‘ব্লু ফিল্মের’ যৌনদৃশ্যে অন্যের শরীরে বসানো হচ্ছে তারকাদের মুখ!

ODD বাংলা ডেস্ক: মুখচোখ, হাবভাব থেকে কণ্ঠস্বর— সবই তারকার। নীল ছবি অর্থাৎ ব্লু ফিল্মে তার যৌনদৃশ্য উপভোগ করছেন দর্শক। যদিও সে সব যৌনদৃশ্য আদতে কোনও তারকার নয়।

‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির সাহায্যে নীল ছবির বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শরীরে সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে তারকাদের মুখ। বদলে যাচ্ছে হাবভাব থেকে চলনবলন— সবই হুবহু খ্যাতনামীদের। এ সবই ‘ডিপফেকে’র কেরামতি। নীল ছবির দর্শকদের অনুরোধেই নাকি এমনটা করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্ন ছবির দুনিয়ায় ‘ডিপফেকে’র হাত ধরে ‘তারকাদের সেক্স টেপ’-এর রমরমা চলছে। দর্শকদের মধ্যে তা দেখার প্রবণতাও বাড়ছে। আশঙ্কার কথা, এ বার তারকাদের ছেড়ে ‘ডিপফেকে’র শিকার হতে পারেন ভিড়ে মিশে থাকা আমজনতা। এমনকি আপনিও।

যে ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে মুনাফা কামাচ্ছে অসংখ্য পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট, তা কিন্তু সাম্প্রতিক কালের নয়। নব্বইয়ের দশক থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই প্রযুক্তিতে শান দেওয়া শুরু হয়েছিল। কালে কালে তার ধার বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও এর শিকার হয়েছেন। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দুনিয়ায় এর ব্যবহার হরহামেশাই করা হচ্ছে।

সহজ ভাবে বলা যায়, ‘ডিপ লার্নিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সমস্ত ‘ফেক’ (ভুয়া) ভিডিও তৈরি করা হয়, সেটি হল ‘ডিপফেক’। কারও মুখের অভিব্যক্তি খুঁটিয়ে পড়ে ফেলতে পারে এটি। কণ্ঠস্বরও চিনে নিতে পারে। সে সমস্ত বিশ্লেষণ করে তা অন্য কারও মুখে বসিয়ে দেয়।

বিবিসি জানায়, ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল মুনাফা কামাচ্ছে বহু পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট। এমনই একটি ওয়েবসাইটে নাকি প্রতি মাসে ঢুকছেন ১.৩ কোটিরও বেশি লোকজন।

যদিও ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির ধারালো হওয়ায় আরো একটি আশঙ্কা বাড়ছে। তারকার মুখ ছাড়াও পর্ন ছবিতে ব্যবহার করা হতে পারে সাধারণের মুখও।

বিবিসির এক তথ্যচিত্রে এমনই আশঙ্কার কথা শোনানো হয়েছে। নীল ছবিতে ‘ডিপফেকে’র যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে ‘ডিপফেক পর্ন: কুড ইউ বি নেক্সট?’ নামে ওই তথ্যচিত্রে। সেই সঙ্গে দর্শকদের ভয়ের কথা শুনিয়েছে ওই তথ্যচিত্রটি। তারকাদের ‘শিকারে’র পর এ বার আমজনতাকেও নিশানা করতে পারে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি!

ওই তথ্যচিত্রের দাবি, পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের দেখানো ‘সেক্স টেপে’ কোন তারকার মুখ দেখতে চান, সে অনুরোধ করতে পারেন দর্শকেরা। তথ্যচিত্রের উপস্থাপক জেস ডেভিসকে এমন বহু ‘ডিপফেক’ ওয়েবসাইটের সুলুকসন্ধান দিয়েছেন এর সাংবাদিক জেনিফার স্যাভিন।

এ হেন সাইটগুলিতে কোন তারকার চাহিদা বেশি? সংবাদমাধ্যমে জেনিফার বলেন, ‘‘দুনিয়াজোড়া বহু তারকাই রয়েছে। তবে দর্শকদের অনুরোধে বেশ কয়েকটি নাম বার বারই ঘুরেফিরে আসে।’’ যদিও তাদের নাম খোলসা করেননি জেনিফার।

এ ধরনের প্রবণতা যে বাড়ছে তার উদাহরণও দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, একটি জনপ্রিয় পর্ন সাইটে আড়াই লক্ষ সদস্য নিজেদের পছন্দের তারকাদের ‘সেক্স টেপ’ দেখার অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের চাহিদা মেটাতে ‘ডিপফেকে’র হাত ধরেন পর্ন সাইটের মালিকেরা।

বিবিসির তথ্যচিত্রে এমনই এক জনপ্রিয় পর্ন সাইটের মালিক মুখ খুলেছেন। যদিও নিজের নামপরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি। তার কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের সাইটে এ ধরনের ২০ হাজারেরও বেশি ভুয়া পর্ন ভিডিও রয়েছে।’’ যদিও ওই সাইটটিতে কেবল মাত্র তারকাদের ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়।

‘ডিপফেকে’র ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ওই আমেরিকান সাইটের মালিক। তার দাবি, ‘‘এই প্রযুক্তি আরো উন্নত হবে। তখন আসল-নকল ভিডিওর ফারাক বোঝাটা সহজ হবে না। ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসবে, যখন আমাদের মধ্যে যে কেউ ডিপফেকের শিকার হবে।’’

তারকার মুখের বদলে শীঘ্রই হয়তো সাধারণ মানুষের মুখ বসানো হতে পারে। পর্ন ছবিতে যা দেখে ফেলতে পারেন অগণিত মানুষ। এই বিপদ সত্ত্বেও নিজের যুক্তিতে অটল ওই সাইটের মালিক।

তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, একে আসল ভিডিও বলে না চালালেই হল। এ নিয়ে তারকার অনুমতিরও প্রয়োজন নেই। এটা তো সবই কাল্পনিক। বাস্তব নয়!’’

ভুয়া ‘সেক্স টেপে’ তারকাদের মুখ যথেচ্ছ ব্যবহারে ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হলেও তা বেআইনি নয়। যদি না কেউ এটা প্রমাণ করতে পারেন যে বদনাম করার জন্যই এমনটা করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.