লক্ষ্মী দেবীর ভোগে থাকে ইলিশ মাছ ভাজা, খাস বাঙাল তনুশ্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর আমেজটাই আলাদা

 


ODD বাংলা ডেস্ক: দুই কালের দুই রকম পুজো দেখেছেন। লক্ষ্মী আরাধনা মানে তনুশ্রী চক্রবর্তীর কাছে তুলির টানে শ্বেতপাথরের সাদা মেঝেয় আলপনা ফুটিয়ে তোলা। ছোট থেকেই এ কাজে তিনি মনোযোগী। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই জানালেন স্বয়ং নায়িকা।


দুই কালের দুই রকম পুজো দেখেছেন। লক্ষ্মী আরাধনা মানে তনুশ্রী চক্রবর্তীর কাছে তুলির টানে শ্বেতপাথরের সাদা মেঝেয় আলপনা ফুটিয়ে তোলা। ছোট থেকেই এ কাজে তিনি মনোযোগী। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই জানালেন স্বয়ং নায়িকা। 



“আমার কাছে লক্ষ্মীপুজোর দুটো কাল। একাল, সেকাল। আমি দুই ধারার লক্ষ্মীপুজোই দেখেছি। ছোটবেলায় যৌথ পরিবারে মানুষ। ফলে, বাড়ি ভর্তি লোক। ঠাকুমা, জেঠিমা, কাকিমাদের ভিড়। তাঁরা পুজোর কয়েক দিন আগে থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। গুড়ের নাড়ু, চিনির নাড়ু, মোয়া, মুড়কিতে পাক। সারা দিনের হেঁশেল সামলে, পরিচ্ছন্ন হয়ে পুজোর কাজেও সমান পরিশ্রম তাঁদের। কিন্তু কোনও ক্লান্তি নেই! এখনও সেই রীতিই বজায় আছে। পুজোর সব উপচার তৈরি হয় বাড়িতে। মা উপোস থেকে নিজের হাতে বানান। আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো চুপ করে বসে বসে দেখি।


সেই সময় আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয় ঠাকুমার লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে। সারা বছরের সঞ্চয় দিয়ে দেবীর আরাধনা। ব্যাপারটা বেশ অন্য রকম। আর ছিল দাদুর হাতে লেখা ফর্দ। যা মিলিয়ে এখনও আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর বাজার আসে। ঠাকুমা বহু বছর আগে গত। তাঁর ধারা মা তুলে নিয়েছেন। মায়েরও ঠাকুমার মতোই লক্ষ্মীর ভান্ডার। সেখানে সারা বছর টাকা-পয়সা জমে। এখন মায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডারের সঙ্গে মিশে যাই আমরাও। মায়ের জ্যান্ত লক্ষ্মীরা। সবাই মিলেমিশে দায়িত্ব তুলে নিই। আমার বোনের একরত্তি মেয়ে প্রচণ্ড লক্ষ্মীপ্রিয়া! ঘুরে ফিরে পুজোর ঘরে ঢুকে পড়ে। গোপালকে কোলে তুলে নেয়। চুল খুলে দেয়। তার পরেই হাত বোলায় লক্ষ্মী প্রতিমার গায়ে! ওঁর প্রসাদ, নকুলদানাই ওর চাই। আমরা তো বলি বাড়িতে মা লক্ষ্মী স্বয়ং মেয়ের রূপ ধরে এসেছেন। আগামিতে ওই মনে হয় পুজোর দায় সামলাবে!



আমরা খাস বাঙাল। কোজাগরীতে তাই আমাদের দেবী মাছ খান। এটাই আমাদের বাড়ির বিশেষ রীতি। খিচুড়ি, লাবড়া, তরকারি, পাঁচ রকম ভাজা, চাটনি, পায়েসের সঙ্গে দেবীকে ইলিশ মাছ ভাজা উৎসর্গ করা হয়। এ ছাড়া, ফল, মিষ্টি আছেই। পুজোর দিনে আমি কিন্তু বেজায় পরিপাটি। আগে থেকে বেছে রাখি, কোন শাড়িটা পরব! পুজো বলে সাধারণত লাল ঘেঁষা শাড়ি পরতেই ভালোবাসি। বাড়িতেই থাকি। তাই মানানসই হালকা গয়না। ছোটবেলাতেও আমি পুজোর কাজের মধ্যে আলপনা দেওয়াটাই বেছে নিতাম। এখনও তাই। বরাবর পুজোর ঘর জুড়ে সাদা আলপনা দিই। বাড়িতে আমন্ত্রিত বলতে বোন, বোনের পরিবার, আমরা সবাই। তাতেই বাড়ি পরিপূর্ণ। 


সারা দিন মা এক মনে পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত। ঠিক সন্ধে নামলে বাবা ময়দানে নামেন। তাঁর দায়িত্ব পুরোহিত মশাইয়ের ভূমিকা পালন। দাদুর পরে বাবা-ই পুজো করার দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অনেক জায়গায় নিমন্ত্রণ থাকে আমার। কিন্তু বাড়ির পুজো ফেলে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে? এমনিতেই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে পা রাখতে ভালোবাসি না। পুজোর দিনে তো কথাই নেই। কেউ আমায় বাড়ি থেকে নড়াতেই পারে না! তেমনই আমিও নিমন্ত্রণ করি অনেককে। কিন্তু এ দিন ঘরে ঘরে দেবীর আরাধনা। ফলে, আসা হয় না তাঁদেরও।”

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.