উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণে যা করবেন

ODD বাংলা ডেস্ক: পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে কে না খুশি হয়ে থাকতে পারে বলুন তো? ছোট্ট একটা শিশু কতো সহজে বদলে দেয় আমাদের রোজকার জীবন, রঙ্গীন করে তোলে আমাদের পৃথিবী। তাই মায়ের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানও যাতে সুস্থ থাকে, সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখে আমরা সবসময় তাই চাই। মাতৃত্ব জীবনের এমন এক অনুভূতি যাতে হাসি-কান্না, যন্ত্রণা-ভালোলাগার মতো বিপরীত সব অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। অনেক সময় কিছু কিছু বিশেষ কারণে প্রেগন্যান্সি হয়ে ওঠে হাই রিস্ক। যাতে করে মা ও শিশু দুজনেরই মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়তে থাকে। কিছু কিছু জটিলতা এড়ানো যায় না ঠিকই কিন্তু তারপরও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তায় রিস্ক কমিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সি আনা সম্ভব। উন্নত টেকনোলজি এখন মা ও সন্তানের যত্ন নিতে তৎপর এটা আমাদের সৌভাগ্য। কি কি কারণে এবং কেন প্রেগন্যান্সি হয়ে ওঠে হাই রিস্কের চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

কেন উচ্চ ঝুঁকি?

১. মায়ের বয়স যদি ১৮ বছরের কম কিংবা ৩৫ বছরের বেশি হয়ে থাকে। 

২. পূর্বের গর্ভধারণে কোনো জটিলতা থাকলে।

৩. গর্ভাবস্থার তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে রক্তক্ষরণ হলে। 

৪. পাঁচবারের বেশি গর্ভবতী হয়ে থাকলে। 

৫. জরায়ুতে যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে। 

৬. রক্তের আর এইচ ফ্যাক্টরের কোনো সমস্যা থাকলে।

৭. উচ্চ রক্তচাপ।

৮. হার্টের অসুখ।

৯. গর্ভাবস্থায় ডায়েবেটিস। 

১০. প্রস্রাব বা কিডনিতে ইনফেকশন।

১১. অ্যাজমা বা টিউবারকুলেটিসের মতো কোনো অসুখ। 

১২. চিকেন পক্স, হেপাটাইটিস।

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ সমস্যা সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য

উচ্চ রক্তচাপ  : মা যদি গর্ভধারণ করার আগে থেকেই দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন তাহলে গর্ভাবস্থায় তার সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে প্লাসেন্টাতে রক্ত প্রবাহ কম হয়। ফলে বাচ্চার অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। গর্ভে বাচ্চার বিকাশ ব্যাহত হয়, সময়ের আগেই ডেলিভারির আশঙ্কা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে জরায়ু থেকে প্লাসেন্টা অপরিণত অবস্থায় আলাদা হয়ে যেতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। তাই গর্ভবতীর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে, সেক্ষেত্রে খুব কড়া নজর রাখতে হবে যাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভ্রুনের বিকাশ যাতে ঠিকভাবে হয়। গর্ভাবস্থায় প্রায় ৫-৮% নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়।

অ্যানিমিয়া : বংশগতভাবে যদি অ্যানিমিয়া থাকে যেমন : সিকিল সেল ডিজিজ, হিমোগ্লোবিন এস সি ডিজিজ এবং থ্যালাসেমিয়া থাকলে তা গর্ভ-ঝুঁকি বাড়ায়। ডেলিভারির আগে রুটিন রক্ত পরীক্ষা করা হয় হিমোগ্লোবিনে কোনো অস্বাভিকতা আছে কিনা তা দেখার জন্য। যেসব নারীদের সিকল সেল ডিজিজ রয়েছে প্রেগন্যান্সির সময় তাদের ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

জন্ডিস : জন্ডিস গর্ভাবস্থায় খুবই বিপদজনক। জন্ডিসে লিভার খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঠিকমতো জন্ডিসের চিকিৎসা না করালে ব্লিডিং ডিজঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। এর থেকে হেপাটিক ফেলিওর, হেপাটিক কোমা হতে পারে, যাতে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যু হতে পারে। জন্ডিস ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভবতীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে, যেখানে সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে।

অ্যাজমা : যেসব নারীর অ্যাজমা আছে তারা গর্ভবতী হলে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে চেকআপ করানো উচিত।

ফাইব্রয়েড ও অভারিয়ান সিস্ট : এগুলো থাকলে সময়ের আগেই ডেলিভারি, ভ্রূণের বিকাশ কম হওয়া, এমনকি মিসকারেজ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় এগুলোর সঠিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস পূর্বে ছিল না কিন্তু গর্ভাবস্থায় হয়েছে একে বলে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস। গর্ভাবস্থায় হরমোন নিঃসরণের জন্য শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন কম হয়। ৭% গর্ভবতী নারীদের এই সমস্যা হয়। শিশু জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে এই ডায়াবেটিস চলে যায়। এই রোগের প্রতিকার হিসেবে নিয়মিত ব্যায়াম, স্পেশাল ডায়েট, গ্লুকোজ মনিটরিং, ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়।

হার্টের অসুখ : যাদের হার্টের ভাল্ব সংক্রান্ত ডিজঅর্ডার কিংবা জন্ম থেকেই হার্টের অসুখ আছে তারাও সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় যেহেতু হার্টের উপর চাপ বেশি থাকে তাই এই সময় হার্ট ফেলিওর হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। ভ্রূণের ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে প্রি ম্যাচিওর বেবিও হতে পারে।

অন্যান্য অসুখ : চিকেন পক্স, মিজলস, ভাইরাল ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করান।

গর্ভাবস্থায় মেনে চলুন 

১. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। 

২. কফি, জাঙ্ক ফুড, ধূমপান এড়িয়ে চলুন। 

৩. মানসিক চাপ কমান। 

৪. রং বা ঘর পরিষ্কারের জিনিস থেকে দূরে থাকুন। 

৫. স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলুন।

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ নারীদের নিয়মিত চেকআপ, আল্ট্রাসাউন্ড মনিটরিং, গ্লুকোজ মনিটরিং, রক্তচাপ এবং ভ্রূণের মনিটরিং পরীক্ষা করা উচিত। এতে বাচ্চা ও মায়ের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে মাতৃত্ব হয়ে ওঠে স্বাভাবিক, আনন্দময় অভিজ্ঞতার।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.