টেসলার অপটিমাস: মানুষের মতো সাবলীল হিউম্যানয়েড তৈরির যত চ্যালেঞ্জ

 


ODD বাংলা ডেস্ক: গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি মানুষের মতো দেখতে রোবটের (হিউম্যানয়েড) প্রোটোটাইপ উন্মোচন করেছেন টেসলা'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্বের সেরা ধনী ইলন মাস্ক।


তবে মাস্ক জানিয়েছেন, অপটিমাস নামক ওই রোবট বাজারে ছাড়তে এখনও অনেক পথ যেতে হব তাদেরকে।


হিউম্যানয়েড সম্পর্কে সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো এগুলো মানুষের আশেপাশে অবস্থান করে, মানুষের তৈরি যন্ত্র দিয়ে কাজ করার জন্য উপযুক্ত। আর মানুষের চেহারার রোবটের আশেপাশে আরেকটু বেশিই নির্ভার অনুভব করবে রক্তমাংসের মানুষ।


কিন্তু এ হিউম্যানয়েড রোবটগুলো কতটা বাস্তবিক? এনিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জো ক্লাইনম্যান, যার পরিমার্জিত সারসংক্ষেপ টিবিএসের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো- 


পা বনাম চাকা


স্ল্যামকোর নামক একটি ব্রিটিশ সফটওয়্যার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ওয়েন নিকোলসন বলেন, ''চাকা-চালিত রোবট এবং এমনকি ড্রোনও পরিচালনা করা হিউম্যানয়েডের চেয়ে সহজ। একটা হিউম্যানয়েডকে খাড়া দাঁড় করাতে (মানে মানুষের মতো চলাফেরা শেখাতে) প্রচুর কাজ করতে হয়'।'


টেসলা রোবটের জগতে নবিশ নয়। নিকোলসন মনে করেন, ব্যবসায়িকভাবে বাজারে ছাড়ার সময় 'অপটিমাস' আরও বেশি ব্যবহারিক হয়ে উঠবে।



রিপোর্টিং রোবট


আমার পেশায় আমি অনেক রোবট দেখেছি; সব গঠনের, সব আকারের। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন কাজ করতে বানানো রোবটও দেখেছি যেমন, পরিষ্কার করা, বয়স্কদের সেবা করা, শেখানো, অস্ত্রোপচার করা, রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করা, ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করা, স্ক্র্যাবল ও দাবা খেলা, গান করা ও নাচা, পানীয়ের ককটেইল মিক্স করা, শপিং প্যাক করা, নিত্যদিনের বাজার ডেলিভারি করা, যৌনসঙ্গম করা, খোঁজ ও উদ্ধারে সাহায্য করা এবং গাড়ি নির্মাণ করা ইত্যাদি। রোবট তৈরি এতটাই ব্যাপক হয়েছে যে এমন কোনো কাজ নেই– যার জন্য রোবট বানানো হচ্ছে না।


কিছু কিছু রোবট অন্যান্যগুলোর চেয়ে আরও ভালোভাবে কাজ করে এবং এসব রোবটের প্রদর্শনী খুব কমই পরিকল্পনা মতো হয়।


কিন্তু সাই-ফাই চলচ্চিত্রগুলো রোবটের একটা দিক দেখায় না। সেটি হলো– রোবটের যত তার (wire), প্রি-প্রোগ্রামিং এবং ক্ষণস্থায়ী ব্যাটারি। বাস্তবে দেখেছি ফুটবল খেলা রোবটগুলোর ব্যাটারি মাত্র ১০ মিনিট স্থায়ী হয়।


কনভার্সেশনাল রোবটের সাথে আমি অত্যন্ত কষ্টের সাথে 'কথোপকথন' করেছি; এমন অনেক রোবটিক ডিভাইসকে দেখেছি, তাদের যে কাজের জন্য বানানো হয়েছে সে কাজে বিফল হতে। নির্বাহীদের চোখে মুখ আতঙ্ক দেখেছি যখন একজন ডেভেলপার বলছেন, 'আমাদের রিবুট (প্রোগ্রামিং শুরু থেকে শুরু) করতে হবে'। 


তবে গত দশকে মানুষের চেয়ে রোবটেরা বেশি দ্রুতগতিতে এগিয়েছে। ২০২২ সালের রোবট আমার প্রথম দেখা ২০০৮ সালের রোবটের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ। আর সেখানে আমি একজন মানুষ হয়েও কিছু সাদা চুল ছাড়া কিছুই অর্জন করতে পারিনি।


একাধিকবার দেখা গেছে, সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক কাজ দেখাতে পারা রোবটগুলো সাধারণত দেখতে মানুষের মতো হয় না। প্রিসিশন-সার্জারি রোবট, গুদামঘরের (ওয়্যারহাউজ) রোবট, জানালা পরিষ্কারকারী রোবট—এগুলোর কোনোটাই হিউম্যানয়েডের কাছাকাছিও নয়।

 

যদি মুখমণ্ডল মানানসই হয়!


আশা করা হয়, যে হিউম্যানয়েডগুলো মানুষের মতোই কাজ করবে; লন মোছা থেকে শুরু করে স্যান্ডউইচ বানানো, শিশুকে আদর করাসহ অনেক ধরনের কাজ করতে পারবে। এ আশা করাও সম্ভবত সমস্যাটার অংশ।


স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ-এর ন্যাশনাল রোবটারিয়াম-এর অধ্যাপক হেলেন হেস্টি জানান, এ ধরনের রোবটগুলোর একসাথে একাধিক কাজ (মাল্টিটাস্ক) করার সক্ষমতা অর্জন করতে হলে এখনও অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে।


হেলেন বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যে কাজের জন্য বানানো হচ্ছে রোবটটি সে কাজের জন্য উপযুক্ত কি না'।


যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের রোবট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বোস্টন ডাইনামিক্স কুকুরের মতো দেখতে একটি চতুষ্পদী রোবট বানিয়েছে– যেটি রুক্ষ ভূখণ্ড যেমন বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনে কাজ করার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু রান্নাঘরে কাজ করার জন্য তৈরি রোবটের পা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।


আবার, দুর্বল ব্যক্তিদের সাথে কাজের ক্ষেত্রে রোবটগুলোকে কিছুটা মানুষের আদলে (তবে খুব বেশি নয়) তৈরি করাটা ভালো হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেয়ার হোমের ব্যক্তিদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে।


'আনক্যানি ভ্যালি' নামে একটি ব্যাপার আছে। কোনো বস্তু যখন কিছুটা মানুষের মতো হয় কিন্তু মানুষ বলেও বিশ্বাসযোগ্য হয় না– তখন এটা আরও অস্বস্তিকর এবং ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।


ঠিক অধ্যাপক হেলেন যেমনটা বলেন, 'খুব বেশি মানুষের মতো হয়ে গেলে রোবটেরা মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে'। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.