পুজো করেন মুসলিমরাই, পাক সেনার কবলে শোচনীয় অবস্থায় বালোচ প্রদেশের হিন্দু সতীপীঠ হিংলাজ দেবীর মন্দির
পুরাণে কথিত রয়েছে, বর্তমানে বিতর্কিত এই বালুচিস্তানের লাসবেলার মাকরান উপকূলের কাছে গিরিখাতে অবস্থিত হিংলাজে সিঁথির সিঁদুর বা হিংগুল মাখা মাথা পড়েছিল। আর সেই থেকেই একে একান্ন পীঠের একটি অন্তম পীঠ হিসাবে ধরা হয় এবং হিন্দুদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র বলে মনে করা হয়। প্রসঙ্গত এই মন্দিরের নামেই গ্রমের নামকরণ হিংলাজ হলেও আদতে সংষ্কৃত শব্দ 'হিঙ্গুলা' থেকে এই হিংলাজ শব্দটি এসেছে।
তবে জানেন কী এই হিংলাজ মন্দিরে দেবীর আরাধনা করেন কিন্তু সেখানকার মুসমিলরা। বিষয়টি অবাক করা হলেও এটাই সত্যি। হিন্দু দেবীর নিত্যপুজো করে থাকেন সেখানকার বালুচিস্তানের মুসলিমরাই। তবে না, কোনও বল প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, এমনকী অন্য ধর্মের মানুষদের বাধ্য করেও নয়, চরম ভারত-বিরোধী হলেও মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে হিংলাজ দেবীর আরাধরা করে আসছেন মুসলিমরাই। ভারতের একাধিক জায়গায় দেব-দেবীর মাহাত্ম্য প্রায় কগেয়ক শতাব্দী ধরে প্রচলিত হলেও তার মধ্যে বেশকিছু জায়গা অত্যন্ত দুর্গম। তবে অনেক জায়গা দুর্গম হলেও জনবসতি রয়েছে। কারণ যাতে পর্যটকদের আগমণ ঘটে সেই কারণেই বহু এমন জায়গাই ঢেলে সাজানো হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে।
কিন্তু এই হিংলাজ মাতার মন্দির পৌরাণিক গুরুত্ব-সমৃদ্ধ হলেও এর পথ কিন্তু অত্যন্ত দুর্গম। একটা সময় ছিল যখন তীর্থযাত্রীরা হিংলাজ যেতেন উটের পিঠে চড়ে৷ করাচি শহরের কাছে হাব নদীর ধার থেকে শুরু হত সেই যাত্রা। দুর্গম সেই যাত্রাপথে সঙ্গে থাকত এক মাসের রসদ। যার মধ্যে থাকত শুকনো খাবার, মরুভূমির দস্যুদের প্রতিরোধ করার জন্য অস্ত্র, পানীয় জল ইত্যাদি৷ পাশাপাশি তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন হিংলাজ মাতার প্রসাদের শুকনো নারকেল, মিছরি, বাতাসা ইত্যাদি৷ প্রায় এক মাস ধরে চলত সেই যাত্রা। এরপর ক্লান্ত, অবশ্রান্ত হয়ে হিংলাজ মাতার মন্দিরে পৌঁছে অঘোর নদীতে স্নান করে হিংলাজ মাতার দর্শনে যেতেন তাঁরা৷ ভৌগলিক পরিবেশ দুর্গম হওয়ার পাশাপাশি, দুই দেশেরহ কূটনৈতিক সম্পর্কের চাপে পড়ে কোনও ভারতীয়ের পক্ষে হিংলাজ মাতার দর্শণ রাওয়ার জন্য ভিসা পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এখন যারা যান, তারা করাচি থেকে গাড়িতে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে চার ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে হিংলাজ মাতার মন্দিরে তা নানি কি হজে যান তীর্থযাত্রীরা।
প্রসঙ্গত বিখ্যাত ঔপন্যাসিক অবধূত-রচিত 'মরুতীর্থ হিংলাজ'-এ মায়ের মন্দির ও তার যাত্রাপথের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে। পরবর্তীকালে ১৯৫৯ সালে মু্ক্তি পেয়েছিল বাংলা ছবি মরুতীর্থ হিংলাজ৷ কিন্তু এই সতীপীঠ বর্তমানে পাক সেনাদের কবলে পড়ে চরম শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে বলা জানা গিয়েছে। আর সেই বিষয়টাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কামাখ্যার মানুষদের জানিয়েছেন স্বাধীন বালুচিস্তান আন্দোলনের সভাপতি হিরবায়ার মারি। তাঁর দাবি তাঁরা মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলেও পাক সেনার কবলে পড়ে মন্দিরের হাল বেহাল এমনকী কোনও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্যের পর প্যাট্রিয়টিক পিপলস ফ্রন্ট অসম (পিপিএফএ)-এর দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদী এই মুহূর্তে হিংলাজ দেবীর মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করুন। এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য হিংলাজ যাত্রার রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করতে হবে বলেও দাবি তাদের।
Post a Comment