এই বনেদী বাড়ির কালী পুজোয় ইস্পাতের খড়্গ পাঠিয়েছিল বিলেতি কোম্পানি!
ODD বাংলা ডেস্ক: বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো আর আলোর উৎসব দীপাবলি। আর বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজোই নয়, কালীপুজোও কিন্তু বিখ্যাত। ঐতিহাসিক গুণে বিশেষ ভাবে চর্চিত কলকাতার বউবাজার অঞ্চলের রামনাথ কবিরাজ লেনের হালদার বাড়ির কালী পুজো। এই পুজো ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো। সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে লক্ষ্মীনারায়ণের হাত ধরে হালদার বাড়ির পুজো শুরু হয়।
লক্ষ্মীনারায়ণ হালদার ছিলেন বাদলা গ্রামের জমিদার। কলকাতায় লক্ষ্মীনারায়ণের বাবার অনেক জমিজমা থাকার সুবাদে তিনি কলকাতায় এসে ব্যাবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়ার সুবাদে ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি জিনিসপত্র আমদানি করতে পারতেন। ব্যবসা ভালো হওয়ার কারণে হালদাররা হয়ে উঠলেন কলকাতার সব থেকে বড় ব্যবসায়ীদের একজন।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সর্ব ভারতীয় ক্ষেত্রে হালদাররা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। হালদার বাড়ির কালী পুজোর জাঁক জমক আরও বাড়তে থাকে। কুমোরটুলি থেকে মৃৎশিল্পী এসে হালদার বাড়িতে কালী প্রতিমা নির্মাণ করেন। শিল্পী কাশী পাল বংশ পরম্পরায় এই কাজটি করে চলেছেন। কৃষ্ণনগর থেকে শিল্পী এসে ডাকের সাজে প্রতিমাকে সাজান। কালী পুজোর রাতে বাড়ির সমস্ত বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে মোমবাতির আলোয় সারা ঘর সাজিয়ে তোলা হয়। তিনশ বছর আগে শুরু হওয়া এই প্রথার এখনও কোন নড়চড় হয়নি। ঠাকুর দালানে লাগানো থাকে কালীর দশ রূপের ছবি।
প্রথানুযায়ী কালীপুজোতে পাঁঠা বলি দেওয়ার চল ছিল। ১৯৪২-এর দাঙ্গার পর থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। তার বদলে চাল কুমড়ো, শসা, আখ বলি দেওয়া হয়। এই বলিদান পর্বটি এখনও হয়ে থাকে মশালের আলোতে।ব্রিটিশ আমলে ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত ইস্পাত উৎপাদনকারী সংস্থা শেফিল্ডের মালিক জন ইয়েটস হালদার বাড়ির কালীপুজো দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি খুশি হয়ে তাঁর কোম্পানির ইস্পাত দিয়ে তৈরি দুটি খড়্গ জাহাজে করে পাঠিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল বেশি ওজনের, দেখতে রুপো নির্মিত খড়্গের মত। কালীপুজোর রাতে এই খড়্গ ব্যবহার করা হয়।
Post a Comment