বিয়ে এখন 'use and throw' হয়ে গেছে, স্বামী-স্ত্রীকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে লম্বা-চওড়া জ্ঞান আদালতের
ODD বাংলা ডেস্ক: বিবাহ বিচ্ছেদ মামলার শুনানির সময় একই একটা কড়া পর্যক্ষেণ কেরল হাইকোর্টের। এখানেই শেষ নয়, 'ইউস অ্যান্ড থ্রো' এই ভোক্তা সংস্কৃতি আধুনিক প্রজন্মেক বৈবাহিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে বলেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এ মোহম্মদ মুস্তার ও বিচারপতি সোফি থমাসের ডিভিশন বেঞ্চ।
তরুণ প্রজন্মের কাছে বদলে যাচ্ছে বিয়ের ধারনা। তাঁরা বিয়েকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটিকে তারা খুব একটা শ্রদ্ধাও করে না। একটি বিবাহ বিচ্ছেদ মামলার শুনানির সময় একই একটা কড়া পর্যক্ষেণ কেরল হাইকোর্টের। এখানেই শেষ নয়, 'ইউস অ্যান্ড থ্রো' এই ভোক্তা সংস্কৃতি আধুনিক প্রজন্মেক বৈবাহিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে বলেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এ মোহম্মদ মুস্তার ও বিচারপতি সোফি থমাসের ডিভিশন বেঞ্চ।
বিবাহ বিচ্ছেদ প্রত্যাক্ষাণ করার পারিবারিক আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আসাপুজার বাসিন্দা ৩৪ বছরের এক ব্যক্তির দায়ের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে কেরল হাইকোর্ট। নিষ্ঠুরতার কারণে এই ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক শেষ করে দিতে চেয়েছিল। আবেদনকারীর মতে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অপ্রতিরোধ্যভাবে ভেঙে গিয়েছে। তাই তিনি বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি চেয়েছেন। এই মামলার শুনানির সময় কেরল হাইকোর্ট বলে নতুন প্রজন্মের কাছে স্ত্রী শব্দের অর্থ হল 'সারা জীবনের জন্য ভয়কে আমন্ত্র জানান' (Worry Invited For Eve)। যদিও প্রাচীনকালে স্ত্রীর শব্দের অর্থ ছিল 'সারা জীবনের জন্য জ্ঞানবুদ্ধকে আমন্ত্রণ জানান' (Wise Investment For Ever) ।
যাইহোক আবেদনকারীর অভিযোগ ছিল তাঁর স্ত্রীর আচরণগত অস্বাভাবিকতা রয়েছে। অন্য মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। আর এই বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হত। আদালত বলেছে যে স্ত্রীর যখন তার স্বামীর সতীত্ব বা বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সন্দেহ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে এবং সে যদি তাকে প্রশ্ন করে বা তার সামনে তার গভীর বেদনা ও দুঃখ প্রকাশ করে, তখন এটিকে আচরণগত অস্বাভাবিকতা বলা যাবে না, কারণ এটি স্বাভাবিক। একজন স্বাভাবিক স্ত্রীর মানবিক আচরণ।
আদালত আরও বলেছে, কেরলা ঈশ্বরের নিজের দেশ হিসেবে পরিচিত। একটি সময় এই রাজ্য পারিবারিক বন্ধনের জন্য সুপরিচিত ছিল। একই সঙ্গে বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রবণতা ক্ষীণ বা স্বার্থপরতার কারণে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে লিভ ইন সম্পর্ক। নতুন কেরলে সন্তানদের কথা বিবেচনা না করেই বিয়ে ভেঙে দিতে তৎপর দম্পতি।
কেরল হাইকোর্ট আরও বলেছে এই জাতীয় পরিবারগুলি খুব হতাশাগ্রস্ত হয়। খুব তাড়াতাড়ি ধ্বংসের পথে চলে যায়। যা সামগ্রিকভাবে সমাজের বিবেককে ধ্বংস করে দিতে বাধ্য হয়। এজাতীয় পরিবারগুলি গোটা সমাজেই প্রভাব ফেলে। আদালত আরও বলেছে আইন আর ধর্ম কখনই বিবাহ প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করে না। পাশাপাশি বিয়ে ভাঙতে একতরফাভাবে কোনও রায় দিতে পারে না। আইন চায় বিয়ে টিকিয়ে রাখতে। সমাজও তাই চায় বলেও জানিয়েছে আদালত।
নিছক ঝগড়া, সাধারণ পরিধান, এবং বৈবাহিক সম্পর্কের ছিঁড়ে যাওয়া, বা কিছু মানসিক অনুভূতির নৈমিত্তিক বিস্ফোরণকে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য নিষ্ঠুরতা হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। এই মামলার ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, অন্য কোনো নারীর সঙ্গে স্বামীর অপবিত্র মৈত্রী পারিবারিক জীবনে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, যা তাদের তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে নির্বিঘ্নে চলছিল।আদালত আরও বলেছে একজন স্বামী বা স্ত্রী তাঁর সঙ্গীর বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করতেই পারে। সঙ্গীর উচিৎ অপরজনের উদ্বেগ দূর করা। এই বিষয়ে পরিবারের বাকি সদস্যদেরও এগিয়ে আসা জরুরি।
আদালত বলেছে "অনাদিকাল থেকেই বিবাহকে গম্ভীর বলে মনে করা হত, এবং বিবাহে একত্রিত পুরুষ এবং স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে সংযুক্ত পবিত্রতাকে অবিচ্ছেদ্য বলে মনে করা হত এবং এটি একটি শক্তিশালী সমাজের ভিত্তি ছিল। বিবাহ একটি সামাজিক বা আচারগতভাবে স্বীকৃত মিলন, বা আইনি চুক্তি। এই সম্পর্ক স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে তাদের অধিকার ও বাধ্যবাধতা প্রতিষ্ঠা করে। যা তাদের সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
Post a Comment