পাত্রীর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গেলে তিমি মাছের দাঁত দিতে হয় যাদের

ODD বাংলা ডেস্ক: দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দেশ ফিজি। এই এদেশের গ্রামগুলোতে সানগ্লাস এবং মাথায় হ্যাট বা টুপি পরা নিষিদ্ধ। কারণ সেখানে শুধু স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সানগ্লাস ও টুপি পরার অধিকার রাখেন।
 
তাদের মধ্যে উপহার দেয়ার সংস্কৃতি বেশ প্রচলিত। বিশেষ করে কিছু সম্প্রদায় আছে, যারা যে কোনো অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দিয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে খাবার। তার সঙ্গে দিয়ে থাকে ভার্গের কাপড় ও কাভা। কাভা হলো তাদের জাতীয় পানীয়। যা তৈরি করা হয় বিশেষ এক ধরনের উদ্ভিদের শেকড় দিয়ে। ফিজিয়ানদের বিয়ে রীতি হলো পাত্রী বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গেলে তিমি মাছের দাঁত দিতে হয়। তাদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো লোভ ফিস্ট। যা তৈরি করা হয় ভূগর্ভস্থ গরম চুল্লিতে।

প্রাচীন ফিজির লোকেরা কালো জাদুতে খুব পারদর্শী ছিল। বলা হয়ে থাকে, তারা আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পারত এবং আত্মাকে বশ করতে পারত। নরমাংসভক্ষণ প্রথা প্রথম চালু হয় ফিজিতে। খ্রিস্টধর্ম সূচনা হওয়ার আগপর্যন্ত দেশটিতে এই প্রথার প্রচলন ছিল। সব ফিজিয়ানরা বিশ্বাস করেন পাহাড়ের গুহায় দিঘী নামক একটি বৃহৎ সাপ এখনো অবস্থান করছে। তাদের ধারণা এর সর্গদেবতাই তাদেরকে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ফিজিয়ে এনেছিল।

শিক্ষা বাধ্যতামূলক না থাকলেও এখানে শিক্ষার হার অনেক বেশি। নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষই শিক্ষিত। তাদের জাতীয় খেলা হলো রাগবি। দেশটির জাতীয় রাগবিদল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অত্যন্ত সফল। দেশটির সবচেয়ে বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র হলো রাজধানী সুভা। শহরটিতে প্রায় ৮৮ হাজার লোক বাস করে। সুভা শুধুমাত্র ফিজির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়, বরং পুরো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। শহরটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পর্যটন অন্যতম। শুল্কমুক্ত কেনাকাটা ও ব্যতিক্রমী সব হোটেলের কারণে হাজার হাজার পর্যটক প্রতিবছর ফিজি ভ্রমণ করে থাকে। 

আধুনিক বহু গবেষণা মতে সূর্যোদয়ের দেশ হলো ফিজি। এখানে প্রতিদিন সবার আগে সূর্য ওঠে। ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন এ অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র আবাদ অঞ্চল হলো এটি। এই ডেট লাইনের পাশেই রয়েছে একটি মনোরম মসজিদ। এখান থেকেই প্রতিদিন পৃথিবীর সর্বপ্রথম আজান শোনা যায়। দেশটিতে ৪০ শতাংশ মানুষই ভারতীয়। তাই একে দ্বিতীয় ভারতীয় বলা হয়। তাদের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ও ফিজিয়ানের পাশাপাশি হিন্দি ও ব্যবহার করা হয়। ফিজিতে বসবাসরত আদিবাসীদের বলা হয় ক্যাভেতে। তাদের চেহারায় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার ছাপ বিদ্যমান। 

প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ফিজির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সচ্ছল। তাদের অর্থনৈতিক আয়ের মূল উৎস হলো ট্যুরিজম ও চিনির উৎপাদন। তবে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ও মৎস্য শিকারও এখানকার মানুষের আয়ের উৎস। তাদের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ১০ হাজার ডলার। ফিজিয়ান ডলারের মান অনেক। দেশে প্রচুর পরিমাণে নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। থাকা খাওয়া ও ভালো বেতনের পাশাপাশি ফিজির কাজের পরিবেশ ও চমৎকার।

১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেলেও ফিজি এখনও কমনওয়েলথের অংশ। যে কারণে ফিজির পতাকায় এখনও ইউনিয়ন জ্যাক দেখতে পাওয়া যায়। যা ইংল্যান্ডের পতাকার একটি নাম। এমনকি কাগজের টাকায় রানী ভিক্টোরিয়ার ছবি ব্যবহার করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.