স্যাপিওসেক্সুয়াল: শারীরিক সৌন্দর্য নয়, বুদ্ধিমত্তায় গড়া সম্পর্ক
ODD বাংলা ডেস্ক: ‘রূপে তোমায় ভোলাব না’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক আগেই এ কথা বলেছিলেন। তবে বর্তমানে সৌন্দর্য, চেহারা দেখেই বেশিরভাগ পুরুষ তরুণীদের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু কিছু মানুষ সবসময়ই ব্যতিক্রম; যারা অপর মানুষকে পছন্দ করেন শুধু মাত্র অপরজনের মেধা বা বুদ্ধিমত্তার কারণে!
গত কয়েক বছর ধরে নতুন একটা শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে- স্যাপিওসেক্সুয়াল (Sapiosexual)। বাইসেক্সুয়াল, হোমোসেক্সুয়াল বা হেটেরোসেক্সুয়াল শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত। এখন স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যাপারটা কী? ওই যে বললাম, চেহারা নয়, বুদ্ধিতেই যখন ঘায়েল মন। সঙ্গীর বাকচাতুর্যেই মনে প্রেমের সুড়সুড়ি। সেখানে তার পোশাক, চেহারার গড়নটা জাস্ট সেকেন্ডারি ব্যাপার। মেধার টানেই যদি প্রেম জমে ওঠে তাহলে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি।
মাথায় বুদ্ধির হাওয়াবাতাস যত খেলবে, প্রেমও ততটাই জমাটি হবে। স্যাপিওসেক্সুয়ালরা আর পাঁচজনের থেকে একটু আলাদা। তাদের প্রেম বা যৌনতার মাপকাঠি হয় শুধু এবং শুধুই বুদ্ধিমত্তা। মস্তিষ্কের উৎকর্ষতাই আকর্ষণের কারণ। সঙ্গী ইনটেলিজেন্ট হলে তবেই মন উচাটন, না হলে সিম্পলি ‘প্রেমে পড়া বারণ’।
স্যাপিওসেক্সুয়ালদের প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় মস্তিষ্ককে ঘিরে। শারীরিক সৌন্দর্য বা সামাজিক অবস্থানের চেয়ে তাদের কাছে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় অপরদিকের মানুষটির বুদ্ধিমত্তা। অপরদিকের মানুষটির গভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহলী মনোভাব, প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার মানসিকতা তাদের প্রচণ্ড আকৃষ্ট করে। মনস্তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক আলোচনা থেকে তারা রসদ সংগ্রহ করেন, এবং মনে করেন কারো যৌন আকর্ষণ শরীরে নয়, বরং তার মেধায় লুকিয়ে থাকে।
আপনিও কি ‘স্যাপিওসেক্সুয়াল’? মিলিয়ে নিন নিচের বিষয়গুলোর সঙ্গে-
* স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা কখনোই হুট করে প্রেমে পড়েন না। যেহেতু শারীরিক সৌন্দর্য তাদের টানে না, তাই প্রেমে পড়তে তাদের সময় লাগে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে বন্ধুত্ব হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ও বৌদ্ধিক সংযোগ হলে তবেই আসে প্রেমের প্রশ্ন।
* স্যাপিওসেক্সুয়ালদের সব সম্পর্কই শুরু হয় বন্ধুত্ব দিয়ে, সেখানে প্রেমের ছিটেফোঁটাও থাকে না। তাই যখন আপনার মনে প্লেটোনিক স্তর পেরিয়ে প্রেমের সূত্রপাত হয়, তখন আপনার বন্ধুও একইরকম ভাবছেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। ফলে বন্ধুকে মনের কথা বলবেন কি বলবেন না, তা নিয়ে আপনার মনে সংশয় তৈরি হয়।
* মেধা বা বুদ্ধির আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি হলেও শারীরিক আকর্ষণ যে একেবারেই নেই, তা নয়। কিন্তু স্যাপিওদের কাছে শারীরিক আকর্ষণটা খুবই সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য কখনোই চেহারাটা বড়ো হয়ে দাঁড়ায় না তাদের কাছে।
* স্যাপিওদের কাউকে পছন্দ মানে সত্যিই পছন্দ। এর একটা কারণ স্যাপিওদের সহজে কাউকে পছন্দ হয় না, অনেকটা সময় লাগে। উলটোদিকের মানুষটার সঙ্গে মেধা ও বৌদ্ধিকভাবে সংযোগ স্থাপনের পরই আসে তাকে ভালোলাগার প্রশ্ন। ফলে যখন কাউকে তাদের ভালো লাগে, তখন সেটা বেশ সিরিয়াসই হয়।
* যারা অতিরিক্ত চিৎকার, মেজাজ দেখানো, কিংবা বোকামী করে তারা দু’চক্ষের বিষ। যারা নিজেদের অনুভূতিকে যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারেন, যারা চট করে মেজাজ হারান না, জটিল পরিস্থিতিকেও শান্তভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেন, সেরকম মানুষকেই পছন্দ করেন স্যাপিওরা।
* খুব বেশি মানুষের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা হয় না সচরাচর। প্রেমের সংখ্যাও আপনার খুবই কম। সাধারণত নিজের ছোট বৃত্তেই থাকতে পছন্দ করেন আপনি। তাই আশপাশের অনেকেই আপনাকে অহঙ্কারী বলে ভুল করেন। তাতে আপনার মোটেই বিচলিত হওয়ার কারণ নেই, নিজের পছন্দ আর ধ্যানধারণায় স্থির থাকুন।
Post a Comment