গা ছমছমে এসব জায়গায় গেলে প্রাণ নিয়ে ফেরা দায়!

ODD বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের কয়েকটি ভুতুড়ে জায়গা, যেসব স্থানে গেলে আপনার গা ছমছম করবেই। বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত বিভিন্ন ভুতুড়ে জায়গাগুলো নিয়ে রয়েছে অনেক কল্পকাহিনী। বর্তমানে এসব ভুতুড়ে জায়গার কয়েকটি পর্যটকস্থল। বাকিগুলো প্রত্যন্ত। জেনে নিন তেমনই ১০টি ভৌতিক স্থান সম্পর্কে- 
আকারমারা শহর

১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি তৎকালীন সোভিয়েত উইনিয়নে আকারমারা শহরটি গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে জর্জিয়ার আবখাজিয়াতে এই ভুতুড়ে শহরটির অবস্থান। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পরবর্তী সময়ে জর্জিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আবখাজিয়ার বিদ্রোহীদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে সময় আকারমারা শহরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। 

এখানকার জনগণ অন্যত্র বসবাস শুরু করে। ১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে পরিত্যক্ত শহরটি পরিত্যক্ত। শহরটির জনমানবহীন ধসে পড়া বাড়িগুলো গাছের দখলে চলে গিয়েছে। প্রায় তিন দশক ধরে পরিত্যক্ত আকারমারা একটি ভুতুড়ে স্থানে পরিণত হয়েছে। 

ভুতুড়ে শহর ক্রাকো

দক্ষিণ ইতালিতে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত ভুতুড়ে শহর ক্রাকো। বিংশ শতকের শেষে একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর ক্রমশ পরিত্যক্ত হয় এলাকাটি। মধ্যযুগীয় এই শহর দক্ষিণ ইতালির পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছিল। কৃষি কাজের জন্য ক্রাকোর ভূমি মোটেও উর্বর ছিল না। ১৮৯১ সালে ক্রাকোর জনসংখ্যা ছিল মাত্র দুই হাজার। 

কৃষি পণ্য উৎপাদনে প্রতিকূল পরিবেশ ও দারিদ্রতার কারণে ১৮৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জনগণ অন্যত্র চলে যেতে থাকে। ১৯২২ সালের মধ্যে এখানকার অর্ধেক জনগণ স্থানান্তরিত হয়। অবস্থান করা বাকিরাও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দরিদ্রতা, কৃষি কাজের প্রতিকূল পরিবেশ, ভূমিকম্প, ভূমিধস, এবং যুদ্ধের কারণে ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ক্রাকো ধ্বসস্তুপে পরিণত হয়। বর্তমানে ক্রাকো একটি ভুতুড়ে স্থান হিসেবে বিবেচিত।

ওরফিয়াম থিয়েটার

টাইটানিকের সলিল সমাধির দিন খুলেছিল এই থিয়েটারটি। ১৯৫০ সালে বন্ধ হয়ে যায় থিয়েটারটি। এখন ভুতুড়ে অবস্থায় পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে। ভয়ে সেখানে ঢুকতেও কেউ সাহস পায় না।

হোটেল ডেল সাল্টো

কলম্বিয়াতে ১৯২৮ সালে হোটেল ডেল সাল্টোর পথ চলা শুরু। এটি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগাটাই থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই হোটেলটি। বিভিন্ন কারণে ডেল সাল্টো হোটেলসহ এর আশেপাশের অঞ্চলে হত্যা এবং আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেকের মতে, এই হোটেলে অশরীরী আত্মারা বাস করে। হোটেলটি অশুভ বলে কর্তৃপক্ষ ১৯৯০ সালে বন্ধ করে দেয়। 

পোভেগ্লিয়া দ্বীপ

ইতালির এই ছোট দ্বীপ প্লেগ রোগীদের কোয়ারান্টাইন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেই থেকে গুঞ্জন রটে, এই দ্বীপে অশরীরী আত্মাদের আনাগোনা আছে। অনেক ভূতের ছবির স্যুটিং হয়েছে এই দ্বীপে। পোভেগ্লিয়া ১৭ শতকের ব্ল্যাক ডেথ মহামারির সময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পোভেগ্লিয়া দ্বীপে পাঠান হত। সেখানে খোলা আকাশের নিচেই হাজার হাজার মানুষ থাকত।

