যত গরু তত বিয়ে, সহিংসতাও গরু নিয়ে
ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীতে রয়েছে নানা জাতি। বিচিত্র তাদের ভাষা, বৈশিষ্ট্য ও বর্ণ। প্রত্যেক জাতির রয়েছে ভিন্ন রীতিনীতি। যেমন দক্ষিণ সুদানে বিয়েতে গরু আলাদা গুরুত্ব বহন করে। বিয়ের উপযুক্ত কেউ বিয়ে করতে চাইলে তার কাছে গরু থাকতে হবে। বিয়েতে মেয়ের বাবাকে সর্বনিম্ন পাঁচটি গরু উপহার দিতে হয়। আর কন্যা যদি রূপে-গুণে অনন্যা হন, তাহলে তো কথাই নেই। কমপক্ষে ১০ থেকে ২০টা গরু দিতে হয়। তাই যথেষ্ট পরিমাণে গরু থাকলে সমাজে আলাদা মর্যাদা ও প্রতিপত্তি পাওয়া যায়।
এমনও দেখা গেছে, কেউ কেউ ১০০ থেকে ২০০ গরু মেয়ের বাবাকে দিয়ে বিয়ে করছেন। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী যার যত গরু আছে, তিনি তত বেশি বিয়ে করতে পারবেন।
দক্ষিণ সুদানে যত সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, তার মূলেও রয়েছে এই গরু। নিজেদের মধ্যে প্রধান যুদ্ধ হয় গরু নিয়ে। এ কারণে নিজেদের চেয়েও তারা তাদের গরুরও বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকেন। কিছু কিছু সম্প্রদায় তাদের গরু পাহারার জন্য স্বয়ংক্রিয় ভারী অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন। বিরাট শিংয়ের জন্য এই গরুকে গবাদি পশুর রাজা বলে ডাকা হয়। সুদানি একেকটা গরু আট ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
দক্ষিণ সুদানের মানুষের জীবন-জীবিকা গরু লালন-পালনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ১ হাজার কিংবা ২ হাজার গরু যার আছে, তিনিই প্রভাবশালী। একটা বিয়ে করতে হলে কমপক্ষে পাঁচটা গরু থাকতে হবে। তবে অনেকে গরু জোগাড় করতে না পেরে সারাজীবন বিয়ে করতে পারে না। কেউ কেউ এজন্য গরু জোগাড়ে অবৈধপন্থা অবলম্বন করে। এরপর ১০০ গরু থাকলে আরেকটা বিবাহ করতে পারবেন। এভাবে ৫ থেকে ২০টা পর্যন্ত বিবাহ করেন। অনেকের ২ থেকে ৩ হাজার গরু রয়েছে। দক্ষিণ সুদানের রাস্তাগুলো কাঁচা। রাস্তাও খুব বেশি নেই। ৫০০ কিংবা ১ হাজার গরুর পাল নিয়ে প্রদেশ থেকে যখন গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সামনে ও পেছনে একে-৪৭ দিয়ে পাহারা দেওয়া হয়। গরুগুলো স্বর্ণের চেয়েও দামি সম্পদে পরিণত হয়েছে।
অধিক পরিমাণে মাংস আর দুধ দেওয়ার কারণে চোরা শিকারিদেরও প্রধান লক্ষ্য এই গরু। এই গরুর শিং আর চামড়াও বেশ লোভনীয়। সব মিলিয়ে এসব গরু ছিনিয়ে নিতে পারলেই উচ্চমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব। এ কারণে সংঘবদ্ধ চক্র রাস্তার পাশে জঙ্গলে ওত পেতে থাকে এবং সুযোগ বুঝে গোলাগুলি করে গরু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে কে হামলা করেছে, কোন গোত্রের মানুষ জড়িত, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রতিশোধ নেওয়া হয়। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ২০-৩০ জন মানুষকেও হত্যা করা হয়। এমনকি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
দক্ষিণ সুদানে গোত্র রয়েছে অনেকগুলো। প্রতিটি গোত্রকে শনাক্ত করার জন্য জন্মের পর শিশুদের শরীরে চিহ্ন দেওয়া হয়। এক গোত্র জন্মের পর শিশুর কপালে চিকন করে কেটে দেওয়া হয়। এই দাগ থেকে সে কোন গোত্রের সেটি শনাক্ত করা যায়। আরেক গোত্র দাঁতের ওপরের মাড়ির মাঝখানের দাঁতটি ফেলে দেয়। দাঁতের ঐ অংশ ফাঁকা থাকে। আরেকটি গোত্র জন্মের পর শিশুর শরীরে কুমিরের মতো দাগ করে দেয়। এসব চিহ্ন ধরে সে কোন গোত্রের তা সহজে শনাক্ত করতে পারে।
দক্ষিণ সুদানের মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান। একই সঙ্গে খুবই উগ্র ও স্পর্শকাতর। দক্ষিণ সুদানে দুটি জিনিস খুব সস্তা—অস্ত্র ও মদ। প্রায় প্রত্যেকের কাছে একে-৪৭ থাকে। তবে সেখানে পানির দাম খুবই বেশি। দক্ষিণ সুদানে প্রচুর সম্পদ আছে। তবে বাইরের কাউকে তাদের দেশের কেউ মাটি খুঁড়তে দেয় না। এমনকি ছবিও তুলতে দেয় না। খনন করলে ও ছবি তুললে দেশের সম্পদ বাইরের মানুষ জেনে যাবে—এমন ধারণা তাদের। সুদানবাসী বেশির ভাগ সময় গরু নিয়ে হানাহানিতে ব্যস্ত থাকে। সুদানবাসী মনে করে, তারা মারা যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর আবার জন্মায়। এ কারণে কেউ মৃত্যুকে পরোয়া করে না।
জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের পক্ষ থেকে জাতিগত সংঘাতপূর্ণ ওয়াও প্রদেশের টঞ্জ, ম্যাপেল ও কজেনা এলাকার বিপুলসংখ্যক নিরপরাধ জনগণের জীবন রক্ষা করার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। সেই এলাকার অনেক নারী ও শিশুর জীবন বেঁচে যায়। এ কারণে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মিশনের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান করেছেন।
Post a Comment