্তর প্রক্রিয়ার ভাবনায় তৈরি করা। থিমের নাম তান্ডব। পুজো উদ্যোক্তাদের মতে তান্ডব প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনের এক মূর্ত দলিল। থিমের মূল ভাবনায় রয়েছে তান্ডব, যা মূলত কোনও বিশেষ মুহুর্ত নয়। বরং এক অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। তার শৈল্পিক প্রয়োগই দেখা যাবে এবার হাজরা পার্কের পুজোমন্ডপে। থিমের কারিগর কৃশানু পাল। আলোকসজ্জার দায়িত্বে থাকছেন আশিস সাহা। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শব্দআবহ তৈরি করছেন আশু চক্রবর্তী। 


গত তিন বছর করোনার কবলে সারা বিশ্ব জর্জরিত। এই বছর কোথাও তাই একটু হলেও স্বস্তির শ্বাস পেয়েছে শহর কলকাতা। কারণ সেই অর্থে করোনার প্রকোপ যেমন নেই, তেমনই ভ্যাকসিনকে হাতিয়ার করে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনে বল পেয়েছে মানুষ। গত তিন বছরের শুধু হারানোর যন্ত্রণা ভুলে ২০২২ সালের দুর্গোৎসব মহামিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠুক, চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তবে অবশ্যই বিধি মেনে, সাবধানতা অবলম্বন করে। তবে সর্বাঙ্গীণ সার্থক হবে মায়ের আরাধনা। সেই লক্ষ্যেই পুজো প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব পুজো কমিটি।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.