সেখানেই মৃতদেহগুলোর পচন শুরু হয়। পচে যাওয়া দেহগুলোকে পরবর্তীতে পুড়িয়ে ছাই করা হতো। ধারণা করা হয়, পোভেগ্লিয়ায় সে সময় প্লেগে আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আজো দ্বীপটিতে ভূ-পৃষ্ঠের নিচে মানুষের হাড়ের স্তর পাওয়া যায় এবং ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শতকরা ৬০ শতাংশ মানুষের ছাইয়ের আস্তরণ। অনেকেই বিশ্বাস করে, সেসব মৃত মানুষের আত্মা আজো ঘুরে বেড়ায় দ্বীপটিতে।

ম্যানসেল ফোর্ট 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্য নৌ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য টেমস এবং মিরসির নদীর মোহনায় ম্যানসেল ফোর্ট নির্মাণ করে। এটি সশস্ত্র টাওয়ার ছিল। বিশ্বযুদ্ধ শেষে এর সামরিক প্রয়োজন শেষ হয়। ১৯৫০ এর দশকে ম্যানসেল ফোর্ট পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই এটি ভুতুড়ে স্থানে পরিণত হয়।

বোডি, ক্যালিফোর্নিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বোডি একটি গাঁ ছমছমে ভুতুড়ে শহর হিসেবে পরিচিত। ১৮৬০ এর দশকে একটি স্বর্ণের খনি আবিষ্কৃত হওয়ার পর এখানে জাঁকজমক শহর হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ১৮৭০ এর দশকে বোডিতে ১০ হাজার মানুষের বসবাস গড়ে ওঠে। ভোগবিলাসের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল শহরটি। 

১৮৮০ সালের শুরুতে বোডির খনির স্বর্ণ শেষ হয়ে যায়। এরপরই বিলাসবহুল বোডি শহর জন মানবহীন হয়ে পড়ে। এখনো এই পুরনো পরিত্যক্ত শহরের বসত বাড়ি জনশূন্য অবস্থায় আছে। 

আরল সি কবরস্থান

কাজাখস্তান আর উজবেকিস্তানের মধ্যে অবস্থিত আরল সি কবরস্থান। এটি আরল সমুদ্রতটের গা ঘেঁষে অবস্থান করছে। অনেকেই ভাবতে পারেন এটা মানুষের কবরস্থান কিন্তু তা নয়। এটি মূলত জাহাজের কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। 

১৯৬০ এর দশকে এই অঞ্চলের বিশাল হ্রদ শুষ্ক করার পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে তা সম্পন্ন হয়। শুষ্ক করার পূর্বে এখানে অনেক মাছ ধরার জাহাজ ছিল যা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। সে কারণেই অরাল সি’কে জাহাজের কবরস্থান বলা হয়।

ভ্যালি অব মিলস

ইতালির ভ্যালি অব মিলস একটা পরিত্যক্ত গম এবং ময়দা কলের শহর। ১৩ শতকে গড়ে উঠেছিল শহরটি। পাহাড় আর পাথরের মধ্যেই এখানে বিভিন্ন শস্য প্রক্রিয়াকরণ এবং খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল। ১৯৪০ এর দশকে শহরটি পরিবেশ গত কারণে পরিত্যক্ত হয়। অদ্ভূত দর্শন পাথরের এই স্থাপত্য দেখলে সকলেরই গা ছমছম করবে।

আনিভা বাতিঘর

১৯৩৯ সালে জাপানিরা এই বাতিঘর তৈরি করে। শাখালিন উপকূলে তৈরি এই বাতিঘর। বর্তমানে এটি রুশ সরকারের সম্পত্তি। এই বাতিঘরটি পোলার নিউক্লিয়ার বাতিঘরগুলির অন্যতম। ক্রমাগত বিদ্যুৎ সরবারহ অসম্ভব বিধায় এই স্বায়ত্তশাসিত পারমাণবিক চালিত বাতিঘর তৈরি করা হয়েছিল। পারমাণবিক চালিত হওয়ায় অনেকে মনে করেন এগুলো তেজস্ক্রিয়া। তবে এরকম ক্ষতিকর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিত্যক্ত থাকায় এটি ভুতুড়ে স্থানে পরিণত হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.