উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তির উপায়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ব্যস্ত জীবনে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। পরিবার বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, সম্পর্কে অবনতি, অর্থনৈতিক সংকট, খারাপ স্বাস্থ্য-এসব বিভিন্ন কারণে আমরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকি। অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থেকেই আমাদের মধ্যে সংশয় ও উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।


উদ্বিগ্নতার ফলে আমাদের শরীরে এক ক্ষতিকর হরমোন নিঃসরিত হয়, যাকে বলা হয় কর্টিসোল। আর এ কর্টিসোলের মাত্রা শূন্য থাকে যখন আপনি হাসি-খুশি ও নিরুদ্বিগ্ন থাকেন। যখন আপনি উদ্বিগ্ন থাকেন কোনো কিছু নিয়ে তখন এ মাত্রা কখনো কখনো ৪০ ছাড়িয়ে যায়; যা মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাহলে কীভাবে উদ্বিগ্নতার বিরুদ্ধে জয়ী হবেন? বিখ্যাত লেখক ও থেরাপিস্ট এমি মরিন তার বেস্ট সেলিং বই ‘থার্টিন থিংস মেন্টালি স্ট্রং পিপল ডোন্ট ডু’-তে বলেছেন, মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষ কখনোই কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয় না। তিনি তার আরও উল্লেখ করেছেন, তোমার সঙ্গে যা কিছু ঘটে সেটা তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পার না; তবে সেই পরিস্থিতিতে তুমি কীভাবে তোমার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করছ এটা তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পার।


বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে নিজেকে বশে এনে সহজেই উদ্বিগ্ন মনোভাব কমিয়ে আনা যায়। উদ্বিগ্নতা কাটানোর সাত উপায়-


* ইচ্ছাশক্তি ও সদিচ্ছা

নিজের সঙ্গে নিজের চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে যে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। জীবন আপনাকে যেটাই ছুড়ে দিক না কেন সেটাকে শক্তভাবে মোকাবিলা করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে।


* বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া

মানুষের জীবন কখনো একই সরলরেখায় চলে না। কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় আমাদের জীবনে যা আমাদের যাপিত জীবনকে বদলে দেয়। আর তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সেই বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। কিন্তু বর্তমান জীবনকে হাসিমুখেই মেনে নিয়ে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নিজের মনকে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।


* ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা

নিউইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জেরেমি মরিসন বলেন, আপনি একটি বিষয়কে যতটা খারাপ বলে ভাবছেন সেটা ততটা খারাপ নাও হতে পারে। সেটা অদূর ভবিষ্যতে ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। তাই যে কোনো বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখার একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন।


* লিস্ট তৈরি করুন

আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, এমন কিছু বিষয়ের তালিকা তৈরি করুন। অনেক সময় দেখা যায়-বাইরে কিছু ঘটছে সেগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই; তারপরও সে বিষয়ে আপনি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই একটি শিশু আছে। শিশুরা স্ট্রেস নিতে চায় না, সে তার মতো মনের আনন্দে চলে। নিজের ভেতরের সেই শিশুটির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলুন। আর নিজের নিয়ন্ত্রণে যা নেই সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে যা কিছু নিয়ন্ত্রণে সেটাতে মনোনিবেশ করুন।


* পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা বাদ দিন

সব সময় সবকিছু মানিয়ে-গুছিয়ে একদম নির্ভুল হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। অথচ কোনো মানুষই একদম নির্ভুল হতে পারে না। সব সময়ই আমাকে সেরা পজিশন ধরে রাখতেই হবে, এ মনোভাব বাদ দিন। নিজেকে নিয়ে হালকা মেজাজে থাকুন, চাপ নেবেন না।


* মেডিটেশন ও ইয়োগা

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যারা নিয়মিত যোগাসন ও ধ্যান করেন, তারা নিজের মন ও শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি অদ্ভুত ক্ষমতা অর্জন করেন। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগব্যায়ামের চর্চা করুন। বিশেষ করে ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ উদ্বিগ্নতা কাটাতে দারুণ কার্যকর।


* প্রিয় মানুষ-বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটান

মার্কিন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা তাদের উদ্বিগ্নে ভোগা রোগীদের পরামর্শ দেন যে, এক কাপ কফি খান আপনার প্রিয় বন্ধু বা মানুষটির সঙ্গে। বিষয়টি আসলে চা বা কফি পান নয় বরং বিষয়টি হলো আপনার প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কিছু সময় কাটান, মনের কথা বলে কিছুটা ভার লাঘব করেন এবং দু’জনে মিলে প্রচুর হাসুন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.