জানেন এই সময় রাতের আকাশে কেন জ্বালনো হয় সন্ধ্যাপ্রদীপ বা আকাশপ্রদীপ
ODD বাংলা ডেস্ক: আশ্বিন শেষ, মা দুর্গা কৈলাসে পৌছে গেছেন। ইতিমধ্যে হিমেল চাদর জড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে হাজির কার্তিক মাস। দুই তিন দশক আগেও এই মাসে বাংলার ঘরে ঘরে জ্বলে উঠত আকাশ প্রদীপ। দিনের শেষে সন্ধ্যের আবেশের সাথে সাথে আকাশ মুখী দীপ জ্বালানো ছিল জীবন যাত্রার এক নিত্য নৈমিত্তিক অঙ্গ।
কথিত আছে, এই মাসেই দীর্ঘ চার মাসের যোগনিদ্রা শেষে জেগে ওঠেন ভগবান বিষ্ণু। তাঁর চিত্ত প্রসন্ন রাখতে, ভক্ত রা কার্তিক মাসের প্রথম দিন থেকে সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত, প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় মাটির প্রদীপ ঘি বা তেল দিয়ে জ্বালিয়ে রাখে। বাড়ির সবথেকে উঁচু স্থানে উত্তর অথবা পূর্ব দিকে মুখ করে রেখে এই প্রদীপ জ্বালানো হয়। মনে করা হয়, ভক্তদের আকাশ প্রদীপ অর্পণে তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন।
প্রদীপের প্রকারভেদ
১. দ্বিমুখী: ভগবানের অখণ্ড কৃপা এবং দীর্ঘজীবন লাভের জন্য এই প্রদীপ জ্বালানো হয়।
২. ত্রিমূখী: শত্রূর কু-নজর দূর করতে।
৩. চতুর্মুখী:সন্তানের দীর্ঘজীবন কামনা করে এই প্রদীপ জ্বালানো হয়।
এছাড়াও তুলসীতলায় বা পুকুরে, নদীতে ভাসানো হয়। আকাশপ্রদীপ দেওয়ার সময় উচ্চারণ করা হয় মন্ত্র- "আকাশে সলক্ষ্মীক বিষ্ণোস্তোষার্থং দীয়মানে প্রদীপঃ শাকব তৎ।" অর্থাৎ আকাশে লক্ষ্মীর সঙ্গে অবস্থান করছেন যে বিষ্ণু, তাঁর উদ্দেশে দেওয়া হল এই প্রদীপ।
এই প্রদীপ আসলে দেহেরই প্রতীক। আকাশ-প্রদীপ ও নশ্বর শরীরের মতন ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম- এই পঞ্চভূতে তৈরি।
ক্ষিতি অর্থাৎ মাটি ,কায়া তৈরি করে। অপ অর্থাৎ জলে আকার পায়।তেজ অর্থাৎ আগুন, আত্মার মতোই স্থিত হয় তার অন্তরে। মরুৎ অর্থাৎ হাওয়া আগুনকে জ্বলতে সাহায্য করে। আর ব্যোম অর্থাৎ অনন্ত শূন্য জেগে থাকে প্রদীপের গর্ভে।
পুরাণ মতে, আশ্বিন মাসের মহালয়ার দিন পূর্বপুরুষদের তর্পণ করা হয়। তার পরের একটি মাস আনন্দ উৎসবে সামিল হয়ে ফিরে যান কালী পূজার অমাবস্যায়। এই প্রদীপ জ্বেলে আবাহন করা হয় পিতৃলোকে, প্রেতলোকে থিতু হওয়া পূর্বপুরুষদেরও। যাতে তাঁরা সেই আলোয় পথ চিনে আশীর্বাদ দিতে আসতে পারেন উত্তরসূরীদের।
কালের নিয়মে এবং শহুরে জীবন যাপনের মাঝে লুপ্তপ্রায় এই আকাশ প্রদীপ। তবে এখনও কিছু কিছু বাড়িতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মাটির প্রদীপের বদলে জ্বেলে রাখে বৈদ্যুতিক আলো।
Post a Comment