প্রাণিদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও বিস্ময়কর উত্তর

ODD বাংলা ডেস্ক: কাক, পায়রা, অক্টোপাস বা ডলফিন। প্রাণিজগতে এদের বুদ্ধিমত্তা অবাক করার মতো। এসব প্রাণীদের কেউ গুনতে পারে, কেউবা পারে ভাষা শনাক্ত করতে। কেউ আবার আয়নায় নিজেদের চিনতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, নানা সমস্যার সমাধান করে প্রাণীরা। এদিক থেকে তারা বেশ স্মার্ট। প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।  

পায়রার বুদ্ধিমত্তা

পায়রার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা বলছে—এরা পড়তে পারে, এমনকি বানান ভুল পর্যন্ত ধরতে পারে। মানুষের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে একাধিক কাজ করতে সক্ষম পায়রা। আকারে মানুষের তুলনায় খুবই ছোট হলেও, পায়রার মস্তিষ্কে প্রতি ঘন মিলিমিটারে মানুষে মস্তিষ্কের ছয়গুণ বেশি স্নায়ু কোষ রয়েছে।

কাক কি বানর গোষ্ঠীর মতো চতুর?

প্রাইমেটদের মতোই বুদ্ধি কাকের। এরা গণনা করতে পারে, একাধিক জিনিস ব্যবহার করতে পারে। খাবার লুকিয়ে রাখলেও খুঁজে বের করতে পারে। এরপর নিরাপদ জায়গায় সে খাবার নিয়ে রাখে কাকের দল সবার অগোচরে। আর, ‘কাক ও কলসি’র গল্প তো সবারই জানা। কাক আয়নায় নিজেকে চিনতে পারে, যাকে আত্মসচেতনতার একটা মাত্রা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

আয়নায় মাছ কী দেখে?

মাছও নিজের প্রতিচ্ছবি চিনতে পারে। তবে, মাছ কতটা আত্মসচেতন, তা স্পষ্ট নয়। খুদে ক্লিনার র‍্যাস মাছ আয়নায় নিজের ছবির সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করে। এমনকি উলটো সাঁতার কেটে পরীক্ষা করে দেখে ব্যাপারটা আসলে কী! শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা তাদের শরীরে চিহ্ন দিলে, আয়না দেখে সেগুলো মুছেও ফেলে এ মাছ। সম্ভবত আয়না কী, তা তারা বুঝতে পারে।

সমুদ্রের তলদেশের প্রাণীদের বুদ্ধি কেমন?

বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে অনেকে মাছকে গুণতে চান না। এর সঙ্গে পানির নিচে কম উদ্দীপক পরিবেশের সম্পর্ক থাকতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে—স্থলভাগের পরিবেশ তুলনামূলক জটিল। তাই সেখানকার প্রাণীরা জটিল কৌশল ও পরিকল্পনা নিতে পারে। আর সামুদ্রিক প্রাণীরা সমস্যার সমাধানে আগে থেকে ঠিক করা কিছু উপায়ের ওপর নির্ভর করে।

অক্টোপাসের বুদ্ধিমত্তা কেমন?

অক্টোপাসকে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। ডোনাট আকারের মস্তিষ্ক এবং শুঁড়ের মতো আটটি হাতে থাকা অজস্র নিউরনের কারণে অক্টোপাস জটিল কাজ করতে পারে। তারা ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে চিনতে পারে। প্রবাল প্রাচীরের কোণে গিয়ে খাবার খুঁজে বের করতে করতেই অক্টোপাস বোধ হয় এতটা বুদ্ধিমান হয়ে গেছে।

ডলফিন কতটা স্মার্ট?

প্রাণিজগতের বুদ্ধিমানদের অন্যতম বলা হয় ডলফিনকে। কারণ, এরা খুবই সামাজিক, প্রাণবন্ত ও মিশুক। অবশ্য কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, ডলফিনের বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে একটু বাড়িয়ে বলা হয়।

শূকরের বুদ্ধিও কম নয়

বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে বিচার করলে কুকুরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে শূকর। নির্দেশ পালনে সক্ষম শূকর। নাম ধরে ডাকলে সাড়াও দেয়। জটিল বিষয়ও অনেক সময় বুঝতে পারে। জয়স্টিক চালানো শেখানো যায় তাদের। ডিভাইসের গতিবিধি এবং পর্দায় কার্সারের নড়াচড়া বুঝতে পারে।

বিড়াল না কুকুর, কে বেশি স্মার্ট?

কুকুর আর বিড়ালপ্রেমীরা মধ্যে দীর্ঘকালে তর্ক—কার পোষা প্রাণীটি বেশি স্মার্ট? কুকুর বিভিন্ন মানুষের ভাষার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, নাম দেওয়া একাধিক বস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং জটিল কাজে তার মালিককে সহায়তা করতে পারে। বিড়াল ও কুকুরের মধ্যে তুলনা করা কঠিন। কুকুর যখন খুশি মানুষের সঙ্গী হিসেবে খেলতে পারে। অন্যদিকে, বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় বিড়ালের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।

শত্রু চেনা

হাতিকে অত্যন্ত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী মনে করা হয়। কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কের হাতিরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের হুমকির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং সে অনুযায়ী সমাধান করতে পারে। এমনকি তারা তাদের শিকার করা মাসাই গোত্রের লোকজনের কণ্ঠ বুঝতে পারে। আবার তাদের দেখাশোনা করা কাম্বা গোত্রের মানুষ দেখলে শান্ত থাকে।

প্রাণীরা মন বোঝে?

জটিল পরিবেশের পাশাপাশি সামাজিকতা বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনে ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। ঘোড়া ও কুকুরের মতো প্রাণী হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের সঙ্গে রয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গী হিসেবে মানুষকে তারা বোঝে। ঘোড়া শত্রুর তুলনায় বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষের মুখ চিনতে পারে। ছাগলের মতো অন্যান্য দলবদ্ধ প্রাণীরা নিজেদের ডাক বা গলার স্বর থেকে প্রজাতির অন্য প্রাণীর মানসিক অবস্থা বুঝতে পারে।

কার মান অনুযায়ী ‘স্মার্ট’?

ঘোড়ার চেয়ে যদি ছাগলকে বেশি স্মার্ট মনে হয়, তার একটা কারণ হতে পারে—আমরা নিজেদের মতো করে প্রাণীদের বিচার করছি। প্রাইমেটোলজিস্ট ফ্রান্স ডি ওয়াল বুদ্ধিমত্তার মূল্যায়ন নিয়ে বলেছেন, ‘মানুষ সবসময় গণনার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা তৈরি করেছে। কিন্তু, অনেক প্রাণীরই বেঁচে থাকার জন্য গণনার ক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে না।’

মানুষ কি সামাজিক বুদ্ধিমত্তার শিখরে?

মানুষ ও শিম্পাঞ্জির ডিএনএর মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি মিল রয়েছে। তবে, মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীরের ওজনের অনুপাত শিম্পাঞ্জির তুলনায় তিনগুণ। আসল পার্থক্য গড়ে দেয় মানুষের একে অন্যের থেকে শেখার ক্ষমতা, জ্ঞানের পরিমার্জন করা, বিস্তৃত করা এবং ধারণা তৈরি করার ক্ষমতা। এ ছাড়া ক্রমাগত এগিয়ে চলার সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে মানুষ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.