আজ হারিয়ে যাচ্ছে আকাশ প্রদীপ



Odd বাংলা ডেস্ক: আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে কার্তিকের সংক্রান্তি পর্যন্ত একমাস ধরে প্রতি সন্ধ্যায় এই আকাশপ্রদীপ দেওয়ার রীতি এখনও দেখা যায়। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত সাহড়দা গ্রামে আজও গোপাল মেট্যা, প্রশান্ত ত্রিপাঠিদের মতো কিছু মানুষ টিমটিম করে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই লুপ্তপ্রায় প্রথাটিকে। মানুষের বিশ্বাস, এই আকাশবাতি অমঙ্গল এবং অতিপ্রাকৃত দুষ্ট শক্তিকে প্রতিহত করে থাকে।

সন্ধ্যের মুখে একটি লম্বা বাঁশের আগায় রাতভর একটি প্রদীপ বা লন্ঠন জ্বেলে রাখা হয়। মূলতঃ কেরোসিন বা রেঢ়ির তেলে জ্বালানো হয় এই প্রদীপ। কোথাও কোথাও নতুন কেনা মাটির হাঁড়ির মধ্যে প্রদীপ জ্বেলে দড়ি বেঁধে তা বাঁশের উপরে তুলে দেওয়া হয়। ঐ হাঁড়িটি বিশেষভাবে তৈরি করতে হয় কুমোরকে দিয়ে। হাঁড়ির ওপরের দিকে গায়ে বায়ু চলাচলের জন্য অনেক ছিদ্র রাখা হয়। আর একটা নতুন মাটির সরা চাপা দেওয়া হয় হাঁড়ির মুখে। মুখ খোলাও রাখেন অনেকেই।

কেউ কেউ অবশ্য চৌপল জ্বালিয়েও বাঁশের ডোগায় ঝুলিয়ে দেয়। অনেকটা ঠিক পতাকা তোলার মতো করে ঐ দীপদানকে বাঁশের আগায় ওঠানো এবং নামানো হয়। বাঁশের মাথায় গোল রিং করা থাকে। তার মধ্যে দড়ি ঢুকিয়ে দীপাধার ঝোলানো হয়। দড়ির অন্য প্রান্ত থাকে বাঁশের নিচ পর্যন্ত। সেখানে গৃহস্থ দড়ি টেনে ফের তা নিচে নামায় সকালে। আর যে বাঁশটি নেওয়া হয়, তা যেন ২৫ টি পাব বা গাঁটযুক্ত হয়। বাঁশঝাড় থেকে নতুন কেটে আনা ঐ বাঁশের আগার যতটা সম্ভব রাখা হয়।

বাড়ির মেয়ে বৌরা মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাড়িতে সন্ধ্যা দেখানোর সময় ঐ আকাশপ্রদীপ জ্বালায় এবং সে সময় তাঁরা মন্ত্রোচ্চারণ করে বলে, “দামোদরায় নভসি তুলায়াবে লোলয়া সহ প্রদীপন্তে / প্রযচ্ছামি নম অনন্তায় বেধসে”। অর্থাৎ কার্তিকমাসে লক্ষ্মীর সঙ্গে নারায়নকে আমি আকাশে প্রদীপ দিতেছি। বেধা বা বিধিকর্তাকে নমস্কার। এখানে ‘দামোদর’ হলেন নারায়ণ এবং ‘লোলয়া’ হলেন লক্ষ্মী। অর্থাৎ লক্ষ্মীনারায়ণের উদ্দেশ্যে দীপদান করার রীতি অনুরণিত হয়।

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.