দুইটি করে প্রতি রাতে শো হয়, প্রমোদতরীর অন্দরমহলের কাহিনী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: তাদের পেট চলে জাহাজে যাত্রীদের মনোরঞ্জন করেই। জলেই ঘুরে বেড়ান এবং গান শোনান যাত্রীদের। কেউ কেউ আবার নাচও করেন। গভীর সমুদ্রের মাঝে জাহাজের এই সব বিনোদনকর্মীদের জীবন কেমন? তাতে কী আদৌ রয়েছে বিলাসিতার ছোঁয়া? কেমন করেই বা সাজানো বিলাসিতায় মোড়া জাহাজ? 

র‌্যাচেল হাডসন তেমনই এক বিনোদন শিল্পী। যাত্রীবাহী জাহাজে গান শোনান তিনি। জলেই কেটে যায় জীবনের অধিকাংশ সময়। ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার শহরের বাসিন্দা র‌্যাচেলের জীবন যেন কাব্যের মতো। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে জল-জীবনের খুঁটিনাটি ভাগ করে নিয়েছেন র‌্যাচেল। র‌্যাচেল জানান,জাহাজে তার দিন শুরু হয় এক কাপ চা দিয়ে। বাড়ি থেকে দীর্ঘ দিন দূরে থাকলে বাড়ির মতো পরিবেশ তৈরি করে নেয়া খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তাই সকাল সকাল চা না হলে চলে না।


জাহাজে যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য র‌্যাচেলকে সপ্তাহে চার দিন কাজ করতে হয়। দিন না বলে অবশ্য রাতই বলা চলে। কারণ রাতেই শুরু হয় র‌্যাচেল এবং তার সহকর্মীদের শো। সকাল সকাল চা খেয়ে সপ্তাহের এই চারটি রাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন র‌্যাচেল। তার কথায়,‘শো-এর দিনগুলো সবচেয়ে ব্যস্ত থাকি। প্রথমেই যাবতীয় যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। কোথাও যাতে কোনোরকম প্রযুক্তিগত ত্রুটি না থাকে তা নিশ্চিত করতে হয় সবার।’


কাজেই দিনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেন র‌্যাচেল। তবে কাজের ফাঁকে ফাঁকে জল-জীবনের রোমাঞ্চও তিনি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। চলার পথে যে সব জায়গায় জাহাজ থামে, সেখানকার পরিবেশও ঘুরে দেখেন তিনি ও তার সহকর্মীরা। জাহাজের মধ্যেই এক জায়গায় রয়েছে নানা রকম ফুলের বাগান। গাছগাছালির মাঝে অবসর যাপন করেন র‌্যাচেল। এ ছাড়া, নানা রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে রয়েছে যাত্রী এবং জাহাজকর্মীদের বিনোদনের জন্য।


র‌্যাচেল বলেছেন,‘এই সব রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেতে দিব্যি সময় কেটে যায়। মনেই হয় না সমুদ্রের মধ্যে আছি। তবে শো যে দিন থাকে না, সে সব দিনেই রেস্তোরাঁয় যাওয়ার সুযোগ হয়।’ ঘড়ির কাঁটায় ৫টা বাজলেই রাতের শো-এর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। স্নান করা, নির্দিষ্ট পোশাক পরা, উপযুক্ত মেক আপে সেজে ওঠা, সবই করতে হয় যন্ত্রের মতো। প্রতি রাতে দুইটি করে শো করেন র‌্যাচেল। শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন তার মোহময়ী ভঙ্গিতে। 


প্রথম শো শুরু হয় রাত সাড়ে ৮টায়। পরের শো রাত সাড়ে ১০টায়। শো শেষ হলে জাহাজের বারে চলে যান র‌্যাচেল। ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে তাস খেলেন। জল ও জীবনের সেরা মুহূর্ত কী? র‌্যাচেল বলেন, ‘সমুদ্রের নীল জলরাশির মাঝে ঘুম ভাঙা, প্রথম চোখ মেলার যে অনুভূতি, তার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।’ জাহাজটাকেই ‘ঘর’ বানিয়ে ফেলেছেন র‌্যাচেল। তবে মাঝেমাঝে আসল ঘরের কথাও মনে পড়ে তার। 


নিজেই জানিয়েছেন, বাবা-মা, পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের কথা ভেবে মনখারাপ লাগে। বাড়িতে থাকলে রান্নাবান্না করতে ভালোবাসেন র‌্যাচেল। গাড়ি চালানোর শখও রয়েছে। জাহাজে সে সব করা হয় না। বাড়ি গেলে তাই এই কাজগুলোই চুটিয়ে উপভোগ করেন তিনি। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া, পার্ক, ফুলের বাগান, সবই রয়েছে জাহাজের মধ্যেই। সেই জাহাজে প্রতিদিন যাত্রীদের মনোরঞ্জন করেন র‌্যাচেল আর তার সঙ্গীরা। নোনা জলের সমুদ্রে সে এক অন্য জীবন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.