কঠোর শাসনের মধ্যেও সংগীত জগত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পাকিস্তানী এই তরুণী
ODD বাংলা ডেস্ক: পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বালোচ উপজাতির র্যাপ গায়িকা ইভা বি। যিনি বোরকা পরে হিজাবে মুখ ঢেকে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে সংগীত দুনিয়ায়। বোরকায় সারাক্ষণই ঢাকা থাকলেও ইভার চোখে রয়েছে দৃঢ় সাহস আর গলায় সোচ্চার কণ্ঠস্বর।
অনলাইনে এই নারীরা র্যাপারের প্রচুর ভক্ত আছে। মুখ ঢেকে চলাফেরা করেন বলে কন্ঠ পরিচিত হলেও অনুসারীদের কাছে তার চেহারা অজানা। জনপ্রিয় প্লাটফর্ম কোক স্টুডিওতে এই বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া ‘কানা ইয়ারি’ নামের একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ইভা।
এখানে র্যাপ সংগীত গেয়েই রাতারাতি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ইউটিউবে এই গানটি ৭ মাসে ৩৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। মূলত ২০১৪ সাল থেকে গান গাওয়া শুরু করেন ইভা। সাধারণত পিতৃতান্ত্রিক কঠোর শাসনে পাকিস্তানি মেয়েরা জীবনযাপন করে থাকে।
এ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু হওয়ায় ইভার জীবন ছিল আরও কঠোর। এমনকি তিনি যে সমাজ থেকে উঠে এসেছে সেখানে খুব কম সংখ্যক নারী চাকরি করেন। এরকম একটি পরিবেশে বড় হওয়া ইভার র্যাপ গান গাওয়াকে তার সমাজ সহজভাবে নিতে পারেনি।
গানের ক্ষেত্রে তার প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকেই। পরিবারের মতে এই ধরনের সংগীত কোনো মেয়ের জন্য একদম বেমানান। এই সংগীতের সঙ্গে জরালে পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশে ইভার বিয়ে করতে সমস্যায় পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
একটা সময় পরিবার ও সমাজের সমালোচনার মুখে গান গাওয়া থামিয়ে দিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী এই গায়িকা। দীর্ঘ চার বছর ছিলেন গানের বাহিরে। তবে পরবর্তীতে তার ভাই এক শর্ত জুড়ে দেন, তাহলো বোরখা পরেই গাইতে হবে গান। আর সেই শর্ত মেনেই গানে ফিরেন ইভা।
নারীর হিজাব পরিধানকে প্রতিভা বিকাশে মোটেই বাধা মনে করেন না এই পাকিস্তানি নারী র্যাপার। এমন কি বোরকা পরেই র্যাপ গান গায়তেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
এই ব্যাপারে ইভা বলেন, আমি যদি বোরকা না পরে তবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। বোরকা শুধু আমার মুখ ঢেকে রাখে। এটি আমার প্রতিভাকে ঢেকে দিতে পারেনি। এখন হিজাবই আমার পরিচয়। যা ছোট পোশাকের দুনিয়ায় আমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
কম্পিউটারের একটি ফোল্ডারে মার্কিন র্যাপার এমিনেমের গান শুনে প্রথম বারের মতো র্যাপ গানের পরিচয় হয় ইভার। এই গান ভালো লেগে যায় ইভার। আর সেখান থেকেই র্যাপ গানের প্রতি তার ভালো লাগা তৈরি হয়।
বর্তমান সময়ের র্যাপ গান বেশ জনপ্রিয়। র্যাপারদের মিডিয়া জগতে সাধারণত আলাদা স্টাইলেই দেখা যায়। বড় আকারের টি-শার্ট, গলায় লম্বা চেইন, উজ্জ্বল রঙের ট্র্যাকসুট, স্নিকার্স, বড় ধরনের টুপি, নাম লেখা বেল্ট, হাতে একাধিক রিং থাকে এই ধরনের গায়কদের।
তবে দীর্ঘদিনের এই প্রচলিত রীতি ভেঙে বোরকা পড়ে গানের জগতে এগিয়ে চলছেন পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করা গায়কা ইভা। নিজের লক্ষ্যে অটুট ছিলের বলেই পরিবারে তার ভাই বিরধিতা করলেও সমর্থন পেয়ে ছিলেন মায়ের।
একটা সময়ে এসে ইভার অদম্য ইচ্ছা কাছে হার মানতে বাধ্য হয় পরিবার। তবুও তার গানের অনুশীলনের পথ সহজ ছিল না। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার কথা বলে রেকর্ডিংয়ে যেতে হতো। এছাড়া কোক স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং করার আগে রিহারসেল করা নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছিল তাকে। তখন বন্ধুর বিয়ের মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে রিহার্সাল চালিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে।
Post a Comment