ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন
ODD বাংলা ডেস্ক: চারদিকে বেজায় গরম। বর্ষাকাল চলে গেলেও বৃষ্টির দেখা এবছর খুব একটা মেলেনি। বরং গরমে নাজেহাল শহরবাসী। সূর্য যেন মাথার কাছে এসে খেলা করছে। ত্বকে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে সানস্ক্রিন লাগানোর কোনো বিকল্প নেই।
মেলানিন এক ধরনের রঞ্জক, যা আমাদের ত্বককে রঙিন করে, এবং ইউভি রশ্মি শুষে নিয়ে ত্বকের কোষদের সুরক্ষা দেয়। চিকিৎসকরা সবসময়ই বলে থাকেন শরীরকে খুব বেশি পরিমাণে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে না আনতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, অনেক মানুষই লম্বা সময় ধরে সূর্যস্নান করে। আশা করে, এতে করে তাদের গায়ের রঙ হয়ে উঠবে তামাটে। এভাবে নিজেদের বিপদ ডেকে আনে তারা।
আসলে যখন আমরা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসি, তখন শোষিত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি আরও বেশি মেলানিন উৎপাদনের মাধ্যমে ত্বকের মেলানোসাইটকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে। মেলানিন এক ধরনের রঞ্জক, যা আমাদের ত্বককে রঙিন করে এবং ইউভি রশ্মি শুষে নিয়ে ত্বকের কোষদের সুরক্ষা দেয়।
ত্বকের যত্নের প্রাথমিক শর্ত পরিচ্ছন্নতা
যেসব মানুষের ত্বক জন্মগতভাবেই শ্যামবর্ণ, গাঢ় শ্যামবর্ণ বা কালো, তাদের ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেশি। তাই তারা স্বভাবতই সূর্যরশ্মি থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু যারা তেমন নয়, খুব বেশি সময় ইউভি রশ্মির সান্নিধ্যে থাকার ফলে তাদের মেলানোসাইটের ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি এক পর্যায়ে মেলানোমা নামের এক ধরনের ত্বকের ক্যান্সারও সৃষ্টি হতে পারে।
এতো সমস্যার সমাধান দিতে পারে সানস্ক্রিন। এটি হলো এমন একটি আবরণ, যা ত্বকের ওপর লাগানো থাকলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়। সানস্ক্রিন ত্বককে শুধু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেই রক্ষা করে না, একইসঙ্গে ত্বকের গভীরে ধুলাবালি প্রবেশেও বাধা দেয়। এর ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখাও কমে যায়।
প্রখর সূর্যালোক আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আকাশ মেঘলা থাকলেও প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে ব্যবহার করতে হবে।বাইরে যাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে ত্বকের খোলা অংশে, বিশেষ করে হাত, পা, মুখমণ্ডল, গলা, ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটেও সানস্ক্রিন লিপবাম লাগিয়ে নিন। এতে আপনার ত্বক এসব ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। এবার সানস্ক্রিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে নিন:
সানস্ক্রিন
সানস্ক্রিন ত্বককে শুধু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেই রক্ষা করে না, একইসঙ্গে ত্বকের গভীরে ধুলাবালি প্রবেশেও বাধা দেয়
ত্বকের যত্নের প্রাথমিক শর্ত পরিচ্ছন্নতা। সানস্ক্রিন লাগানোর আগে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিন। মুখের ত্বক একটু যেন ভেজা ভেজা থাকে। সরাসরি সানস্ক্রিন মাখবেন না। সানস্ক্রিন মাখার আগে অল্প করে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন। এতে ত্বকে আদ্রতা বজায় থাকবে।
বাইরে বের হওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে যাবে ভালো। না হলে সূর্যের আলোতে বের হওয়ার পর সানস্ক্রিন ব্যবহারে কোনো লাভ নেই।
অনেকক্ষণ বাইরে থাকতে হলে ২/৩ ঘণ্টা পরপর পুনরায় ব্যবহার করুন। মেকআপ করতে চাইলে আগে সানব্লক লাগিয়ে নিন, তার ২০ মিনিট পর মেকআপ বা অন্য প্রসাধনী ব্যবহার করুন।
কিন্তু অনেকেরই আবার সানস্ক্রিন মাখলেই বাড়ছে ঘাম। এই সমস্যা দূর করার জন্য অনেকেই সানস্ক্রিন মাখাই ছেড়ে দেন। তবে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে দূর করা যায়।
রোদে বের হওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে সানস্ক্রিন মেখে নিন। প্রয়োজনে সানস্ক্রিন মেখে ফ্যানের হাওয়ায় মুখ শুকিয়ে নিন। তাহলে দেখবেন অসুবিধা হবে না। আর বাইরে বের হওয়ার পর একটা টিসু সঙ্গে রাখুন। তা দিয়ে হালকা করে ঘাম মুছে নিন।
সঠিক এফপিএফ দেখেই সানস্ক্রিন কিনুন। বেশি এসপিএফ মানেই ভাল, তা কিন্তু একেবারেই নয়। বরং আমাদের এখানের তাপমাত্রা অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৩৫ এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন হলেই কাজ চলে যাবে।
সানস্ক্রিনের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জল মিশিয়ে নিন। মিশিয়ে নিতে পারে গোলাপ জলও। তারপর শরীরের নানা অংশে লাগিয়ে নিন। জল শরীরের রোমকূপকে ঠান্ডা রাখবে, সানস্ক্রিনের মধ্যে থাকা রাসায়নিকের ঘনত্বকেও জল অনেকটা লঘু করে দেবে। ফলে ঘাম কম হবে।
ত্বকের প্রকৃতি তৈলাক্ত হলে খুব বেশি ঘাম হয়। সে ক্ষেত্রে সোয়েট ফ্রি কিংবা ম্যাটিফাইং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ব্যবহার করতে পারেন সানস্ক্রিন জেল বা স্প্রে। এতে ঘাম কম হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনও সানস্ক্রিন ৬ ঘণ্টাই কাজ করে, তাই ব্যাগে সানস্ক্রিন রাখুন। প্রয়োজনে মুখ ধুয়ে নিয়ে ফের মেখে নিতে পারেন। শুধু রোদে নয়, অনেকক্ষণ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করলেও, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
Post a Comment