সত্যিই কি তাজমহলে আছে গুপ্তধন?

ODD বাংলা ডেস্ক: তাজের গম্বুজ তৈরি করতে তুরস্ক থেকে এসেছিলেন উস্তাদ ইসমাইল খান। গম্বুজ ও মিনারের মাথায় বসানো ধাতব অংশ তৈরির দায়িত্বে ছিলেন লাহৌরের কাজিম খান। তাজের গায়ে বসানো দামি পাথরে ক্যালিগ্রাফি করেন ইরানের শিল্পী আমানত খান। উজবেকিস্তানের বুখারার মহম্মদ হানিফা ছিলেন ভিত্তি আর মূল স্থাপত্যের পাথরগুলো নিঁখুত মাপে কাটার দায়িত্বে।

এমন ‘আন্তর্জাতিক উদ্যোগে’ সামিল ছিলেন তৎকালীন ভারতের শ্রেষ্ঠ মোজাইক শিল্পী দিল্লির চিরঞ্জিলালও। প্রায় দুদশক ধরে চলা নির্মাণের কাজের দৈনন্দিন হিসাবনিকেশ দেখাশোনা করতেন শাহজহানের বিশ্বস্ত ইরানি কর্মী মির আব্দুল করিম।

তাজের জন্য রেড স্যান্ডস্টোন এসেছিল জয়পুর থেকে। রাজস্থানেরই মকরানা এবং বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল শ্বেতপাথর (মার্বেল)। ক্যালিগ্রাফিতে ব্যাবহৃত পাথরের মধ্যে চিন থেকে জেড, তুর্কিস্তান থেকে ক্রিস্টাল, তিব্বত থেকে টার্কোয়েজ, আরাকান (মায়ানমার) থেকে হলুদ অ্যাম্বার, মিশর থেকে ক্রিয়োলাইট এসেছিল। আফগানিস্তানের বদখ্‌শান থেকে আসে নীল লাপিস-লাজুলি।

মমতাজ মহলের সমাধিসৌধ তাজমহলে নাকি বহু ঘর তৈরি করেছিলেন শাহজহান। তার মধ্যে মূল সামধিমন্দিরের তলায় থাকা ২২টি ঘর নাকি লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গিয়েছে বহুকাল ধরেই।

তাজ দর্শনের সময় প্রধান হলঘরের মার্বেলের জাফরির ভিতর দিয়ে দুটি কবর দেখা যায়। সেগুলো আসল নয়। হলঘরে ঢোকার মুখে একটি সিঁড়ি নিচে নেমে গিয়েছে। তার দরজা বন্ধ। আসল কবর দুটি সেখানেই রয়েছে বলেই ইতিহাসবিদদের একাংশ বলে থাকেন।

তুর্কি ও মুঘল স্থাপত্যে নকল সমাধির একাধিক উদাহরণ রয়েছে। দিল্লিতে ইলতুৎমিস এবং আগরায় আকবরের সমাধিও এমনই নিদর্শন। সেখানে মূল দেহাবশেষ রাখা লোকচক্ষুর অন্তরালে।

তাজের উত্তর দিকে লাল স্যান্ডস্টোনের বড় প্ল্যাটফর্ম থেকে দুটি সিঁড়ি নেমে গিয়েছে নিচে। সেখানে আছে ১৭টি কুঠুরি। সেগুলো বন্ধ। এর নিচে রয়েছে একটি অলিন্দ। সেই অলিন্দ ঘুরে গিয়ে পৌঁছেছে মূল সমাধিস্থলের নিচে।

ওই অলিন্দের নিচে চোরাকুঠুরির জল্পনার কথা উল্লিখিত রয়েছে ব্রিটিশ জমানার একটি নথিতে। ঘটনাচক্রে, ওই অলিন্দে আলো-বাতাস ঢোকার পথও তেমনভাবে রাখা হয়নি। ওই জল্পনাই সম্ভবত পরে তাজের তলায় গোপন গুপ্তধনের অস্তিত্বের দিকে মোড় নিয়েছিল।

যুক্তিবাদীদের মতে, পাথরের তৈরি ঘরগুলোতে বেশি মানুষজনের ভিড় হলে তাদের নিশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মূল কাঠামোর শ্বেতপাথরের ক্ষতি হতে পারে। সে কারণেই ওই ঘরগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

তাজের মূল ফটক এবং সমাধিসৌধের খিলানের চারপাশে কোরানের বাণীর ক্যালিগ্রাফিতে রয়েছে এক অসাধারণ বৈজ্ঞানিক নৈপুণ্য। সাধারণভাবে চোখের সামনের অক্ষর বড় এবং দূরের অক্ষর ছোট দেখায়। কিন্তু এখানে অক্ষরের আকার ধীরে ধীরে নিচ থেকে উপরে বাড়ানো হয়েছে। ফলে নিচে দাঁড়িয়ে দেখলেও সব অক্ষর সমান আকৃতির লাগে।

তাজের মোহমুক্ত হতে পারেননি ‘কৃপণতম সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেবও। বাবার বেহিসেবি খরচের সমালোচক হলেও নিজের স্ত্রী দিনরাজ বানু বেগমের মৃত্যুর পরে মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদে তাজের অনুকরণে বানিয়েছিলেন ‘বিবি কা মকবরা’।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.