আলেকজান্ডার কেন বাংলা আক্রমণ করতে ভয় পেয়েছিলেন?

ODD বাংলা ডেস্ক: মাত্র ২০ বছর বয়সে আলেকজান্ডার মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে বসেছিলেন। সমস্ত পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন ছিল তার। শাসক হওয়ার পর থেকেই আলেকজান্ডার তার পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে সম্ভাব্য শত্রুদের হত্যা করা শুরু করেন। ম্যাসিডোনিয়ার এক পূর্বতন রাজা চতুর্থ আমুনতাসকে হত্যা করা হয় তার নির্দেশে। তার বাবা দ্বিতীয় ফিলিপকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে হেরোমেনেস এবং আরহাবিয়াস নামের দুই অভিজাত ম্যাসিডোনিয়ানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ মারা যাওয়ায় সাম্রাজ্যের নানা জায়গায় বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, সেগুলোকে দমন করেন আলেকজান্ডার।
তারপর শুরু হয় পৃথিবী জয়ের অভিযান। ৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের বাহিনী হেলেস্পোন্ট পার করে। এশিয়ার মাটিতে একটি বল্লম ছুঁড়ে আলেকজান্ডার ঘোষণা করলেন, দেবতাদের থেকে তিনি এশিয়াকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে তিনি অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর পারস্য আক্রমণ করেন। যুদ্ধে পরাজিত হন পারস্যের সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুস। যুদ্ধে জিতে আলেকজান্ডার নিজেকে এশিয়ার অধিপতি ঘোষণা করলেন। একের পর এক রাজ্য দখল করতে করতে তিনি এগিয়ে আসেন ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে।

৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সৈন্যদের নিয়ে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করেন সম্রাট আলেকজান্ডার। এসে পৌঁছন পেশোয়ার অঞ্চলে। এখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে তিনি ক্রীতদাস বানান। আসাকেনীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা প্রবল পরাক্রমে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও শেষ পর্যন্ত গ্রিক বাহিনীকে ঠেকাতে পারেনি। নিসা শহরের অধিবাসীরাও আত্মসমর্পণ করে।

৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু নদী পার করে আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভারত ভূখণ্ডে পা রাখলেন। আশেপাশের সব রাজা ও গোষ্ঠীপ্রধানদের আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠানো হয়। তক্ষশিলার রাজা অম্ভি বিনা প্রতিরোধে আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করলেন। তবে সবাই ম্যাসিডোনিয়ার সম্রাটের পদানত হতে চায়নি। একের পর এক যুদ্ধ হয়। পুষ্কলাবতীর রাজা অষ্টক, অশ্বক জনগোষ্ঠী, রাভি নদীর উপকূলে ছড়িয়ে থাকার রাজ্যগুলোর শাসকেরা পরাজিত হলেন গ্রিক বাহিনীর কাছে। ঝিলামরাজ পুরু বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও হেরে যান। যুদ্ধের শেষে আহত পুরুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আলেকজান্ডারের কাছে। আলেকজান্ডার পুরুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি আমার থেকে কী ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করেন?’ পুরু উত্তর দিলেন, ‘একজন রাজার আরেকজন রাজার সঙ্গে যেরকম আচরণ করা উচিত, সেই রকম।’ এই জবাব শুনে পুরুকে মুক্তি দেন আলেকজান্ডার।

আলেকজান্ডারের সামনে তখন একটাই বাধা। পরাক্রমশালী রাজ্য গঙ্গারিডাই। প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত টলেমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনকার বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ছিল গঙ্গারিডাইয়ের অবস্থান। এক গ্রিক নাবিকের লেখা বই পেরিপ্লাস মারি ইরিথ্রিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে গঙ্গা নদী সংলগ্ন রাজ্য হল গঙ্গারিডাই। তিনি লিখেছিলেন যে গঙ্গার শেষ অংশ ‘গঙ্গারাইডেস’ (গঙ্গারিডাই)-এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ এখনকার বঙ্গভূমিই ছিল তখনকার গঙ্গারিডাই।

আলেকজান্ডার তার সৈন্যদের নিয়ে গঙ্গারিডাই আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা করেন। কিন্তু কোনো সেনাপতিই এই রাজ্য আক্রমণ করতে রাজি হলেন না। গ্রিক দূত মেগাস্তিনিস তার ইন্ডিকা বইতে জানিয়েছেন, গঙ্গারিডাই রাজ্যের বিশাল হাতিবাহিনী ছিল। এই বাহিনীর জন্য এরাজ্য কোনোদিন বিদেশিদের কাছে পরাজিত হয়নি। এদের হাতিবাহিনীর সংখ্যা ও শক্তিতে বাকি রাজ্যগুলো আতঙ্কিত থাকত।

ডিওডোরাস লিখেছেন, ভারতের সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে গঙ্গারিডাই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই গঙ্গারিডাই রাজার সুসজ্জিত ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত চার হাজার হাতিবাহিনীর কথা জানতে পেরে আলেকজান্ডার তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন না। এই গ্রিক সম্রাট আশঙ্কা করেছিলেন যে গঙ্গারিডাই আক্রমণের পরিণতি হবে ভয়াবহ। এমনিতেই আলেকজান্ডারের সৈন্যরা বছরের পর বছর যুদ্ধ করতে করে খুবই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা নিজেদের বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে ও জন্মভূমিতে ফিরতে হয়ে উঠেছিল উদ্গ্রীব। শেষ পর্যন্ত আলেকজান্ডার তার বাহিনীকে ম্যাসিডোনিয়া ফিরতে নির্দেশ দিলেন। বিপাশা নদী অবধি বিস্তৃত রইল তার সাম্রাজ্য।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.