প্রথম নিয়ানডারথাল পরিবারের সন্ধান মিললো রাশিয়ার গুহায়



 ODD বাংলা ডেস্ক: রাশিয়ায় একটু গুহায় মিলেছে আধুনিক মানুষের পূর্বসূরি নিয়ানডারথালের জীবাশ্ম। ওই ফসিল পরীক্ষা করে এই প্রথম একটি নিয়ানডারথাল পরিবারকে শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবারটিতে একজন পুরুষ, তার কিশোরী কন্যা এবং মেয়েটির নিকট সম্পর্কের কাজিনদের শনাক্ত করা গেছে।   


চাঞ্চল্যকর এ আবিষ্কার সম্পর্কিত গবেষণার তথ্য গত বুধবার প্রকাশিত হয়েছে নেচার জার্নালে। এতে উঠে এসেছে, এককালে ইউরেশিয়াজুড়ে বিচরণকারী আমাদের বিলুপ্ত এই জ্ঞাতিগোষ্ঠীর এক করুণ ট্র্যাজেডি।


রাশিয়ার দুর্গম সাইবেরিয়ার চাগিরস্কায়া গুহায় আবিষ্কার হয়েছে এসব জীবাশ্ম। 


বিজ্ঞানীরা জানান, গুহাটিতে মোট ১১ জন নিয়ানডারথালের ফসিল পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত অনাহারে তাদের সবার মৃত্যু হয়।


২৫ বছর ধরে নিয়ানডারথালদের জীবনযাপনের রহস্য উন্মোচনে যুক্ত আছেন সুইডেনের জিন-বিশারদ এসভান্তে পাবো। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে তার নেতৃত্বেই জড়িত ছিলেন একদল বিজ্ঞানী। তারা গুহার মেঝের মাটি বিশ্লেষণ করে উদ্ধার করেন ডিএনএ। যা দিয়ে তারা বহু শতাব্দী আগে মৃত এই নিয়ানডারথালদের মগজের কোষের অনুকরণ তৈরি করতে পেরেছেন।


চমকপ্রদ এই সাফল্য পাবোর গবেষণা দলের পক্ষেই সম্ভব। কারণ চলতি বছরে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি মেডিসিন বা ফিজিওলজিতে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে।


আজকের মানব প্রজাতির বিলুপ্ত পূর্বসূরি ছিল নিয়ানডারথাল। সেই নিয়ানডারথালের জিনোম পরীক্ষা করেছেন পাবো। বর্তমান মানব প্রজাতির আর এক পূর্বসূরি হোমিনিন নিয়েও গবেষণা করেছেন এই সুইডিশ বিজ্ঞানী। গবেষণায় তিনি জানতে পেরেছেন, ওই বিলুপ্ত প্রজাতি থেকে জিন ট্রান্সফার হয়েছে বর্তমান মানব প্রজাতির শরীরে।


নোবেল প্রাপ্তির পরই তিনি এবার আরেক চমক দেখালেন। তাও আবার পুরষ্কার পাওয়ার বছরেই। 


এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'হাড়ের টুকরো বা গুহার মাটিতে পাওয়া ডিএনএ বিশ্লেষণ করে একজন নিয়ানডারথাল বাবা ও তার কন্যাকে শনাক্ত করতে পারব– তা কখনো ভাবিনি। এসব প্রচেষ্টা আসলে আমাদের রুটিন পরীক্ষানিরীক্ষারই অংশ। সত্যিই আমাদের এবারের যাত্রাটি হয়েছে অসাধারণ '। 


বর্তমানে জার্মানির লাইপজিগে অবস্থিত ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভ্যুলুশেনারী অ্যানথ্রোপলজি'র একজন পরিচালক হিসেবে কর্মরত পাবো।  


১৮৫৬ সালে জার্মানির একটি খনিতে মিলেছিল প্রাচীন মানবের একটি খুলি। পরবর্তীকালে মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ওই খুলিটি ড্রিল করে সেখান থেকে হারের নমুনা সংগ্রহ করেন পাবো ও তার সহকর্মীরা। এরপর বিভিন্ন মিউজিয়াম আদিম দেহাবশেষগুলি যোগাড় করতে শুরু করে গবেষক দলটি। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে উন্মোচিত হয়, নিয়ানডারথালদের বিবর্তন প্রক্রিয়া ও আজকের মানুষের সাথে তাদের সম্পর্কের যোগসূত্র। 


১৯৯৭ সালে নিয়ানডারথালদের ডিএনএ নিয়ে করা পাবোর প্রথম গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। আর তাতে বেশ সাড়া পড়ে যায় বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে। কারণ পাবো ও তার সহকর্মীরা নিয়ানডারথালের সম্পূর্ণ জেনোম কাঠামো তৈরি করতে সফল হয়েছিলেন।


পাবোর ঝুলিতে এমন অর্জন কম নয়। ফিরে আসা যাক তার নতুনতম আবিষ্কারের কাহিনিতে।


২০০৭ সালে গুহাটিতে খননকাজ শুরু করেন রাশিয়ান একাডেমি অভ সায়েন্সের জীবাশ্মবিদেরা। এসময় তারা খুঁজে পান নিয়ানডারথালের হাড় ও দাঁত। চাগিরস্কায়া গুহায় আরও মিলেছে আদিম এ মানুষের তৈরি ৯০ হাজার প্রস্তুর উপকরণ। মিলেছে শিকার করা বাইসনের হাড়ও। 


বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, খুব সম্ভবত গুহাটিকে মওসুমি আবাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কারণ,  সেসময় সুবিস্তীর্ণ এক তৃণভূমি ছিল চাগিরস্কায়ার কাছাকাছি। গ্রীষ্মে নতুন ঘাসের লোভে সেখানে দলে দলে আসতো বাইসনের দল। আর তখন গুহাটিতে থেকে তাদের শিকার করে আনতো এই প্রাচীন মানবেরা।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.