কেবল শ্রীলঙ্কা নয়, ভারতের এইসব মন্দিরে পূজিত হন রাবণ!

ODD বাংলা ডেস্ক:  পুরাণে আছে, রাবণ একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে শিল্পী, একজন দক্ষ জ্যোতিষী এবং একজন বীর যোদ্ধা। আর নিজের কৃতকর্মের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করার গুণও ছিল তাঁর মধ্যে। এই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছেন তাঁর বহু ভক্ত।  আর তাঁদের উদ্যোগেই তাঁর স্মৃতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয়েছে  মন্দিরও।

বৈজনাথ মন্দির, হিমাচল প্রদেশ
হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলায় এই মন্দিরটি অবশ্য রাবণের নয়, এটি একটি শিবের মন্দির। কেউ কেউ বলেন,  দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। কিছু পৌরাণিক কাহিনি মতে, এই অঞ্চলে রাবণ দীর্ঘদিন শিবের তপস্যা করেছিলেন এবং পরবর্তী কালে এই স্থানে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। আবার অন্য কিছু কাহিনি অনুসারে, লঙ্কারাজ রাবণ একটি দুষ্প্রাপ্য শিবমূর্তি নিয়ে এই স্থান দিয়ে তাঁর রাজ্য লঙ্কায় ফিরছিলেন। তখনই বিভিন্ন দেবতা তাঁকে ছলনা করে ওই স্থানে শিবমূর্তিটি নামিয়ে রাখতে বাধ্য করেন। কিন্তু নামানোর পরে রাবণ মূর্তিটি ওই স্থান থেকে আর সরাতে পারেননি। মন্দিরময় বৈজনাথ পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। এখান থেকে ধৌলাধার পর্বতশ্রেণি দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়।

দশানন মন্দির, কানপুর, উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের কানপুরে কিন্তু সত্যিই রাবণের কিছু ভক্ত রয়েছেন। এবং এই সব অঞ্চলে দশেরার দিনে রাবণের আরাধনা করা হয়। কানপুরের শিভালা অঞ্চলে একটি ১২০ বছরেরও প্রাচীন রাবণমন্দির আছে, যেখানে উচ্চারিত হয় ‘রাবণ বাবা নমোহ’। দশেরার মতো দিনে এই মন্দিরে ভক্তদের যে লাইন পড়ে তা দেখার মতো।

রাবণ মন্দির, বিশরাখ, উত্তরপ্রদেশ
পৌরাণিক কাহিনি মতে, উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার কাছে এই বিশ্রাখ আসলে রাবণের জন্মস্থান। কথিত আছে, রাবণের বাবা ঋষি বিশ্রবাসের নাম অনুযায়ী এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়, এবং পরে লোকমুখে নামটি বিশ্রাখ হয়ে যায়। বলা হয়, এই অঞ্চলে বিশ্রবাস এবং তাঁর পুত্র রাবণ একটি শিবলিঙ্গের আরাধনা করেছিলেন। প্রায় ১০০ বছর আগে, এই স্থানে একটি শিবলিঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায় এবং মানুষ বিশ্বাস করেন এই সেই লিঙ্গ যার আরাধনা করতেন দশানন রাবণ এবং তাঁর পিতা। নবরাত্রির সময় এখানে এলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। দেখবেন কোনো রামলীলা বা দশেরা পালন করা হচ্ছে না। তবে বাজি পুড়িয়ে যথাবিহিত সম্মান জানানো দেবাদিদেব শিব ও লঙ্কারাজ রাবণকে।

মান্ডোর, রাজস্থান
মান্ডোরের মৌদগোল্য এবং দেব ব্রাহ্মণরা মনে করেন দশানন রাবণ তাঁদের জামাতা। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই মৌদগোল্য বংশের মেয়ে মন্দোদরীর সঙ্গে এই স্থানেই রাবণের বিয়ে হয়। মন্দোদরী রাবণের পাটরানি ছিলেন। তাঁদের বিয়ে হওয়ার জায়গাটি এখনও আছে, তবে সংরক্ষণের অভাবে তা প্রায় ধ্বংসের মুখে। এই স্থানে তাঁদের বিয়ের স্মারক হিসাবে রাজা রাবণের একটি মন্দির তৈরি করা হয়েছে। চলুন তা হলে, ঘুরে আসা যাক রাজা রাবণ এবং রানি মন্দোদরীর বিয়ের স্থানে।

মন্দসৌর, মধ্যপ্রদেশ
ইন্দৌর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান সীমানায় অবস্থিত মন্দসৌর একটি ঐতিহাসিক শহর। এই স্থানে ৩৫ ফুট উঁচু দশটি মাথা সহ রাবণরাজের একটি মূর্তি আছে। শহরের খানপুর অঞ্চলে রাবণের মন্দিরটি আছে এবং বহু রাবণভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেনন। কাছেই শাজাপুর জেলার ভাদকেড়ি গ্রাম। সেখানে রাজা রাবণের বীর পুত্র মেঘনাদের মন্দির আছে।
 
রাবণগ্রাম রাবণ মন্দির, বিদিশা, মধ্যপ্রদেশ
মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আরেকটি শহর বিদিশা। বিদিশার কাছেই রাবণগ্রামে রয়েছে রাবণ মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দারাও মনে করেন, মন্দোদরী এই অঞ্চলের রাজকুমারী ছিলেন। ভোপাল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এই জায়গায় দশেরার দিন রাবণের পুজো করা হয়। স্থানীয় কান্যকুব্জ ব্রাহ্মণরা বিয়ে ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে লঙ্কারাজ রাবণের আশীর্বাদ নিতে যান এই মন্দিরে।

কাঁকিনাড়া রাবণ মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশ
কাঁকিনাড়া শহরের বিচ রোডে এক মন্দির কমপ্লেক্সে একটি ৩০ ফুট উঁচু দশানন রাবণের মূর্তি এবং তার সঙ্গে একটি বিশাল শিবের মূর্তি আছে। অনেকে বলেন রাবণ নিজেই এই শিবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রাচীন মন্দির ছাড়াও এখানে কাকিনাড়া সমুদ্র সৈকত মন কাড়বে আপনার।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.