মাত্র এক ডলারের জন্য ব্যাংক ডাকাতি করে জেলে! কারণ জানলে অবাক হবেন

ODD বাংলা ডেস্ক: চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি কত ঘটনাই আমরা প্রতিদিন শুনে থাকি। কিছু কিছু ঘটনা আবার আমাদের চোখের সামনেই ঘটে। মাঝে মধ্যে এসব ঘটনা আমাদের অবাকও করে। 

ঠিক তেমনি ব্যাংক ডাকাতির বহু ঘটনা আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখে থাকি। ব্যাংক ডাকাতির একেক ঘটনা একেক রকম হয়ে থাকে। কোনটায় ডাকাতের দল বা কখনো একা কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের লাখ লাখ (কখনো আবার কোটি) টাকা লুঠ করে নিয়ে পালায়।

ডাকাতদের আটকাতে গেলে অনেক সময়ই হুমকির মুখে পড়তে হয় ব্যাংক কর্মীদের। কখনো আবার প্রাণনাশের ভয়ও দেখানো হয়। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢোকে দুষ্কৃতীরা।

তবে কখনো শুনেছেন, মাত্র এক ডলারের জন্য কেউ ডাকাতি করছেন? শুধু তাই নয়, সেই ব্যক্তি ডাকাতির পর সেই ব্যাংকে বসে পুলিশ আসার অপেক্ষা করেছেন। সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছিল।

এই ব্যক্তির নাম জেমস ভেরন। তার বাড়ি উত্তর ক্যারোলিনার গ্যাস্টোনিয়াতে। তিনি টানা ১৭ বছর একটি বেসরকারি কোল্ডড্রিঙ্কস সংস্থার ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করার পর নিজের কাজ হারান। পাশাপাশি হারান নিজের হেলথ ইন্সুরেন্সও। 

দিন দিন জেমস-এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে তিনি নিজের হেলথ ইন্সুরেন্স নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। কারণ তার কাছে ইন্সুরেন্স নবীকরণের টাকা ছিল না। এ দিকে তার বাতের ব্যথা এবং স্লিপ ডিস্ক উত্তরোত্তর বাড়ছিল। সমস্যা দেখা গিয়েছিল তার পায়েও। বুকেও ব্যথা শুরু হয়েছিল জেমসের।

এর পরই জীবনের চরমতম সিদ্ধান্ত নেন জেমস। ঠিক করেন ব্যাংক ডাকাতি করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ! ২০১১ সালের ৯ জুন নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি গাড়িতে চেপে নিকটবর্তী একটি ব্যাংকে যান ৫৯ বছর বয়সী জেমস।

তবে ডাকাতি করতে কিন্তু কোনো আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নেননি তিনি। ব্যাংকে প্রবেশ করতেই তিনি একটি চিরকুট ব্যাংক ম্যানেজারের হাতে ধরিয়ে দেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি ব্যাংক ডাকাতি করতে এসেছি। আমাকে শুধু এক ডলার দিন।’

এর পরে তিনি ওই এক ডলার নিয়ে চুপচাপ ব্যাংকের এক কোনে গিয়ে বসেন। ব্যাংকের এক কর্মীকে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই কোণে চুপচাপ বসে থাকব এবং পুলিশ আসা অবধি অপেক্ষা করব।’’

ডাকাতি করতে আসার আগে তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে একটি চিঠিও দিয়ে আসেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘আপনারা যখন এই চিঠি পাবেন, ততক্ষণে আমার ব্যাংক ডাকাতি হয়ে যাবে। তবে আমি মাত্র এক ডলারের জন্য এই ডাকাতি করতে যাচ্ছি। আমার মানসিক স্থিতি একদম ঠিক আছে। কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা ঠিক নেই।’

এর পরে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তবে জেমসকে আদালতে হাজির করানো হলে, বিচারক তার কর্মকাণ্ডকে ডাকাতি বলে মানতে রাজি হননি। অন্য ব্যক্তির কাছে থেকে এক ডলার চুরির অপরাধে তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

তবে সবার মনেই একটাই প্রশ্ন ছিল। কেন শুধুমাত্র এক ডলারের জন্য ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন শারীরিক ভাবে অসুস্থ এই ব্যক্তি? সেই সময়ে সদ্য অর্থনৈতিক মন্দার মুখ থেকে উঠে আসা আমেরিকায় এক ডলারে তার কোনো চিকিত্সা হত না। তাহলে কেন গিয়েছিলেন তিনি? পুলিশের হাতেই বা কেন নিজে থেকে ধরা দিয়েছিলেন?

তিনি নিজেই এর উত্তর দিয়েছিলেন স্থানীয় এক সাংবাদিককে। তিনি জানান, তার প্রধান লক্ষ্য ডাকাতি ছিল না। কেবলমাত্র জেল খাটার জন্যই তিনি এই কাণ্ডটি ঘটান। আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনো কয়েদি যদি অসুস্থ হন, তাহলে তার সমস্ত চিকিত্সার খরচ জেল কর্তৃপক্ষের। তাই নিজের চিকিত্সার খরচ জোগাতে তিনি নিজেই জেল খাটার সিদ্ধান্ত নেন।

নিজের উদ্দেশে সফলও হন জেমস। জেলে ঢোকার পরে তার জন্য চিকিৎসার যাবতীয় খরচ-সহ নার্স এবং ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন জেল কর্তৃপক্ষ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.