যে দেশের মায়েরা পুতুল সন্তান লালন-পালন করেন

ODD বাংলা ডেস্ক: দোলনায় নরম তুলতুলে বিছানায় শুয়ে রয়েছে এক ছোট্ট শিশু। কাছ থেকেও দেখলে বুঝতে পারবেন না, আসলে এটি একটি পুতুল। হুবহু নবজাতক শিশুর মতো দেখতে। আর সেই শিশু পুতুলকেই অত্যন্ত আদর-স্নেহে লালন পালন করেন পোল্যান্ডের নারীরা। তবে সব নারীরা নন, কিছু কিছু নারীরা যাদের সত্যিই এই পুতুলশিশু গুলোর প্রয়োজন রয়েছে। এই শিশু পুতুলের গল্পের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে করুণ কাহিনী।

পোল্যান্ডের এসব পুতুলকে বলা হয় ‘রিবর্ন ডল’। বাংলায় বলা যেতে পারে পুনর্জন্মপ্রাপ্ত পুতুল। এগুলো এতোটাই নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয় যে, যে কেউ বাস্তবের শিশু ভেবে ভুল করবেন। এই পুতুলগুলোকে ব্যবহার করা হয় শিশু সন্তানের বিকল্প হিসেবে। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয় এই পুতুলগুলো বানানো। পুতুলগুলো এমন ভাবে বানানো হয়, দেখতে যাতে মনে হয় হুবহু এক মানব শিশুর মতো।

পোল্যান্ডে এই বিশেষ শিশুপুতুল গুলোর দাম ২০ ডলার থেকে প্রায় ২২ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুতুল গুলো তৈরি হয় ভিনাইল দিয়ে। এছাড়াও থাকে শিল্পীর সূক্ষ্ম কাজের পরিচয়। পোল্যান্ডে এই পুতুলগুলোকে তুলনা করা হয় মানব শিশুর সঙ্গে।

পোল্যান্ডের বাজারে শিশু পুতুল গুলোর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। যারা নানারকম পুতুল সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন, সেই সংগ্রাহকরা এগুলো কেনেন। এছাড়াও জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা পরিসেবার ক্ষেত্রে অথবা ধাত্রীদের স্কুলে পুতুল গুলোকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অনেক মানুষের কাছে এই শিশু পুতুলগুলো অনেকাংশে থেরাপির মতো কাজ করে।

বিশেষ করে যে মায়েদের বাচ্চা মারা গেছে কিংবা মিসক্যারেজ হয়েছে, তাদের দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা কাটাতে এই শিশু পুতুল অত্যন্ত উপযোগী। এমনও অনেকে আছেন, যারা নিজেদের সদ্যোজাত বাচ্চা হারানোর পর সেই মানসিক ধকল সামলাতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কাজ করেনা মনোচিকিৎসা, কিন্তু এই শিশু পুতুলগুলো মানসিক ক্ষেত্রে অনেক প্রশান্তি আনে।

অনেক নারীই শিশু পুতুল গুলোকে নিজের বাড়িতে রেখে সন্তানের মতোই লালন-পালন করেন। শিশু পুতুল গুলোর জন্য থাকে আলাদা পোশাক, আলাদা শোয়ার জায়গা এমনকি দোলনা পর্যন্ত। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে পুতুলের জামা কাপড় পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। অনেকেই এইভাবে আস্তে আস্তে নিজেদের বাচ্চা হারানোর ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসেন। তখন আর শিশু পুতুল গুলোর কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.